নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও আচরণবিধি মানছে না সরকারি দল আওয়ামী লীগ। রাজধানীজুড়ে এখন নৌকায় ভোট চেয়ে বিলবোর্ডের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে সরকারের পক্ষে প্রচারণার ব্যানার ও পোস্টার।
সোমবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার সারা দিন চলে গেলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে প্রচারণার এসব অবৈধ উপকরণ সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত রাতে নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলা প্রশাসক) ও পুলিশ সুপারদের চিঠি দিয়েছে।
দুপুরে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব প্রচার-উপকরণ অপসারণ করতে হবে, নইলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
সরেজমিন দেখা যায়, নানা রং ও আয়তনের ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ড আগের দিনের মতো গতকালও শোভা পাচ্ছিল। কোথাও কোথাও বিজ্ঞাপনী সংস্থার ভাড়া করা বিলবোর্ড দখল করেও এসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এসব প্রচারণা মূলত সরকারি দলের পক্ষেই। অল্প কিছু পোস্টার দেখা গেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে।
এগুলো অবশ্য ভোট প্রার্থনা করে নয়।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে ভোট প্রার্থনা তফসিল ঘোষণার পরই বন্ধ করা নির্বাচন কমিশনের আইনগত দায়িত্ব। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে এগুলো পরিষ্কার করা হয়েছিল।
সরকারের কৌশলী প্রচারণা: ‘নৌকায় ভোট দেওয়া মানে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা...’ শিরোনামে মতিঝিলের আল হেলাল পুলিশ বক্সের ওপর বিশাল বিলবোর্ড চোখে পড়ে। নৌকা প্রতীক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি-সংবলিত এই বিলবোর্ডে মহাজোট আমলে পাট ও বস্ত্র খাতের নানা কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরা হয়।
কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না থাকলেও এটি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়েরই প্রচারণা বলে জানা গেছে।
বিজয় সরণির পশ্চিম প্রান্তের বিমান প্রতীকের পাশে কাঠের তৈরি বিশাল নৌকার ওপর ব্যানার টানিয়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই ব্যানারের শিরোনামও ‘নৌকায় ভোট মানে এগিয়ে চলা’। এটিও পাট মন্ত্রণালয়ের নামে টানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে এই মন্ত্রণালয়ের সচিব ফণী ভূষণ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকায় ভোট প্রার্থনা-সংক্রান্ত বিলবোর্ডের কথা আমি জানি না।
এটা হওয়ার কথাও নয়। ’
এ ছাড়া মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দিয়ে ব্যানার-বিলবোর্ড রাজধানীর প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শোভা পাচ্ছে। এসব বিলবোর্ড-ব্যানারে সরাসরি নৌকায় ভোট না চাইলেও সবগুলোতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হলে সরকারের সাফল্য প্রচারের বিলবোর্ডগুলোও থাকার কথা নয়।
একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, কারওয়ান বাজার, মতিঝিল ও গুলশানে তাঁদের তিনটি বিলবোর্ড তিনটি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল।
এগুলো এখন দখল করে স্থানীয় সরকার ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তুলে ধরে বিজ্ঞাপন টানানো হয়েছে।
ওই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব বিলবোর্ড এক বছরের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে অগ্রিম ভাড়া ও সরকারকে ভ্যাট দিয়ে অনুমোদন নেওয়া হয়। পরে তিনটি ব্যাংকের কাছে প্রায় সাত লাখ টাকা করে ভাড়াও দেওয়া হয়। এখন দখল হয়ে যাওয়ায় ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
ভোট প্রার্থনা: ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, সাতমসজিদ সড়ক, আসাদগেট, মিরপুরের শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও থেকে পল্লবী, মতিঝিল, গুলশান, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নৌকা ও সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা দেখা গেছে।
বিজয় সরণির পূর্ব প্রান্তে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের বড় বড় কয়েকটি বোর্ডের পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউছারের পক্ষে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করে বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। জানতে চাইলে মোল্লা কাউছার বলেন, এখন আর লাগানো হবে না। আগেরগুলো সিটি করপোরেশন হয়তো সরিয়ে দেবে।
জিরো পয়েন্টের (নূর হোসেন স্কয়ার) পিলারগুলো ঢেকে দিয়ে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানার ও বোর্ডগুলো গতকাল সরানো হয়নি।
নির্বাচনী আচরণবিধির ১২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করিতে পারিবেন না।
’
তফসিল অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ। সেই হিসাবে তার ২১ দিন আগে অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বরের আগে প্রচারণা চালানো যাবে না। কিন্তু সরকারি দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বেশ আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি দল নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কি না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর প্রচারণামূলক বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগানো যাবে না। আগে যেগুলো লাগানো হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।