আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মঘটে ‘অচল’ শাহজালাল

সাত দফা দাবিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মচারীদের লাগাতার ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের ইলেকট্রনিক বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল থেকে কুয়েত ও সিঙ্গাপুরের পথে বিমানের দুটি ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো বিলম্বিত হয়েছে। সকালের নির্ধারিত চারটি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করলেও যাত্রীদের লাগেজ নামানো, উড়োজাহাজ থেকে টার্মিনালে আনাসহ অন্যান্য সেবা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ায় টার্মিনালের ভেতরেই বিক্ষোভ শুরু করেছেন বহির্গামী যাত্রীরা। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় বেলা ১১টার দিকে দাঙ্গা পুলিশ ঢুকেছে টার্মিনাল ভবনের ভেতরে।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, বিমানমন্ত্রী ফারুক খান ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক সকালেই বিমানবন্দরে আসেন। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সভাপতির বিরুদ্ধে বিমান কর্তৃপক্ষের আনা অভিযোগ প্রত্যাহার, আহার ভাতা ও ইউনিফর্ম, ভারত থেকে আনা বিমানের সেটআপ বাস্তবায়ন, কর্মচারীদের ব্যক্তিগত টিপি বাস্তবায়ন, একশ ভাগ চিকিৎসা ভাতা দেয়া এবং ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা কর্মচারীদের স্থায়ী করার দাবিতে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বিমান শ্রমিক লীগের ডাকে কর্মচারীদের এই ধর্মঘট শুরু হয়। বিমানের বিভিন্ন শাখার শ্রমিক কর্মচারীরা এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারা বলাকা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

কর্মচারীরা বিমানের ট্রান্সপোর্ট সুবিধা বন্ধ করে দেয়ায় সকালে কেবিন ক্রু বা কর্মকর্তারা বিমানবন্দর বা বলাকা কার্যালয়ে পৌঁছাতে পারেননি। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংসহ যাত্রীসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উড়তে পারছে না কোনো ফ্লাইট। সকালে বিমানবন্দরের বহির্গমণ টার্মিনালের বাইরে বহু লোক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা জানান, তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না, কর্মকর্তারাও কিছু বলছেন না। বিমান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

বিমানের অডিট সুপারভাইজার ও বিমান জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি ফিরোজ উজ জামান সাংবাদিকদের বলেন, “সকাল থেকে কোনো ফ্লাইট না ছাড়ায় অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। এ কারণে নতুন করে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ” তিনি জানান, সকাল থেকে চারটি ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর সিভলে এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নামালেও তাদের ব্যাগেজ এখনো বিমানেই রয়েছে। এ কারণে যাত্রীরা বিমানবন্দর ছাড়তে পারছেন না।

শ্রমিক লীগের এই ধর্মঘটে শ্রমিক দলও আছে কি না জানতে চাইলে ফিরোজ উজ জামান বলেন, “শ্রমিক লীগ একক সিদ্ধান্তে এই কর্মসূচি ডেকেছে। তবে তারা যে দাবিগুলো দিয়েছে সেগুলো সব শ্রমিকেরই দাবি। সুতরাং এতে ‘না’ বলার সুযোগ নেই। ” একটি সংগঠনের ধর্মঘটে পুরো বিমানবন্দর অচল হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিংয়ের দায়িত্বে আছে বিমানের ক্রুরা। তারা কাজ না করলে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনো ফ্লাইটই ছেড়ে যাবে না।

অন্যান্য সেবাও বন্ধ থাকবে। এর প্রভাব পুরো কার্যক্রমেই পড়বে। ” সাত দফা দাবিতে সোমবার বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকার সামনে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শ্রমিক কর্মচারী লীগ। তারপরও দাবি পূরণের আশ্বাস না পাওয়ায় বিকাল ৫টায় সংগঠনের সভাপতি মশিকুর রহমান লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। মশিকুর রহমান বলেন, “আমরা আন্দোলনে যেতে চাইনি।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সম্ভাব্য সব জায়গায় আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। বিমানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্বেও আমাদের দাবি মানা হয়নি। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ” দাবি পূরণের জন্য শ্রমিক লীগের কর্মীরা রোববার বলাকায় বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদকে প্রায় ১১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে রাত ২টার দিকে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত হন এমডি মোসাদ্দেক।

মশিকুর রহমান বলেন, দাবিগুলো নিয়ে তারা রোববার এমডির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু এক পর্যায়ে মোসাদ্দেক আহমেদ জানিয়ে দেন, এসব দাবি মানতে তিনি অপারগ। এরপর সোমবার সকাল থেকে বলাকা ভবনে শুরু হয় কর্মচারীদের অবস্থান ধর্মঘট। তখনই বলা হয়, বিকাল ৫টার মধ্যে দাবি পূরণের ঘোষণা না পেলে মঙ্গলবার থেকে লাগাতার কর্মসূচিতে যাবেন তারা। গত বছর মার্চে বিমান কর্মীদের একটি সংগঠন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

মানববন্ধন, সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচির পর এক পর্যায়ে তারা সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেয়। পরে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। এখানে দেখুন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.