আমরা যারা শাবিপ্রবি থেকে পড়াশুনা করেছি, তাদের সবার কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্পর্শকাতর অঙ্গন। শাবিপ্রবির পরিবেশটা আমাদের কাছে আবেগঘন; এখানকার স্মৃতিময় মুহুর্তগুলো আমাদের সবার কাছেই স্বর্ণালী দুপুরের মত প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল। শাবিপ্রবিতে ঘটে যাওয়া যেকোন সুখকর কিংবা দুঃখজনক ঘটনা আমাদের আবেগকে নাড়া দিয়ে যাবে এটা খুবই প্রাকৃতিক সবাব।
প্রিয় ক্যাম্পাসকে নিয়ে গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া মাতম দেখে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন হয়েছি। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক।
সিলেটের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর দাবী আমাদের কাছে যৌক্তিক বলে মনে হয় নি। তাই তাদের সেই দাবীর সাথে আমাদের কোন প্রকার সহমত পোষণ কিংবা সক্রিয়তা কোনটাই ছিল না। প্রভাবশালীদের দাবীকে অযৌক্তিক মনে করে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন ড. জাফর ইকবাল স্যার এবং ড. ইয়াস্মিন হক ম্যাডাম। তাদের দুজনের প্রতিবাদের সাথে সংহতি প্রকাশে বিক্ষোবে ফেটে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা। আমিও প্রতিবাদীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি এবং সবাইকে সাধুবাদ জানাই।
জন্মসূত্রে আমি সিলেট জেলার অধিবাসী এবং একজন গর্বিত সিলেটী।
কিন্ত অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমি খেয়াল করে দেখলাম, আমাদের শাবিপ্রবির প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কতিপয় বেয়াদব বোদ্ধা আছেন; যারা হয়তো নিজেদেরকে সাধারণ মানুষ থেকে কিছুটা উচ্চমার্গীয় বলে মনে করেন। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে, বেয়াদবি বক্তব্য দিয়ে, অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে নিজেদেরকে উচ্চমার্গীয় প্রমান করার চেষ্টা করেন।
সিলেটের কয়েকজন প্রভামশালী ব্যাক্তি একটি স্মারকলিপিতে কিছু অযৌক্তিক দাবী দিয়েছেন। তাই বলে এইসব বেয়াদব বোদ্ধারা সিলেটের আপামর জনগোষ্ঠীকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মনগড়া সব মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন; ভুল তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছেন।
আমাদের বাপ-দাদা তুলে গালি দিয়ে আমাদেরকে বিচলিত করার অপচেষ্টা করছেন; আঘাত করছেন সিলেটবাসীদের সহজ সরল অনুভূতিতে।
এসব বেয়াদব বোদ্ধাদের অনেককেই আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। কেউবা আমার সিনিয়র ছিলেন, কেউবা ব্যাচমেট, কেউবা বন্ধু ছিলেন, কেউবা ঘনিষ্ঠ জুনিয়র।
আমি শুধু এইসব তথাকথিত বোদ্ধাদেরকে কিছু কথা স্মরন করিয়ে দিতে চাইঃ
(১) হযরত শাহজালাল (রঃ)-র স্মৃতি বিজড়িত পুন্যভূমি সিলেটের অধিবাসীদের দূরদর্শীতা এবং শিক্ষানুরাগ থেকেই শাবিপ্রবির জন্ম হয়েছে। আর সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আপনি সনদপ্রাপ্ত হয়েছেন, ডিগ্রি নিয়েছেন।
সিলেট অঞ্চলের মানুষজনকে মূর্খ্য অধ্যুষিত জনগণ বলে অপপ্রচারে ব্যস্ত হওয়ার আগে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
(২) যেই জাফর ইকবাল স্যার এর প্রতিবাদে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন এবং আপনি সেই প্রতিবাদী কান্ডারীদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে ভিভ্রান্ত করার সু্যোগ নিচ্ছেন, ভুল পথে উস্কানি দিচ্ছেন; সেই জাফর ইকবাল স্যারের শৈশব কেটেছে সিলেটে। আপনার ভুয়া অনুভূতির দুষ্ট বহিপ্রকাশ দেখে আমরা সত্যিই বিচলিত।
(৩) ভেবে দেখুনতো; আপনার বাব-মা আপনাকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পাঠিয়েছিলেন, তখন তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা কি ছিল? তাদের স্বপ্ন নিশ্চয়ই তাদের সন্তানের সনদ প্রাপ্ত হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁদের মহৎ শভাকাংখাগুলোর মধ্যে দুটো বিষয় অবশ্যই ছিল।
(ক) আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন এবং (খ) আপনি একজন সভ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবেন, প্রতিষ্ঠিত হবেন। আপনি কি পেরেছেন নিজের বাবা-মায়ের আশা-আকাংখার সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে?
আজকে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে আপনি শুধু সনদপ্রাপ্তই হয়েছেন। শিক্ষিত কিংবা সভ্য কোনটাই আপনি হতে পারেন নি। আপনার দৃষ্টিকটু অশোভন আচরনই তার প্রমান। আর আপনার অশোভন আচরনগুলো হচ্ছেঃ
- তরুণসমাজ এবং দেশবাশীকে অন্যায় পথে উস্কানি দেয়া।
- অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা।
- ভুল এবং ভিত্তিহীন তথ্য অপপ্রচার করে সবাইকে বিভ্রান্ত করা।
- একটি জনগোষ্ঠীর সহজ-সরল অনুভূতিতে আঘাত করে তাদেরকে বিচলিত করা।
আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়েছেন। তাহলে কেন আপনি শিক্ষিত, সভ্য এবং বিনম্র আচরন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন?
এটাকি আপনার খেয়ালের ভূল?
নাকি যারা তাদের নিজস্ব শিক্ষানুরাগে অনুপ্রানিত হয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে আপনাকে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছেন; সেই জনগোষ্ঠীর আজন্ম পাপ?
কেন এই অকৃতজ্ঞ আচরন?
কেন এই অবমাননা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।