আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করা প্রয়োজন।

বাক স্বাধীনতা মানে সত্য বলার অধিকার।

প্রতারণার শিকার ব্যাংকের হাজার হাজার তরুণ কর্মকর্তা। রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ২০০৮ সালের পর থেকে বিপুল সংখ্যক তরুণ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ব্যাংকের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখাগুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকার সেবামূলক কাজে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, অতিদরিদ্র ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি বিভিন্ন সেবামূলক কাজগুলো রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই দেয়া হয়।

আর এই সেবাগুলো দিতে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন ব্যাংকের তরুণ কর্মকর্তাগণ। এর পাশাপাশি ব্যাংকের বাণিজ্যিক কার্যক্রমতো আছেই। এছাড়াও রয়েছে কৃষকের নামে দশ টাকার হিসাব খোলা ও তা পরিচালনা করা। কৃষি লোন সংক্রান্ত কার্যকলাপও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে পরিচালনা করা হয়। বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক গুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাথে সাথে প্রদান করা হয়- যার সম্পূর্ণ দায়িত্বটুকুই তরুণ এইসব কর্মকর্তার উপরে ন্যাস্ত।

এই তরুণ কর্মকর্তাদের সহায়তার মাধ্যমেই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো লোকসানী ব্যাংক থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। এইসব তরুণ কর্মকর্তারাই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংককে প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিকায়ন করাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এই তরুণ কর্মকর্তাদের অবদানেই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখাগুলো দ্রূত গতিতে অনলাইন শাখায় রূপান্তির হচ্ছে। সকাল ১০ টা থেকে শুরু করা সন্ধ্যা ৬ টার পরেও প্রতিদিন ১-২ ঘন্টা এদের কাজ করতে হয়। যদিও এর বিনিময়ে তারা বেতন পাচ্ছেন।

কিন্তু তাদেরকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে অনেক অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে যা অনেকেরই অজানা। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক অর্থাৎ সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক যখন লোকসানের ভারে ডুবতে বসেছিল তখন এই ব্যাংকগুলোকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীতে রূপান্তরিত করা হয় ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে। শতভাগ রাষ্ট্রমালিকাধীন এই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী তথা ব্যাংককে সংকটময় অবস্থান থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে নিয়োগ দেয়া হয় প্রচুর সংখ্যক তরণ কর্মকর্তাকে। আর সেই সাথে ব্যাংকের অভ্যন্তরে আনা হয় অনেক পরিবর্তন। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী হবার পরে যে সকল কর্মকর্তারা ব্যাংকে নিয়োগ পান তাদেরকে পেনশন সুবিধার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।

অর্থাৎ তারা রিটায়ার করার পরে অন্যান্য সরকারি চাকুরিজিবীদের মত পেনশন সুবিধা পাবেন না। ফলে, তাদের ভবিষ্যত জীবনের অবলম্বনের রাস্তা রুদ্ধ করে ফেলা হয়। বিনিময়ে তাদের জন্য প্রচলন করা হয় গ্রাচুইটি নামক ব্যবস্থা যা অন্যান্য বেসরকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত। এতে করে দেখা যায় রিটায়ার করার পুরে একজন কর্মকর্তা যে আর্থিক সুবিধা পাবেন তা একজন সরকারী কর্মকর্তার তুলোনায় অনেক গুণ কম। শর্ত ছিল, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীতে রূপান্তরিত হবার পরে এই সকল কর্মকর্তাদের সুবিধার্থে ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করা হবে।

ফলে তরুণ ব্যাংকারগণ আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। একজন বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা যেখানে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মাসে ৫০০০০ টাকা বেতন পান-প্রতি মাসে ভবিষ্য তহবিলে জমা রাখেন কমপক্ষে ৫০০০ টাকা- সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ব একজন কর্মকর্তা বেতন পান মাত্র ১২০০০ টাকা- আর ভবিষ্য তহবিলে জমা রাখেন মোটে ৮০০ টাকা। অথচ তারা শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অন্যান্য দিক দিয়ে কোনভাবেই একজন বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তার চেয়ে কোন অংশে কম নন। বর্তমান সরকার ২০১০ সালে প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। কিন্তু বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেটা আটকে আছে এখন পর্যন্ত।

সর্বশেষে অর্থমন্ত্রী নিজে একটা বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা তৈরি করে সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠান। সৌভাগ্যক্রমে সচিব কমিটি সেই বেতন কাঠামোতে কিছুটা পরিবর্তন করে অনুমোদন করে। এরপর সেটা অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীয় সেই বেতন কাঠামো অনুমোদন করে বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সচিবালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা হিংসার বশবর্তী হয়ে আইনের দোহাই দিয়ে এই বেতন কাঠামো আবার আটকে দিয়েছে।

তাদের যুক্তি হল, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বেতন না বাড়িয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বেতন বাড়ানো যাবে না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী পেনশন সহ সকল প্রকার আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর এভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের তরুণ কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে ২০০৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধাদীর ধরন বেসকরারী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মত হলেও তাদেরকে বেতন পেতে হয় সরকারী স্কেলে যা তাদের ভবিষ্যতকে তিলে তিলে অন্ধকারের মাঝে ঠেলে দিচ্ছে। আর এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের তরুণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন যা এই চার ব্যাংকের ভবিষ্যতের জন্য কখনও সুফল বয়ে আনবে না।

উপরন্তু, রাষ্ট্রায়ত্ব চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রবিধানমালাতেও স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ব্যাংকগুলোতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করা হবে। অথচ, দীর্ঘ ছয় বছরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে ছয় বছর ধরে এই সকল ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছেন। তাই রাষ্টায়ত্ব ব্যাংকে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করে এখন সময়ের দাবি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.