আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দায়িত্ব ছাড়ার মুহূর্তে ৮৩ জনকে বদলি

দায়িত্ব ছাড়ার মুহূর্তে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৮৩ জন কর্মকর্তাকে বদলি করে গেছেন মহাজোট সরকারের বিতর্কিত মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। নিজের এলাকা সিরাজগঞ্জেও তাঁর পছন্দমতো কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছাড়ার শেষ সময়ের এই বদলিকে কর্মকর্তারা ‘শেষ বদলি-বাণিজ্য’ বলে অভিহিত করছেন। মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলোর ধারণা, শেষ মুহূর্তের এসব বদলির ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন হয়েছে। কিছু বদলি হয়েছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদদের তদবিরে।



লতিফ বিশ্বাস শেষ অফিস করেন ১৮ নভেম্বর। ওই দিন এবং এর আগে ১৩ নভেম্বর ৮৩ জনের বদলির আদেশ দেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বদলি-বাণিজ্যের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। ২ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও বদলির সব আদেশ জারি করা হয় ১৮ নভেম্বর।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেলীনা আফরোজা প্রথম আলোর কাছে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অনেক দিন বদলি হয়নি।

বিভিন্ন জনের প্রয়োজনে এ বদলি করা হয়েছে। তবে বদলি-বাণিজ্য বা তদবিরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘুষ দিয়ে বদলি হলেও কর্মকর্তাদের দিয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের কাছ থেকে সুপারিশ আনতে বাধ্য করেছিলেন লতিফ বিশ্বাস। এ কাজে যাঁরা সহায়তা করেননি, তাঁদের মন্ত্রণালয় থেকে সরে যেতে হয়েছে।

তবে টাকাপয়সা বা তদবিরে বদলি করার বিষয়টি অস্বীকার করে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনিক কারণে এসব বদলি করা হয়েছে।

আমরা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক অনুরোধও রাখা হয়েছে। ’ শেষ সময়ে একসঙ্গে এত বদলি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন বদলি করা হয়নি, তাই একসঙ্গে করা হয়েছে। এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো বিষয় নেই।

যাঁরা বদলি হয়েছেন, তাঁদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বদলির আবেদন করেছিলাম, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্ত্রীর একজন আস্থাভাজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রী দায়িত্ব ছাড়ার আগে বড় ধরনের বদলি করা হবে। আগ্রহী থাকলে যোগাযোগ করেন।

পরে আমরা যোগাযোগ করেছি। টাকা তো অবশ্যই দিয়েছি। না দিলে কি আর একসঙ্গে এত বদলি করার কথা!’

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কেউ কেউ নিজেদের প্যাডে আবার কেউ কেউ বিভিন্ন কর্মকর্তার আবেদনে সুপারিশ করেছেন।

জানা গেছে, বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাভার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক দেবাশীষ দাশকে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক পদে বদলির সুপারিশ করেন।

রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়ার সাংসদ টিপু মুনশি সুপারিশ করেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার সরকারের জন্য।

তিনি অনানুষ্ঠানিক চিঠিতে (ডিও লেটার) জানিয়েছেন, মনোজিৎ কুমার সরকারের স্ত্রী রংপুরে আছেন। তাই তাঁকেও যেন সাংসদের নির্বাচনী এলাকা রংপুরের কাউনিয়ায় বদলি করা হয়।

বাগেরহাট-২-এর সাংসদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর শওকত আলী বাদশা মোল্লারহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছাহেব আলীকে তাঁর নির্বাচনী এলাকা বাগেরহাট উপজেলা সদরে পদায়নের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।

 দিনাজপুর-৩-এর সাংসদ ইকবালুর রহিম উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সামসুন নাহারকে মানিকগঞ্জের শিবালয় থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বদলির সুপারিশ করেন।

সিরাজগঞ্জের সাংসদ শফিকুল ইসলাম ঢাকা চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আলতাফ হোসেনকে ছয়টি জেলার নাম লিখে যেকোনো একটিতে বদলির সুপারিশ করেন।

এ ছাড়া পাবনার সাংসদ গোলাম ফারুক খন্দকার, শেরপুরের সাংসদ আতিউর রহমানও অনেক কর্মকর্তাকে বদলির সুপারিশ করেছেন।

মহাজোট সরকার গঠনের পরপরই উপজেলা নির্বাচনে নিজ এলাকায় পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে প্রথম আলোচনায় আসেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.