বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। দেশের জন্য কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ-এর ফায়সালা আমদেরই করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা জানোয়ারের মত যেভাবে রুটিনমাফিক মারামারি কাটাকাটি করছি তাতে করে অনেকের জন্য নাক গলানোর পথ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। আর তারা নাক গলাচ্ছেনও। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষত আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশী বন্ধুরা আমাদের ভালোর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন-এটা দোষের কিছু নয়।
আর এই গ্লোবাল বিশ্বে এটা হরহামেশাই হয়ে থাকে; বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল কিংবা অন্যান্য অনুন্নত দেশের জন্য তাদের নাক গলানো একটা অবধারিত বিষয়। যাক, আমার জানামতে এখন অবধি সাতটি পক্ষ বাংলাদেশ নিয়ে তাদের উদবিগ্নতার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। এরা হলেনঃ
১ম জাতীসংঘ-সকল দেশের বাপ বা অভিভাবক। তবে শক্তিশালী কোন দেশ যেমন আমেরিকার মত দেশের ব্যাপারে এরা আমাদের দেশের দুদক-এর মত। যাইহোক, জাতীসংঘ শান্তি মিশনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে।
এতে আমরা অনেক আয় করে থাকি। তাই তাদের মতামত অগ্রাহ্য করা কারোর জন্যই সমীচীন হবে না।
২য় আমেরিকা-এদের কথা বেশী বলে সময় নস্ট করার কোন মানে নেই। এরা বাপ কা বাপ।
৩য় ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প মূলত এদের জন্যই চলে।
আমরা সবচেয়ে বেশী বিদেশী পয়সা আনি এখান থেকেই; মোট রপ্তানীর প্রায় ৬৫%-এর মত এখানে যায়। আমেরিকা রাশিয়া অধুনা চীনের পাশাপাশি এরাও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মাতব্বরী করে থাকেন। এরাও আমাদের জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ।
৪র্থ চীন-এযাবত তাদেরকে দেখে এসেছি সলিড ব্যবসায়ীরুপে। তবে এবারই প্রথম তারা আমাদের রাজনীতির ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন।
কারণ ঐ রাজনীতি; সাথে ব্যবসাও যুক্ত আছে।
৫ম জাপান-এরা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। কিন্তু এরাও এবার কথা বলছে; মাঝে মাঝে উপদেশ দিচ্ছে।
৬-কানাডা-আগে তেমন একটা ভূমিকা দেখা যায়নি। তবে পদ্মা সেতু-র ইস্যুর পর থেকে এরা বেশ সক্রিয় আমাদের ব্যাপারে।
লাকি(?) ৭ম- ভারত। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাস্ট্র। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছিল। ওই কঠিন সময়ে তাদের সাহায্য না পেলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে আরো সময় লাগত। সেজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কিন্তু স্বাধীনতা পাবার পর থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তথা সমগ্র জাতীর উপর তাদের বিন্দু পরিমাণ সম্মান আছে কিনা এই ব্যাপারে আমরা গভীরভাবে সন্দিহান।
এর বাইরেও Human Rights Commission সহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। অতএব দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এখন “মুই কি হনুরে” অবস্থা।
যাইহোক, উপরোক্ত গ্রুপ সেভেন সদস্যদের সবাই আমাদের উপদেশ, শলা-পরামর্শ, ক্ষেত্র বিশেষে নির্দেশ, এমনকি কেউ কেউ হুমকি-ধামকিও দিচ্ছেন। তবে তারা প্রায় সকল পক্ষ চাচ্ছেন বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহনযোগ্য এবং সবদলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।
এই ব্যাপারে ৬টি পক্ষের অবস্থান প্রায় এক। কিন্তু শুধু ভারত চাচ্ছে ভিন্ন কিছু। তারা নির্বাচন হোক এটা চাচ্ছেন, সবদল অংশ নিক এটাও ঠিক আছে। কিন্তু তারচেয়ে বেশী চাচ্ছেন এবারো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক। এটা অনেকটা ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’ মত।
এটা কোন কথা হলো??
সম্প্রতি ভারতের পররাস্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তিনি তিন শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া এবং এরশাদ (সর্বজনাব/জনাবা) এর সাথে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে এরশাদ সাহেবের সাথে আলোচনায় তার কথাবার্তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এরশাদের কথার সুত্র ধরে বলা যায় তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল নির্বাচিত হলে জামায়াত শিবিরসহ মৌলবাদী শক্তির উত্থান হবে’। এটা কেমন কথা হলো? স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহনযোগ্য এবং সবদলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে ১৮দলীয় জোট ক্ষমতায় যাবে এটা কি তিনি নিশ্চিত? আর ভোট দিবে বাংলার আপামর জনসাধারণ।
তারা যাকে ভোট দিবে তারাই সরকার গঠন করবে। এটাই গনতন্ত্রের নিয়ম। তিনি বা তারা জামায়াত-শিবির কে সহ্য করতে পারেন না এটা তার বা তার দেশের ব্যাপার। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে একটা প্রশ্ন তাকে করা যেতেই পারে, ভারতে সামনের নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হতে পারে। আর তা হলে নরেন্দ্র মোদী হবেন ভারতের নেক্সট প্রধানমন্ত্রী।
মোদীকে কে না জানে!!! আমার প্রশ্ন নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি বেশী উগ্রবাদী নাকি বাংলাদেশের জামাত-শিবির বেশী উগ্রবাদী????? এর উত্তর উন্মুক্ত আলোচনার জন্য রেখে দিলাম।
আমরা বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক। উপরোক্ত সকল পক্ষকে আমাদের স্পস্ট কথা হলো, আপনার আমাদের ভাল চান ভালো কথা। নিরপেক্ষ থাকেন। জনগণের যেটা ভালো হয় সেটা করার জন্য চাপ দেন।
কিন্তু কখনও পক্ষপাতিত্ব করবেন না। মনে রাখবেন, আপনার একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত বা উস্কানীতে ঝরে যেতে পারে আমাদের অনেক তাজা প্রাণ।
সবাইকে ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।