আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গিবাদের উদ্বেগই ভারতের কাছে মুখ্য : সুজাতা

জঙ্গিবাদ ইস্যুতে ভারতের যে উদ্বেগ তা আবারও জানিয়ে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। আগের দিন ঢাকা সফরে এসে গতকাল সকালেই নয়াদিলি্লর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন তিনি। সফরে তিনি জাতীয় পার্টিকে অনুরোধ করেছেন নির্বাচনে যেতে। বিএনপিকে বলেছেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কোন্নয়নের কথা এবং পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগকে। অত্যন্ত কূটনৈতিক চালে সব সম্পন্ন করেছেন সুজাতা সিং।

প্রকাশ্যে বলেননি তেমন কোনো কথাই। তবে কূটনৈতিক সূত্রের খবর, একান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২০ মিনিটের আলোচনায় তিনি পেঁৗছে দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বিশেষ বার্তা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে এবারের প্রকাশ্য কূটনৈতিক তৎপরতায় সবচেয়ে সক্রিয় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য। সেটি জঙ্গিবাদ ইস্যুতেই।

এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনাও থেমে নেই। ভারত তার উদ্বেগের কথা ইতোমধ্যেই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়নি। বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি দেশ দুটির জোরালো সমর্থনের ব্যাপক ধারণা আছে এখানকার বিশ্লেষকদের মাঝে। এমন পরিস্থিতিতেই ঢাকা আসেন সুজাতা।

পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের আমন্ত্রণে 'শুভেচ্ছা সফর'-এ ঢাকা এলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সব সূচিতেই মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে রাজনীতি। সুজাতা সিং বুধবার ঢাকা এসে প্রথমে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে। সেখানে প্রথম ১৫ মিনিট উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু পরের প্রায় ২০ মিনিট একান্তে কথা বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ও হাইকমিশনার। প্রায় একই ধরনের বিষয় লক্ষ করা গেছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রেও।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকের শুরুতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চপদস্থরা। কিন্তু পরে সেখানে আর কেউ ছিলেন না। একান্তে প্রায় ২০ মিনিট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন সুজাতা সিং। সূত্রের খবর, সুজাতা এ সময়ই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পেঁৗছে দিয়েছেন শেখ হাসিনার কাছে। অবশ্য সুজাতা নিজেও গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কাছে ভারতের বার্তা পেঁৗছে দিয়েছি।

সেই বার্তা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ভারতের বিষয়। তাই সেটি প্রকাশ্যে জানাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেই একান্তে কথা প্রকাশ পায়নি। কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে একান্তে যে কথা বলেছেন তা প্রকাশ করে দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বৈঠক শেষে বেরিয়েই এরশাদ জানান, সুজাতা সিং তাকে বলেছেন, জাপা নির্বাচনে না গেলে যদি অন্য কোনো দল জয়ী হয়, তাহলে জামায়াতে ইসলামী তথা জঙ্গিবাদের উত্থান হবে।

এরশাদ দাবি করেন, এ সময় তিনি বলেছেন, তিনি জামায়াতের উত্থান হোক, তা চান না। যদি জামায়াতের উত্থান হয়ও, তার জন্য দায়ী হবে বর্তমান সরকার। এ পর্যায়ে সুজাতা সিং বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক ভালো কাজ করেছেন। জবাবে এরশাদ বলেন, হ্যাঁ, অনেক ভালো কাজ করেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু রাজনীতি ঠিক করেননি তিনি।

তখন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের এখনো সময় আছে। দেখেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয় কি না। সাক্ষাতের সারসংক্ষেপ করে এরশাদ বলেছেন, উনাদের ইচ্ছা, নির্বাচন হোক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হোক। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার আসবে, তাদের মানবেন।

আমি বলেছি, সে সুযোগ (নির্বাচন) আর নেই, সেটা হওয়া সম্ভব নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতেও জঙ্গিবাদের উত্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করতে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। অন্য কোনো শক্তিকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। আগামী নির্বাচনে যত বেশি সংখ্যক দলের উপস্থিতির কথাই বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণে ও বৃহত্তর পরিসরে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ভারত আশা করে বলেও জানিয়েছেন।

তারানকো ঢাকা আসছেন আজ : নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে চরম সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আজ সন্ধ্যায় ঢাকা আসছেন জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো। তিনি সংকট নিরসনের জন্য 'দূতিয়ালি' করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের বিশেষ দূত হিসেবে। সংলাপ ও সমঝোতার জন্য উদ্যোগের পর উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তারানকোর এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। বিশ্লেষকরা এ সফরকে শেষ 'আশার আলো' হিসেবে অভিহিত করে বলছেন, এরপর বিশ্ব সম্প্রদায়েরও আর কিছু করার থাকবে না।

অন্যদিকে, জাতিসংঘসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনই হবে তারানকোর সফরের মূল লক্ষ্য।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাঈদা মুনা তাসনিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা এসে পেঁৗছাবেন তারানকো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন। পাঁচ দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

সফরসূচি সম্পর্কে জানা গেছে, আজ ঢাকা এলেও মূল সফর শুরু করবেন আগামীকাল শনিবার।

সকাল ১০টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করবেন তিনি। দুপুরে যাবেন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সন্ধ্যায় দেখা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে। দুই নেত্রীকেই জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের চিঠি হস্তান্তর করবেন। এরপর তারানকো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দুই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করবেন।

ঢাকার বিদেশি কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থান খুঁজে পেলে সেটিকে ভিত্তি করেই অগ্রসর হবেন অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো। সফরের শেষে আবারও বৈঠক করবেন দুই নেত্রীর সঙ্গে। সর্বাত্দক চেষ্টা চালাবেন সমঝোতার। তারানকো তার সফরে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

রাজনৈতিক বিভিন্ন মহলে তারানকো বিশেষ ফর্মুলা নিয়ে আসছেন বলে আলোচনা হচ্ছে, তবে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে সেই সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে নিজের সফরের সব বিষয় নিয়েই গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জাতিসংঘের এই দূত। তারানকোর সফর নিয়ে ঢাকার কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় জানা গেছে, বাংলাদেশ সফরে দুই দফায় আসার আগে সফরের বিষয় নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেও এবার কিছুই স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। তবে বান কি-মুন দুই নেত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংলাপ ও তারানকোকে সহযোগিতা করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে সরকার পক্ষ থেকে তারানকোর সফরে সমাধানের আশা করা হচ্ছে কারণ বিরোধী দলের এ সফরের প্রতি আস্থা আছে।

এদিকে, দেশের রাজনৈতিক সংকট কাটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সমমনা দেশগুলো এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে। এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ঢাকার দূতাবাস। এদিকে, গত মাসের শেষ সপ্তাহে তারানকোর সফরের কথা প্রকাশের সময়ের চেয়েও এখন পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। বিরোধী দলের পর পর ডাকা অবরোধ সারা দেশেই সংঘাত ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে অর্ধশত মানুষ নিহত হয়েছে এ দেশে।

নির্বাচনের পথে অনেক দূর অগ্রসর হয়েও জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণার পর বেকায়দায় রয়েছে সরকার। ক্রমেই জটিল হওয়া রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই আসছেন তারানকো। জানতে চাইলে প্রবীণ কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, রাজনৈতিক পক্ষগুলোর অক্ষমতার কারণেই কূটনীতিকরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। সার্বভৌম বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি রাজনীতি নিয়ে কূটনীতিকদের ভূমিকাকে তীব্রভাবে ঘৃণা করি।

কিন্তু রাজনৈতিক মতপার্থক্যের সংঘাত-সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে এতটাই অস্বস্তিকর করে তুলেছে যে দেশের সাধারণ মানুষের মতো আমিও চাই যে প্রক্রিয়াতেই হোক পরিস্থিতির উত্তরণ।

নির্বাচন নিয়ে সমঝোতায় আসুক প্রধান দুই দল। বন্ধ হোক অমানবিক গাড়ি পোড়ানো, যত্রতত্র ককটেল বিস্ফোরণ। জনগণ শান্তি পাক। দেশের লাখো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিনষ্ট না হোক। তাই কূটনৈতিক উদ্যোগে সমঝোতা হলেও একে স্বাগত জানাতে জনগণ প্রস্তুত।

সব মিলিয়ে তারানকো এখন অন্ধকারে আশার আলো। এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন বিশ্ব সম্প্রদায়েরও আর কিছুই করার থাকবে না।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.