বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ বলেছেন, জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়। ইসলামের শান্তির বার্তা প্রচার ছাড়া এর মোকাবিলা পুরোপুরি সম্ভব নয়। আর শান্তিবাদী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য জঙ্গিবাদ রুখতে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ধর্মকে জঙ্গিবাদের হাতিয়ার করাকে গর্হিত অপরাধ বলে মন্তব্য করে মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ বলেন, কোনো ধর্মই বিশেষ করে ইসলাম কোনো ধরনের বাড়াবাড়িই সমর্থন করে না। এমনকি ইবাদতের ক্ষেত্রেও ইসলাম কোনো বাড়াবাড়ি পছন্দ করে না।
পবিত্র কোরআন শরিফে ঘোষণা করা হয়েছে, 'যদি কোনো একজনের প্রাণ রক্ষা করা হয় তা সমস্ত মানব জাতিকেই রক্ষার সমান। আবার যদি কোনো একজন মানুষকে হত্যা করা হয় তাহলে সমস্ত মানব জাতিকেই হত্যা করার শামিল হয়ে যায়। ' তাই কোনোভাবেই ধর্মকে ভিত্তি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য নির্মম জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। বরং এতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়। জঙ্গিবাদের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাওলানা মাসউদ বলেন, মানব জাতির বিভক্তি সৃষ্টি ও মুসলিম সমাজকে ধ্বংসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য জঙ্গিবাদকে উসকে দিয়েছে।
তারা স্থিতিশীলতা নষ্ট করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করেছে। কারণ হিসেবে মাওলানা মাসউদ বলেন, জঙ্গিবাদের অন্যতম প্রবক্তা আল-কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেন আমেরিকারই সৃষ্টি। কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মোকাবিলা করার জন্যই লাদেনকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই লাদেনই এখন তাদের জন্য ফ্রাঙ্কেনস্টাইন (নিজের সৃষ্টি, যখন সৃষ্টিকারীকে ধ্বংস করে) হয়ে দেখা দিয়েছে। পুরো বিশ্বের জন্যই এক ধরনের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জঙ্গিবাদী কার্যক্রম রুখতে আলেম-ওলামাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ। তিনি বলেন, ঈমান ও ইসলামের তাগিদে আলেম সমাজকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সমাজের মানুষকে সচেতন করতে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষকে এই বার্তা পেঁৗছে দিতে হবে যে, ইসলাম হলো উদার, অসাম্প্রদায়িক ও শান্তির ধর্ম। এখানে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।
তিনি বলেন, আলেম-ওলামাদের মসজিদে খুবতার মাধ্যমে, বিভিন্ন ইসলামী মাহফিলের মাধ্যমে সমাজ সচেতনতার এই কাজ করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টিতে আলেম সমাজকে সহায়তা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ। তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে সুযোগ সৃষ্টি করা। কারণ শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। কারণ ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
তাই ধর্মীয় মোটিভেশন (প্রণোদনা) ছাড়া জঙ্গিবাদকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সক্রিয় হতে হবে। কারণ জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা শান্তিবাদী ওলামা সমাজকে তাদের নিজেদের পথের অন্যতম বাধা বলে মনে করে। তারা শান্তিবাদী ওলামা সমাজের অস্তিত্ব নষ্ট করার অপচেষ্টাও চালাবে। তাই এখনই সময় সমন্বিতভাবে ইসলামবিরোধী জঙ্গিবাদী কার্যক্রমকে রুখে দেওয়ার বলে মন্তব্য করেন মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।