আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরাজেয়: স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে বছর পূর্ণ

সম্পাদক থাকেন এক নগরে, লেখক-সাংবাদিকের অবস্থান আরেক জায়গায়। এর পরও মিল ও সমন্বয়ের কোনো অভাব নেই। ফেসবুক, ই-মেইল ও টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ, মতবিনিময় ও লেখার রসদ জোগানো চলে। এসবের গুণে ত্রৈমাসিক পত্রিকাটি বেরোচ্ছে নিয়মিত। পূর্ণ করেছে একটি বছর।



নির্দিষ্ট অফিস ছাড়া, সরাসরি কারও সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া এভাবেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বপ্ন, হতাশা, অভিমানগুলো ছাপার অক্ষরে ‘অপরাজেয়’ পত্রিকার বিভিন্ন পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে।  এ পত্রিকায় যে কেউ ফিচার, গল্প, কবিতা বা প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক যেকোনো লেখা পাঠাতে পারেন। শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নন, পত্রিকাটি প্রকাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্বাভাবিক ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠন।

৩ ডিসেম্বর ছিল ‘অপরাজেয়’-এর প্রথম বর্ষপূর্তি। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় আজ (৬ ডিসেম্বর) বিকেল চারটায় নগরের ৩২ তোপখানা রোডের চট্টগ্রাম সমিতি ভবন মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান হবে।

অনলাইনে ‘অপরাজেয়’ পড়ার জন্য নতুন ওয়েবসাইটেরও উদ্বোধন হবে আজ।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি গণমাধ্যমের যে অবহেলা সেই ক্ষোভ থেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কের (বি-স্ক্যান) উদ্যোগে ‘অপরাজেয়’ যাত্রা শুরু করে। সংগঠনটির সভাপতি সাবরিনা সুলতানা মাংসপেশিজনিত সমস্যা মাস্কুলার ডিস্ট্রফিতে আক্রান্ত। পঞ্চম শ্রেণীর পর প্রবেশগম্যতার অভাব এবং পরিবারের অসচেতনতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আর তাঁর পড়া হয়নি। সাবরিনা জানান, জীবনের ২৬টি বছর চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থাকতে থাকতে তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন।

ফেসবুকের মাধ্যমে ২০০৯ সালে বাইরের যোগাযোগের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে। ফেসবুকেই পরিচয় হয় বি-স্ক্যানের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুবের সঙ্গে। নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে সালমার জীবনও আটকে গেছে হুইল চেয়ারে। তাঁরও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পড়াশোনা নেই। ২০০৯ সালে সাবরিনা, সালমার সহযোগিতায় ফেসবুকের একটি গ্রুপ থেকে গড়ে ওঠে বি-স্ক্যান।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সচেতনতা তৈরিতে বি-স্ক্যান কাজ করছে।

সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রথম সারির অনেক গণমাধ্যমের কাছে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানাতে চেয়েছি। কিন্তু তারা আগ্রহ দেখায়নি। তখন বি-স্ক্যানের স্বেচ্ছাসেবক অপ্রতিবন্ধী বন্ধু মহিদুল ইসলাম একটি পত্রিকা বের করার সাহস দেন। এই তরুণ বন্ধুটিই এখন এ পত্রিকার সম্পাদক।

 সমাজের কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিজ্ঞাপনের ওপর ভর করেই বের হচ্ছে এ পত্রিকা। পত্রিকায় প্রকাশের জন্য বিভিন্ন জনের পাঠানো হাতে লেখা প্রতিবেদনগুলো যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ঘর থেকে বের হতে পারেন না তাঁদের কাছে স্ক্যান করে পাঠানো হয়। ঘরে বসেই তাঁরা তা টাইপ করে পাঠিয়ে দেন পত্রিকার সম্পাদক বা অন্যদের কাছে। রিপোর্টিং, ফিচার লেখা এবং সম্পাদনার বেশির ভাগ কাজ করেন সাবরিনা ও সালমা। পত্রিকার ডিজাইনসহ অন্যান্য কাজ করছেন প্রতিবন্ধী কয়েকজন ব্যক্তি।

আর পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সহায়তা তো আছেই।

সালমা মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি থাকি ঢাকায়। সাবরিনা থাকেন চট্টগ্রামে। ফেসবুক, ই-মেইল বা টেলিফোনে কথা বলে পত্রিকায় কোন লেখা যাবে, কীভাবে যাবে, ছবি কী হবে ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময়ই এ কাজে চলে যায়।

পরিশ্রমও হয় অনেক। ’

বর্তমানে পাঁচ হাজার কপি ছাপা হচ্ছে পত্রিকাটির। নিজেদের খরচে পত্রিকার কপি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঠিকানায় পাঠাচ্ছেন পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। ট্যাবলয়েড আকারের পত্রিকাটির শুভেচ্ছা মূল্য ১০ টাকা।

এই পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্তদের চাওয়া খুব সামান্য।

বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁদের যে স্বপ্নগুলো আকাশে ডানা মেলতে পারেনি, তা যেন অন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বেলায় না ঘটে। আর প্রতিবন্ধী এবং অপ্রতিবন্ধী মানুষের সমন্বয়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা। সমাজের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না এলে হয়তো স্বপ্নের এই ডানাগুলোও একদিন মুখ থুবড়ে পড়বে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.