দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
দুই.
দেশে ফিরবার এক সাপ্তাহ আগে মন্ট্রিয়লে আর্টিষ্ট বন্ধু রাকিব হাসানের বাড়িতে রাত ভর আড্ডা হলো। শামীম ভাই ক'দিন আগেই মন্ট্রিয়লে এসে নাজেল হয়েছেন। আমি বললাম, আপনে এই খানে তাইলে আমার অপরাজেয় বাংলা প্রজেক্টের কি হইব! দেশের থেইকা ফিরাতো খালিদ ভাই'র সাথে আর যোগাযোগটা ঠিক রাখতে পারি নাই। শামীম ভাই জানালেন ছ'সাপ্তাহের মধ্যেই ফিরছেন উনি।
আমি বললাম তাইলে আপনে আসলেই কাজ শুরু করমূ।
তেলের দাম বাইরা প্লেনের টিকিটের দাম গেছে বাইরা! অটোয়া-ঢাকা-অটোয়া টিকিটের দাম হুহু করে বেড়ে ১৮০০/১৯০০ কানাডিয় ডলার হয়ে যাচ্ছে। বুদ্ধি করে অর্ধেক টিকিট কাটলাম। খরচ তাও বারোশো ডলারের মত। রিটার্ণ টিকিটটা হাতে থাকলে কয়দিন পরই ফিরবার একটা ব্যারা ওঠে।
মাথা খাটাইয়া টিকিট কাটলাম ওয়ান ওয়ে। আসলে নগদ টাকা বাচানোর জন্য ইচ্ছা কইরাই রিটার্ণ্ কাটি নাই। দেশে হাতের টাকা পয়সা ফুরাইয়া গেলে যেন সহজে ফিরতে না পারি, উদ্দেশ্য হইল সেটা।
দেশে ফেরার পর আমার এরকম ওয়ান ওয়ে টিকেট টু হোমের কথা শুনে নিকটাত্নিয়রা ফিশফাস করে, বৌ সংসার ঠিকাছে কিনা ইঙ্গিতে জিগ্গেস করে। মরার দেশে কেন আইছি তা জানতে চায়।
ডকুমেন্টারীর কথা শুইনা চোখ কপালে তোলে, বলে এগুলাতেত পয়সা নাই! আমার ভাগ্নিকে এক দিন আফসোস করে তার মাকে জিজ্ঞেস করতে শুনলাম; টেলি ফোনের জোস্ জোস্ বিজ্ঞাপন বানিয়ে কে কত টাকা কামিয়ে ফেলেছে! আর তার মামা বুড়াদের মত কি বলে অপরাজেয় বাংলা না টাংলা! মনটাই খারাপ হইয়া গেছিল সেদিন। ঠিক করলাম নিজের লাইন ছাড়া আত্নিয় স্বজন/ ববন্ধুবান্ধব কারো সাথে বোহুদা কোনো যোগােযাগ নয়। মনে মনে বললাম, আমার লাইন ছাড়া বাদবাকী আত্নিয় স্বজন বন্ধুবান্ধব সকলের ক্ষেতাও পুড়ি না।
খালিদ ভাইর টেলিফোন নাম্বারটা সাথে ছিল না নাম্বারের জন্য মন্ট্রিয়ল ফোন করলাম শামীম ভাইকে পেলাম না কি সব জটিলতার কারনে জানলাম উনি সহসা ফিরতে পারছেন না! আমি তখন টার্গেট নিলাম এই ২৬ মার্চের ভেতর কাজটা শেষ করতে হবে। এক দিন দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ এর পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে বিটিভি'র এক সময়ের ডাকসাইটে প্রযোজক ম.হামিদ কে পেলাম।
ওয়ান টু থ্রী করে ম.হামিদকে এ্যপ্রোচ করে বসলাম। অপরাজেয় বাংলা নিয়ে আমি একটা কাজ করছি আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই। উনি পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে দিয়ে বললেন আমি এখন আর টি ভিতে আছি, ফোন করো দু'দিন পর।
দু'দিন বাদে ফোনে ম. হামিদের কাছ থেকে, এ্যপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যথারিতী এক বিকেল চারটার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে আরটিভির নীচে যেয়ে কল করলাম তাকে। এক বার, দুই বার , তিন বার ফোন করে বেকুব হয়ে গেলাম কেউ ফোন ধরছেন না! পরে কিছুক্ষন বাদে উনি কল ব্যাক কর্লেন, উনি তখন অফিসে নাই! উনি বললেন একটা ফোন করে আসবা না? আমি বললাম আমারে চারটায় টাইম দিয়ে ছিলেন আপনি।
যাই হউক পর দিন আবার টাইম দিলেন। অফিসে গিয়ে ঠিক মত কাজ করতে পার্লাম না ওনার ব্যাস্ততার কারনে। ছুটির দিন শুক্রবার সকালে মর্ণিং ওয়াকের সময় উনি টাইম দিলেন অপরাজেয় বাংলার সামনে। আমি সানন্দে রাজী হলাম।
ম. হামিদ মুক্তি যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে ডাকসু'র সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে একটি ভাস্কর্য নির্মান হবে এই প্রকল্পটি সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু'র পক্ষ থেকে তিনিই এগিয়ে নিয়ে যান। শিল্পী খোজার প্রক্রিয়ার মাঝে কতৃপক্ষ ঠিক করেন ভাস্কর আবদুল্লাহ খালিদ কে। ঠিক হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে নির্মান হবে মুক্তি যুদ্ধের স্মারক ভাষ্কর্য...
(চলিবেক)
মুর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন: অপরাজেয় বাংলা এক.
ছবি: মিশুক মুনীর ১৯৭৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।