আমি সাম্প্রদায়িক । বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রুপে দেখতে চাই। তবে সম্প্রদায় থাকবে একটাই, "বাংলাদেশি"।
এই মহাবিশ্বের একজন নায়ক মারা গেলেন । নেলসন ম্যান্ডেলা ।
তাকে নিয়ে আমি কিছু লিখিনি । তাকে নিয়ে লেখার মত আমার যোগ্যতা আছে বলে মনে করি না । এই লেখার শুরুতেই তার নাম থাকলেও লেখাটা তাকে নিয়ে না, বাঙলাদেশ কেন্দ্রিক ।
শুধু নিজের অযোগ্যতা না, তাকে নিয়ে না লেখার আরেকটা কারণ আছে । আমরা যেখানে আমাদের ‘জাতির জনককে’ তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি না, সেখানে সুদূর আফ্রিকার পঁচানব্বই বছর বয়সী একজন বৃদ্ধের জন্য সম্মান কামনা করা হাস্যকর বৈকি (আমাদের দেশে অবশ্য পঁচাত্তর-পঁচানব্বই বছর বয়সীদের জন্য বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা আছে, তারা মানবতাবিরধি অপরাধ করলেও ছাড়া পেয়ে যান নামমাত্র প্রহসনের শাস্তিতে) ।
আমাদের দেশে ‘আকস্মিক জন্মলাভ’ করা সেনানায়ককে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য অপমান করা হয় জাতির জনককে । একাত্তরে যারা এই দেশের বিরুদ্ধে ছিল, যারা গাইতে চেয়েছিল ‘পাকসারজামিন সাদবাদ’, যারা আজও চান-তারার স্বপ্নে বিভোর তাদের অবৈধ সন্তানেরা অসম্মান করে মুজিবকে; নরপশুরা অসম্মান করে এই রাষ্ট্র যার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তাকে । আবার বঙ্গবন্ধুর নিজের দল তাকে পরিণত করেছে পণ্যে । তার নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী বারবার ফিরে পেতে চায় আরামের গদি । "জয় বাঙলা,জয় বঙ্গবন্ধু" স্লোগানটি হওয়ার কথা ছিল সারা বাঙলার।
কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে সেটা কুক্ষিগত হয়েছে নির্দিষ্ট একটি দলের কাছে। আজ জাতির পিতার নাম নিলে নির্দিষ্ট একটি দলের ট্যাগ লেগে যায় গায়ে, অথচ আমি/আমরা ঐ দলের সঙ্গে যুক্ত নই।
অন্য একদল ভন্ড নেমেছে হাতে বিভ্রান্তির ঝুলি নিয়ে। ওরা দেশকে বিভ্রান্ত করতে চায়, নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। ওদের মতে জাতির পিতা ইসলাম ধর্মের নবী ইবরাহিম (আঃ)।
কি আজব!! এরা জাতি কি সেটাই বুঝে না... ইবরাহিম (আঃ) অবশ্যই জাতির পিতা, কিন্তু উনি মুসলিম জাতির পিতা, বাঙলাদেশিদের জাতির পিতা "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান"। দুজনের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন, একজন একটি ধর্মের অন্যজন একটি ভুখন্ডের, একটি একক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর।
আমাদের দেশের যুব সমাজ রাজনীতি করে না, রাজনীতি বুঝেও না কিন্তু খুব ভালো গালাগালি করতে পারে । দুই একজন যারা রাজনীতি করে তারাও এরশাদ নামক এক ভাঁড়ের জোক্স শুনে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়; আগের দিনে তারা কিসের জন্য আন্দোলন করেছিল ভুলে যায়, বেমালুম। ভুলে যায় ফেলানি, বিশ্বজিৎ অথবা মনিরের কথা ।
এই সব অভিজ্ঞতা থেকেই ‘বর্ণবাদ বিরোধী পঁচানব্বই বছরের তরুণ ম্যান্ডেলা’ সম্পর্কে কিছু লিখি নি । লেখার সাহস পাইনি । তাকে এই দেশের কিছু বিকৃত মনের অধিকারী অশিক্ষিত মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই নি ।
আসলে আমারা অনুমান কতটুকু ঠিক ছিল, তার হদিস পাই ফারাবি বা ফারারি নামের একজনের স্ট্যাটাসে । সে মেন্ডেলার নাম দিয়ে লেখা শুরু করে শেষ করেছে ধর্ম দিয়ে ।
তার কাছে মনে হয়েছে ম্যান্ডেলা বা বিধর্মী কোনও মানুষ যত ভালো কাজই করুক না কেন সে স্বর্গে যেতে পারবে না, তার স্থান জাহান্নামে । আসলে বুদ্ধি-প্রতিবন্ধি ছাড়া কারও পক্ষে এধরণের অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা সম্ভব কিনা তা নিয়ে নাসায় গবেষণা হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি (অবশ্যই, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের :p ) । সত্যি বলতে এই ধরণের মৌলবাদী, উগ্রপন্থি, সাম্প্রদায়িক মানুষের মনকে ম্যান্ডেলার পক্ষেও ছুঁয়ে যাওয়া অসম্ভব। উনি ছিলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, অথচ এই ধর্মান্ধদের মনের মধ্যে শুধু সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প।
যদিও আমি নিজে ধার্মিক না তবু একটা কথা বলি,'যারা সব জায়গায় ধর্ম টানে তারা ধার্মিক না,বকধার্মিক’
ভাল থাকুন সময়ের অগ্নিপুরুষ ম্যান্ডেলা ।
- ফাহিম শিহাব রেওয়াজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।