সবাইকে শুভেচ্ছা।
যখন আফ্রিকাতে ছিলাম, ১৯৯৩-এর শেষের দিকের কথা। চাকরির সুবাদে আমি পরিবার নিয়ে জাম্বিয়াতে থাকি। আফ্রিকার খৃষ্টান অধ্যুষিত দেশগুলো বছরের শেষ দিনগুলো খুব ছুটি-ছাটার মধ্যে কাটিয়ে থাকে। বড়দিনের দু'একদিন আগে থেকে শুরু করে নতুন বছর জানুয়ারীর ৩ তারিখ পর্যন্ত লম্বা ছুটি।
প্রায় দশ দিন। আমি এবং আমার এক বন্ধুর ফ্যামিলি মিলে ঠিক করলাম এই ছুটিতে দক্ষিন আফ্রিকা যাবো বেড়াতে এবং গাড়ি চালিয়ে। জোহানেসবার্গ হয়ে ডারবান পর্যন্ত প্রায় আঠারো শত কিলোমিটারের লম্বা সফর। অবশ্য এক নাগারে যাওয়া যাবে না। ঠিক করলাম প্রথমে জিম্বাবুয়ের হারারেতে যেয়ে রাত্রিযাপন করে পরের দিন সকালে দক্ষিন আফ্রিকা রওয়ানা হবো।
হারারে যেতে লাগবে পাঁচ ঘন্টা এবং ওখান থেকে দক্ষিন আফ্রিকার বর্ডার পোস্ট বাইটব্রিজ পৌছাতে লাগবে প্রায় আট ঘন্টা। আফ্রিকায় একটা সুবিধা হলো গাড়ি নিয়ে অনায়াসেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যাওয়া যায়। ভিসা'র ব্যাপারটা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই পোর্ট অব এন্ট্রি। এখন যদিও কিছুটা কড়াকড়ি করা হয়েছে।
আমরা হারারেতে এক রাত হোটেলে থেকে পরদিন সকাল সাতটার দিকে রওয়ানা হ'লাম বাইটব্রিজের উদ্দেশ্যে।
হাইওয়ে এতো মসৃন এবং নিখাদ ও নিখুঁত হতে পারে তা ভ্রমন না করলে বা গাড়ি না চালালে বুঝা যাবে না। মসৃণ কথাটা হয়তো এখানে সেই অর্থে প্রযোজ্য নয়। বলা যেতে পারে rough surface, কিন্তু সমান। আর তাই আমাদের গাড়ি চলেছে মাটি কামড়ে। স্পিডোমিটারের কাঁটা কখন ১৫০ অতিক্রম করেছে, বুঝার উপায় নেই।
হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হতেই কমিয়ে ফেলতে হয়েছে। তবে ঐসব রাস্তায় কখনই ১২০-এর নিচে গাড়ী চালানো যায় না। তবে আট লেন-এর রাস্তায় অসুবিধা নেই। বাইটব্রিজে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। সময় একটু বেশীই লাগলো কয়েক জায়গায় থেমে থেমে এসেছি বলে।
পথের পাশেই প্রতিটি পেট্রোল পাম্প স্টেশনে রিফ্রেশ হওয়ার ব্যবস্থা আছে, আছে রেষ্টুরেন্ট, ফাস্ট ফুডের দোকান। সবই ঝ্কঝকে পরিচ্ছন্ন। জিম্বাবুয়ের বর্ডার পাড় হয়েই দু'একশ মিটার পরই দক্ষিন আফ্রিকার বাইটব্রিজ বর্ডার। ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে একটু সময় লাগলো, কারন ট্যুরিস্টদের ভিড়। ওখানেই আমাদের ভিসার স্ট্যাম্প করে দিল পাসপোর্টে।
বিকেল পাঁচটা পার হয়ে গেল। আসার আগে আমরা খোঁজ নিয়ে এসেছি বর্ডারের কাছের শহরটাতে রাত্রি যাপন করে পরদিন আবার রওয়ানা হবো জোহানেসবার্গ হয়ে ডারবানের উদ্দেশ্যে। আর তাই কাছের শহর 'মেসিনা'র দিকে রওয়ানা হ'লাম। কিন্তু মেসিনায় পৌঁছে আমরা হতাশায় ডুবে গেলাম। এটা ছোট্ট এক ছিম্ছাম শহর, হোটেল বেশী না থাকলেও যে ক'টা ছিল অনেক ঘুরেও কোথাও রুম খালি পাওয়া গেল না।
একে তো পিক্ সিজন তার উপর আমাদের লাগবে হয় ফ্যামিলি রুম, নয়তো গোটা চারেক। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। শহরের বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম এরপরের শহর 'পিটার্সবার্গ' বেশ বড়, ওখানে হোটেল পেতে কোন অসুবিধা হবে না। অগত্যা সময় নষ্ট না করে আমরা উইম্পি থেকে ফাস্ট ফুড দিয়ে রাতের খাবার সেরে রওয়ানা হ'লাম।
এখানে প্রায় সব জায়গাতেই নামকরা সব ফাস্ট ফুডের দোকান দেখা যায়। আমরা সবাই তখন খুব পরিশ্রান্ত। বিশেষ করে আমরা যে দু'জন গাড়ি চালিয়েছি।
প্রায় তিন ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে আমরা রাত সারে ন'টার দিকে পিটার্সবার্গে পৌঁছি। কিন্তু এই শহরে এসে আমাদের কোন লাভ হলো না, বরং আমরা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়লাম যেন।
একই পরিনতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। কোথাও কোন কামড়া খালি নেই। যেখানেই যাই, ফুল্লি বুক্ড্। এখানে সব হোটেলই উন্নত মানের। এক ঘন্টার উপরে ঘুরাঘুরি করে আমরা কোন হোটেল না পেয়ে আমরা একেবারে পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়লাম।
আমরা বুঝতে পারছি যে ভুলটা কোথায় হয়েছে। আমরা ঠিক বড়দিনটাকেই বেছে নিয়েছি, কিন্তু এই দিনটিতে রাতে খৃষ্টানদের হারিয়ে যাওয়ার দিন। সন্ধ্যার পরই শহরের সব পাব্-বার , ক্যাসিনো-রেষ্টুরেন্ট উৎসবে সরব হয়ে ওঠে। কেউ বাইরে ঘুরাঘুরি করেনা। অনেক হোটেলের রিসেপশান থেকে বললও তাই।
এদিকে রাত বেড়ে যাচ্ছে, প্রায় এগারোটা বাজে। শহরটা ভুতুরে মনে হচ্ছে। কেউ কোন পথ দেখাতে পারলো না বলে অগত্যা আমরা পুলিশের সাহায্যের জন্য থানায় যাওয়ার মনস্থ করলাম। কারন এখন আবার গাড়ি চালিয়ে জোহানেসবার্গে যাওয়া সম্ভব নয়। সেও পাঁচ ঘন্টার ফের।
সঙ্গে আছে ছোট ছোট বাচ্চা সহ দারা পরিবার।
গাড়ি থেকে নেমেই বাইরে যে অফিসারের দেখা পেলাম, তাকে দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে গেলাম। বিশালদেহী কুঁচকুঁচে কালো। মুখে বিজলী বাতির আলো পড়ে চিক্চিক্ করছিল। ক্ষনিকেই বড় বিপদের আশংকা করলাম।
আমরাতো সেই দেশের মানুষ, যারা পুলিশের কাছে গেলে বিপদ বাড়িয়ে ফেরত আসে। পিছুটানের কোন সুযোগ নেই জেনে তার দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু কাছে গিয়ে তার "হ্যালো, গুড্ এভনিং। মেরি ক্রিসমাস্" জাতিয় অভ্যর্থনা শুনে হালে কিছুটা পানি পেলাম। আমাদের সমস্যার কথা শুনে সে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেল।
অফিসের ভিতরে গিয়ে আমরা অনেকটা আস্বস্ত হ'লাম। ছিম্ছাম অফিসে সাদা-কালোর মিশেল। এখানে কৃষ্ণাঙ্গ অফিসরদের পাশাপাশি একাধিক শ্বেতাঙ্গ অফিসারদেরও দেখা গেল। শ্বেতাঙ্গিনীও আছে। এখানে বড় অফিসার একজন স্বেতাঙ্গ।
তিনি সব শুনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমাদের জিজ্ঞেস করলেন কোন ধরনের হোটেল চাই। বললাম, মধ্যম মানের..থ্রি স্টার। একজন অফিসারকে লাগিয়ে দিলেন টেলিফোনে খোঁজ নিতে। আমরা বসে আছি অফিস কক্ষে আর দেখছি সেই অফিসার ফোন করেই চলেছেন একটার পর একটা আর স্বগোক্তি করছে "ড্যাম ইট"।
অবশেষে তিনি বললেন, "পাওয়া গেছে। দু'টো রুম। এক্সট্রা বেড দিতে পারবে। তবে এটা 'হলিডে ইন্'। " আমরা শুনে দুই বন্ধু মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম।
হলিডে ইন্ মানে শত ডলারের চেয়েও বেশী রেট। আমাদের অবস্থা দেখে অফিসারটি বললো, "স্যরি, একটু এক্সপেন্সিভ হয়ে যাবে। কিন্তু এর বেশি কিছু আর করা যাচ্ছে না। তা'ছাড়া তোমরা ফ্যামিলি নিয়ে এসেছো। এখানেই উঠে পড়ো।
বুকিং দেবো?" আমরা আর দ্বিমত করলাম না। দেরী করলে হয়তো এটাও যাবে আর আমাদের রাস্তায় ঘুরতে হবে। হোটেলের লোকেশনটা বললেও চিনতে পারলাম না। "ও হো, তোমরাতো নতুন এসেছো" বলে পাশ থেকে কাগজের টুকরো নিয়ে যাওয়ার রাস্তা আঁকিয়ে দিলো। কাগজটাতে ওদের ফোন নাম্বারও লিখে দিল যোগাযোগ করতে যদি খুঁজে না পাই।
যদিও তার প্রয়োজন পড়েনি। রাত প্রায় বারোটায় অবশেষে আমরা হোটেলে উঠি।
রাতে ঘুমিয়ে যেতে কারও সময় লাগেনি। ক্লান্ত শরীর রুমে ঢুকেই বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিলাম। পরদিন সকালে একটু দেরীতেই উঠেছি সবাই।
তাড়া নেই কোন। নাস্তা করতেও আমরা দেরিতে নেমেছি রেষ্টুরেন্টে। নাস্তা খেতেই খেতেই কালকের রাতের কথা ভাবছিলাম। বন্ধুটির সঙ্গে এ নিয়ে কথাও হচ্ছিল। এই দক্ষিন আফ্রিকা এক সময় নিষিদ্ধ দেশ ছিল আমাদের কাছে।
বাংলাদেশ পাসপোর্টে লেখা থাকতো দু'টি দেশের কথা যেখানে ভ্রমন করা নিষেধ, ইসরাইল আর দক্ষিন আফ্রিকা। আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা, তাদের জাতির পিতা নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির পর শুধু দক্ষিন আফ্রিকা নয়, সারা বিশ্ব থেকে বর্ণবৈষম্যের অবসান হয়ে যায়। কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের অধিকার ফিরে পায়। এখন আর এই দেশ নিষিদ্ধ নয়। আমরা বেড়াতে এসেছি যখন মাত্র তিন বছর হলো ম্যান্ডেলা মুক্তি পেয়েছেন।
এখনও তার মুক্তির আনন্দের ঢেউ লেগে আছে জাতীর শরীরে। কিন্তু তিনি যে বৈষম্য ঘুচিয়ে দিতে চেয়েছেন, অর্থাৎ কালো আর সাদা সমানে সমান, সেটাই তো কাল রাতে থানায় দেখতে পেলাম। এইসব অফিসারদের মাঝে একসময় কালোদের তো চিন্তাই করা যেতো না! অথচ তারা কেমন দিব্যি এক সঙ্গে কাজ করছে, হাসি-ঠাট্টাও করছিল নিজেদের মধ্যে। কারো মুখে চোখে দেখা যায় নি কোন খেদ, অসুন্তষ্টি। প্রশাসনকে এখনও শ্বেতাঙ্গরাই ধরে রেখেছে।
হয়তো খেদ আছে, ক্ষোভ আছে কিন্তু প্রকাশ নেই। কারন তাদের বাবা বলেছেন। মান্ডেলা জানতেন ঐ দেশে কালোরা দিনের পর দিন বঞ্চিত হয়েছে, নিগৃহিত হয়েছে, কিন্তু দেশটাকে গড়েছে শ্বেতাঙ্গরাই। উন্নতির শিখরে নিয়ে গিয়েছে ওরাই। প্রশাসনকেও ওরাই ওদের মত করে সাজিয়ে রেখেছে।
সুতরাং ওদেরকে তাড়িয়ে দিলে দেশটা ধপাশ করে বসে পড়বে। তা'ছাড়া ম্যান্ডেলা লড়েছেন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে। এখন যদি সাদাদের উপর প্রতিশোধ নিয়ে ওদের একইভাবে বঞ্চিত করা হয় তা'হলে আরেক বৈষম্যের সৃষ্টি হবে! আর তাই তিনি বললেন সমঝোতার কথা। আর তাই গঠিত হলো ট্রুথ এন্ড রিকন্সিলিয়েশন কমিশন। কিন্তু এত সহজেই ব্যাপারটা মিটে যায় নি।
যুগের পর যুগ কৃষ্ণাঙ্গরা শেতাঙ্গদের দ্বারা পদদলিত থেকেছে, তারা কিভাবে এই সবঝোতা মেনে নেবে? কিন্তু ম্যান্ডেলা অনড় ছিলেন তার সিদ্ধান্তে। তিনি বোঝালেন দেশবাসীকে যে ক্ষমার চেয়ে মহীয়ান আর কিছু নেই। তিনি ক্ষমা করে দিলেন শ্বেতাঙ্গদের। আর এই সমঝোতা সম্ভব হয়েছে যখন শ্বেতাঙ্গরা তাদের অতিতের সকল বৈষম্যমূলক আচরনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলো। দুঃখ প্রকাশ করে তার ক্ষমাকে মহীয়ান করে দিল।
আমরা যে ক'দিন দক্ষিন আফ্রিকায় ছিলাম যতটুকু সুযোগ হয়েছে একই চিত্র সব জায়গায় দেখেছি। এই রকম সবঝোতার দৃশ্য দেখেছি দক্ষিন আফ্রিকায় প্রবেশ করতে সেই বাইটব্রিজের ইমিগ্রেশনেও। পরদিন দিন যখন এক পেট্রোল পাম্প থেকে তেল নিয়ে আমরা জোহানেসবার্গ থেকে ডারবানের উদ্দশ্যে রওয়ানা হবো তখন বুঝতে পারলাম গাড়ির কোন সমস্যা হয়েছে। চাকায় বাজে একটা শব্দ হচ্ছে। পেট্রল পাম্পে আছে শুধু কালো স্টাফ।
সে বললো আজ সব ওয়ার্কসপ বন্দ্ধ। আমরা অনুরোধ করলাম কিছু করতে পারে কিনা। বললো, "আচ্ছা, দাঁড়াও। বোয়ানাকে ফোন করে দেখি। " আফ্রিকান ভাষায় বোয়ানা মানে 'বস্'।
বেশ কিছুক্ষন পর এক পিক-আপ এসে থামলো। এক শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক হাফ প্যান্ট পড়ে নামলো। "কি ব্যাপার?" বললাম তাকে সমস্যাটা। সে একটু উবু হয়ে কি দেখলো, একটু চালিয়েও দেখলো। তারপর বললো, সমস্যাটা তোমার ব্রেক-এ মনে হয়।
এখানে কোন টুল্স নেই। যদি ধীরে ধীরে চালিয়ে আসতে পারো আমার বাড়ীতে তা'হলে ব্যবস্থা একটা হবে। রাজি হয়ে আমরা তাকে অনুসরন করলাম। একটু দুরই বলতে হবে। গাড়ী ঠিক করে দিল এবং বললো "বেঁচে গেছো হাইওয়েতে ওঠো নি! তোমার ব্রেক-এর ভিতরের একটা নাট খুলে পড়ে গেছে।
বড় বিপদ হতে পারতো"। ওর ফি চুকিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে ডারবানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলাম। এই যে সভ্যতা-ভব্যতা, সাহায্যের হাত বাড়ানো, এখনো 'বোয়ানা' বলে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া...এ সবই সম্ভব হয়েছে শুধু ম্যান্ডেলার জন্য। আর নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজকের এই লেখাটুকু লিখলাম। একজন সামান্য মানুষ হয়ে ইতিহাসের এক অবিসংবাদিত মহান নেতা, কিংবদন্তির প্রবাদপুরুষকে নিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু লেখার বা বলার ক্ষমতা বা ব্যাপ্তি আমার নেই।
এই মহানায়কের দেশটি ঘুরে দেখে আসতে পেরেছি, সে-ই এক পরম আনন্দ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।