দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা দ্বিতীয় দিনের মতো হাসপাতালে কাটাচ্ছেন। চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তাঁর অবস্থার খুব কমই পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর অবস্থা আগের মতোই গুরুতর, তবে স্থিতিশীল।
আজ বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুসফুসে সংক্রমণজনিত সমস্যার কারণে ম্যান্ডেলাকে গতকাল শনিবার প্রিটোরিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রিটোরিয়ায় অবস্থানরত বিবিসির সাংবাদিক কারেন অ্যালেন জানিয়েছেন, ম্যান্ডেলার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে এক ধরনের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
তাঁর সুস্থ হয়ে ফেরা নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
হাসপাতালে ম্যন্ডেলার পাশে থাকার জন্য তাঁর স্ত্রী পূর্বনির্ধারিত লন্ডন সফর বাতিল করেছেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু তাঁর বন্ধু ম্যান্ডেলার দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা সার্বক্ষণিক ম্যান্ডেলার ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন। চিকিত্সকদের অনুমোদন পেলেই হাসপাতালে ম্যান্ডেলাকে দেখতে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
ম্যান্ডেলা আগামী মাসে ৯৫ বছরে পা দিতে যাচ্ছেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছিলেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১০ দিন হাসপাতালে কাটানোর পর গত এপ্রিলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। হঠাত্ অবস্থার অবনতি হলে জোহানেসবার্গের বাসভবন থেকে তাঁকে গতকাল সকালে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সাত মাসের মধ্যে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো হাসপাতালে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা।
দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা ম্যান্ডেলাকে সেবা দিচ্ছেন। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে সম্ভাব্য সবকিছু করা হচ্ছে। ম্যান্ডেলার পরিবারের ঘনিষ্ঠ অন্তত একজন সদস্য হাসপাতালে তাঁর পাশে রয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার ও জাতির পক্ষ থেকে ম্যান্ডেলার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন প্রেসিডেন্ট জুমা। একই সঙ্গে ম্যান্ডেলা ও তাঁর পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়তা দিতে জনগণ ও গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির জনক হিসেবে খ্যাত ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনিই দেশটির প্রথম নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। এর আগে শ্বেতাঙ্গ শাসনামলে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগ করেন তিনি।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ম্যান্ডেলাকে ২০১০ সালের জুলাইয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা শুরুর আগে মাঠে দেখা যায়। এর পর থেকে তাঁকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
ম্যান্ডেলার যত স্বাস্থ্য সমস্যা
দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা গত কয়েক বছরে যক্ষ্মা, ফুসফুসের সংক্রমণ, প্রোস্টেটের সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতায় ভুগেছেন। তাঁর এসব অসুস্থতার বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:
ফুসফুসের সমস্যা: ১৯৮৮ সালের ঘটনা। বর্ণবাদী সরকারের আমল। ম্যান্ডেলা তখন কেপটাউন কারাগারে ২৭ বছরের দণ্ড ভোগ করছিলেন। দুর্বলতা ও কাশিতে আক্রান্ত হলে তাঁকে কেপটাউনের কাছে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে ম্যান্ডেলার শরীরে যক্ষ্মা ধরা পড়ে। চিকিত্সকেরা তাঁর বক্ষপিঞ্জর থেকে প্রায় দুই লিটার তরল পদার্থ বের করেন। চার মাস চিকিত্সার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে ফুসফুসের সংক্রমণজনিত সমস্যায় ম্যান্ডেলাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ডিসেম্বরে ম্যান্ডেলা আবার হাসপাতালে ভর্তি হন।
ফুসফুসের সংক্রমণের চিকিত্সা দেওয়া ছাড়াও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর পিত্তথলি থেকে পাথর অপসারণ করা হয়। তিন সপ্তাহ পর স্থিতিশীল অবস্থায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৭ মার্চ আবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
প্রোস্টেট: ১৯৮৫ সালে ম্যান্ডেলার প্রোস্টেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০০১ সালে প্রোস্টেট ক্যানসার চিকিত্সায় রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
পরের বছর তিনি পুরোপুরি ক্যানসারের ঝুঁকিমুক্ত বলে জানানো হয়।
পাকস্থলী: ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তলপেটে ব্যথা নিয়ে এক রাত হাসপাতালে ছিলেন ম্যান্ডেলা। তখন তাঁর ল্যাপারোস্কোপি পরীক্ষা করা হয়।
চোখ: রোবেন দ্বীপে নির্বাসনে থাকার সময় ম্যান্ডেলাকে পাথর ভাঙার কাজ করতে হতো। দিনের পর দিন পাথরের অতিক্ষুদ্র কণা তাঁর চোখে ঢোকে।
এতে তাঁর চোখে সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৯৪ সালে ম্যান্ডেলার চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।