আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় মাদিবার দেড় দিন

দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদের সিংহপুরুষ, বিশ্ব শান্তির অবতার, হতাশাগ্রস্ত মানুষের হৃদয়ের ছবি নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যু পৃথিবীর জন্য একটা বিরাট বেদনার সংবাদ। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার হীরার চাহিদা সারা পৃথিবীব্যাপী। কিন্তু যে হীরক দ্বিবালক নেলসন ম্যান্ডেলা মানবজাতির হৃদয়ে প্রজ্বলন করেছেন সেটা অঙ্কের হিসেবে মূল্যায়ন করা যাবে না। মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন ব্যক্তি মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে নিশ্চিতভাবে নেলসন ম্যান্ডেলা, কালো আফ্রিকানদের প্রিয় মাদিবার অবস্থানও থাকবে।

স্বাভাবিকভাবেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আমাদের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কর্তৃক। সেই আমন্ত্রণ উপলক্ষে আরও দুজন রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাদের একজন ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাত্র অল্পদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নেলসন ম্যান্ডেলাকে আমন্ত্রণ জানানোর। দুই নেতাই অর্থাৎ ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু দীর্ঘদিন নিজের দেশের শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন।

দুই নেতাই ছিলেন বিশাল হৃদয়ের অধিকারী। সব গ্লানিবোধের ঊধের্্ব উঠে মানুষকে ভালোবেসেছিলেন তারা। আবেগাপ্লুত বাংলাদেশ নেলসন ম্যান্ডেলাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। তিনি তার হৃদয় দিয়ে উপভোগ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নৈশভোজে যে হৃদয়স্পর্শী এবং আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছিলেন তা সবার মতো সেদিন আমাকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল।

সেদিনের তার ভাষণ ছিল বাংলাদেশের তথা বিশ্বের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য এক মূল্যবান দলিল। আমার যতদূর মনে পড়ে, সেই ভাষণের মূল বক্তব্য ছিল ব্যক্তির স্বার্থের ঊধের্্ব উঠে মেঘমুক্ত আকাশের মতো দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। তার সে বক্তব্য আজকের বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আমি মনে করি, নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যু একটি সময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাবে না। তার আদর্শ, চিন্তা-চেতনা, দর্শন, আবেগ যদি আমরা বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি তবেই নেলসন ম্যান্ডেলার স্মৃতি বিশ্বের মানুষের প্রতি অমর হয়ে থাকবে।

খুব সম্ভবত মাত্র দেড় দিনের মতো নেলসন ম্যান্ডেলা ঢাকায় ছিলেন। বয়স এবং স্বাস্থ্যের নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারুণ্যের উদ্যম নিয়ে তিনি সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে বিরাট ত্যাগ করতে হয় তার প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু ভবনে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদানই করেননি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কিন্তু অতীতের এসব গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিচারণের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী অথচ শান্তিকামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি নানা ব্যাপারে আলোচনা করেন।

বিশাল এই যোদ্ধাকে মনে হয়েছে তিনি যেন আরেকটা যুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এবং সেই যুদ্ধ দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে, সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে, মানবতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে। নানা আলোচনায় ফুটে ওঠে- রোবেন আইল্যান্ডে কারারুদ্ধ অবস্থায় তার ওপরে যারা শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করে তার ভালোবাসার আলিঙ্গন থেকে তিনি তাদেরকেও বঞ্চিত করেননি। সব হৃদয় দিয়ে তিনি বিশ্বাস করেছেন অন্যায়কে কঠিনভাবে ঘৃণা করতে হবে। কিন্তু তার থেকেও যেটা কঠিন অন্যায়কারী যারা তাদেরও আন্তরিক অনুশোচনার বাতাবরণ সৃষ্টি করতে হবে। মহাত্দা গান্ধী, মার্টিন লুথারকিংয়ের মতো তিনিও ছিলেন একজন শান্তির বংশীবাদক।

বাংলাদেশের বিরাট সম্ভাবনার কথা তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উচ্চারণ করেছেন এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছাবার জন্য তিনি সংযম এবং সমন্বয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। একজন অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে তিনি কূটনীতির ভাষায় কথা বলেননি। তিনি কথার ভেতরে মুনশিয়ানা আনেননি। তার কঠিন কথা তার হৃদয়ের অনূভূতি দিয়ে আবৃত করে রেখেছিলেন। তার মূল ম্যাসেস ছিল যে, বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হলে সহনশীল হতে হবে এবং ন্যায়নীতিবোধের প্রতি উদাসীন হলে চলবে না।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।