তিনি এক সুতোয় বেঁধে গেছেন নানা গোত্র-বর্ণে বিভক্ত একটি জাতিকে। সেই জাতি এক কাতারে সার বেঁধেছে তাঁর জন্য প্রার্থনায়। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্য গতকাল রোববার প্রার্থনা করেছে দেশটির মানুষ। তাদের ঢল নেমেছিল চার্চ-প্যাগোডা-সিনাগগ আর মসজিদ-মন্দিরসহ নিজ নিজ ধর্মের প্রার্থনালয়ে। অশ্রু ঝরেছে ম্যান্ডেলার আত্মার মঙ্গল কামনায়।
গত বৃহস্পতিবার তাদের প্রিয় নেতা ম্যান্ডেলাকে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী। ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে সমাহিত করার আগে ১০ দিন শোক-স্মরণ আর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব পালন করছে তাঁর দেশের মানুষ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে মূলত গতকাল থেকে। দিনটিকে ঘোষণা করা হয় ‘প্রার্থনা আর স্মরণ দিবস’ হিসেবে।
ম্যান্ডেলার জন্য শোক ও প্রার্থনার পাশাপাশি তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনকে স্মরণ করে নিজেদের মতো করে উৎসব করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা।
বলেছেন, ‘চলুন, আমরা সেই অবিসংবাদী বিপ্লবী নেতাকে স্মরণ করি, যিনি আমাদের সমাজ পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। চলুন, আমরা মাদিবার জন্য গাই। ’ মাদিবা ম্যান্ডেলার গোত্র নাম।
জুমা গতকাল প্রার্থনা করেছেন জোহানেসবার্গের শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকার একটি চার্চে। আর সাবেক প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি প্রার্থনা করেন অক্সফোর্ড শুল সিনাগগে।
পাঁচ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৯ সালে ম্যান্ডেলা ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন এমবেকি।
ধর্মীয় উপাসনালয়সহ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা আর ঘরে ঘরে গতকাল সবাই প্রার্থনা করেছে। মোমবাতি জ্বেলে আর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে প্রিয় নেতাকে।
আগের দুই দিনের মতো গতকালও মানুষের ঢল ছিল জোহানেসবার্গের হাফটন এলাকায় ম্যান্ডেলার বাড়ি এবং সোয়েটো এলাকার পুরোনো বাড়িতে। সবার হাতে ছিল মোমবাতি আর ফুলের তোড়া।
সোয়েটো একসময় ছিল শুধু কালো মানুষদের এলাকা। একসময় পুলিশের তাড়া খেয়ে সেখানকার রেগিনা মুন্ডি ক্যাথলিক চার্চের ভেতর আশ্রয় নিতেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সেখানে প্রার্থনার সময় যাজক সেবাস্তিয়ান রসোও ম্যান্ডেলাকে অভিহিত করেন ‘অন্ধকারের মাঝে আলোকবর্তিকা’ হিসেবে। প্রশংসা করেন তাঁর ‘ক্ষমা ও ঔদার্য’ গুণের।
ম্যান্ডেলাকে স্মরণ করে সোয়েটোর বাসিন্দা ৬০ বছর বয়স্ক ওলগা এমবেকি বলেন, ‘তিনি আমাদের জন্য লড়াই করেছেন।
এখন তাঁর বিশ্রামের সময়। ’
আর জোহানেসবার্গের যে বাড়িতে ম্যান্ডেলা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, সেই বাড়ির সামনে শনিবার রাতভর ছিল হাজার হাজার মানুষ। তারা কখনো মোমবাতি জ্বেলে হাতে হাত ধরে শ্রদ্ধায় মাথা অবনত করে ম্যান্ডেলার প্রতি। আর এর মধ্যে ছোট একটি দল গান ধরার পর পুরো জনতা গাইতে শুরু করে গলা ছেড়ে। তারা স্মরণ করে সেই মানুষটিকে, যিনি বদলে দিয়ে গেছেন তাঁর দেশ আর জাতিকে, উৎসাহিত করে গেছেন পুরো বিশ্বকে।
সমবেত সেই জনতার একজন বিক্রয়কর্মী খাবিল এমগানগামি বলেন, ‘আমার কাছে এটি শোকের দিন নয়, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হওয়ার দিন। ’
আগামীকাল মঙ্গলবার জোহানেসবার্গের একটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক চার প্রেসিডেন্টসহ বিশ্ব নেতারা। ইতিমধ্যেই প্রায় ৬০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় সেই স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারে প্রায় এক লাখ মানুষ।
এরপর আরও কয়েক দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৫ ডিসেম্বর সমাহিত করা হবে ম্যান্ডেলাকে। ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের পাহাড়ি গ্রাম কুনুতে মহাকাল ধরে বিশ্রাম নেবেন এ কালের মহানায়ক ম্যান্ডেলা। এই কুনুতেই জন্মেছিলেন তিনি, কেটেছিল তাঁর শৈশবের সুন্দর আর দুরন্ত দিনগুলো। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।