ভারতের দিল্লি রাজ্যে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (এএপি) অভূতপূর্ব সাফল্য ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ভরাডুবির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বলে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী মোটেও নাখোশ নন এএপির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ওপর; বরং এ ঘটনায় কেজরিওয়ালের কাছ থেকে তাঁর ছয়টি বিষয়ে পাঠ নেওয়ার আছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার হিন্দুস্থান টাইমসের এক প্রতিবেদনে রাহুলের বরাত দিয়ে এ কথা বলা হয়েছে। রাহুল মনে করেন, নিচের ছয়টি বিষয়ে শোধরালে তিনি রাজনীতিতে বিদ্যমান সংকট উতরে যেতে পারবেন।
রাজনীতি এনজিও নয়: রাজনীতিটা বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) চালানোর মতো বিষয় নয়।
কেজরিওয়াল এনজিও দিয়ে শুরু করে, নির্বাচনী রাজনীতি দিয়ে অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছেন। এনজিওকে রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করেন তিনি। এর প্রভাব এর মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কংগ্রেসের অনেক নেতা মনে করেন, রাহুল হয়তো এর ঠিক উল্টোটি করছেন। একটি রাজনৈতিক দলকে তিনি বরং এনজিওতে রূপান্তরিত করছেন।
অভিজ্ঞজনেরা মনে করেন, কেজরিওয়ালের উত্তরণ ও রাহুলের পিছিয়ে আসা—দুটি ক্ষেত্রেই সামাজিক হস্তক্ষেপের বিষয় রয়েছে। তবে নির্বাচনী রাজনীতির ভিন্ন একটি ধাঁচ রয়েছে।
জনতাকে মূল্য দেওয়া: জনতাকে মূল্য দিতে হবে। কারণ তারাই অন্য সব মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারে। কংগ্রেসের কাজের যে ধারা, এতে প্রায়ই দলটিকে নির্বাচনে লড়ার যন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।
রাহুল এ সমালোচনাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত রকমের চিন্তাভাবনা নেতিবাচক বলে ধরে নিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের ওপরে ও বাইরে যে রাজনীতির স্থান, তা তিনি ভালো করে বুঝতে পেরেছেন। এটা সত্য বলে বুঝতে পেরেছেন, যেকোনো তাত্পর্যপূর্ণ নির্বাচন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। আর জনতাকে উজ্জীবিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
ঝুঁকি নাও, সমাধান দাও: রাহুল গান্ধী প্রায়ই বলেন, ভারতের জনগণকেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। তিনি নিজেই জনগণের একজন। কিন্তু তিনি কখনো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেননি। অপর দিকে কেজরিওয়াল জনগণের সামনে সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, সমাধানের বিষয়ে অটলও থেকেছেন।
এটাই চায় জনতা। এই সুযোগে কেজরিওয়াল তাঁর সমাধান বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন।
দ্রুত বাস্তবায়ন: শেখার কোনো শেষ নেই। কিন্তু দ্রুত কাজ করাটাই জরুরি। ভুল হওয়ার ভয়ে কেজরিওয়াল থেমে থাকেননি; বরং ভুলগুলো স্বীকার করেছেন।
রাহুলকেও তাই করতে হবে।
যোগাযোগ জরুরি: আগ্রহী সবার সঙ্গেই সাক্ষাত্ করেন কেজরিওয়াল। তবে সবার দ্বারা প্রভাবিত হননি তিনি। দক্ষ নেতৃত্বের জন্য এ গুণটি থাকা জরুরি। কংগ্রেসসহ সব সাক্ষাত্প্রার্থীর জন্য সব সময় দরজাটা খোলা রাখতে হবে রাহুলকে।
কেজরিওয়াল না হওয়া: এএপির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে কেজরিওয়াল হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন রাহুল। কিন্তু এমনটা করা তাঁর মোটেও ঠিক হবে না।
৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় এএপি ২৮টি আসন পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ৩২ ও কংগ্রেস আটটি আসন। স্বতন্ত্র থেকে জিতেছেন দুজন।
সরকার গড়তে প্রয়োজন ৩৬ আসন। স্বতন্ত্র বিধায়কদের নিয়ে বিজেপির সরকার গড়ার সম্ভাবনাও নেই।
দীর্ঘ ১৫ বছর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকা শীলা দীক্ষিতকে নয়াদিল্লি কেন্দ্রে ২২ হাজার ভোটে পরাজিত করেন এএপির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
মাত্র নয় মাস আগে আন্না হাজারের আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেজরিওয়াল এএপি গড়ে দিল্লি বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচনের ফলাফল এটাই প্রমাণ করে, কংগ্রেস ও বিজেপির প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ।
দল দুটির দুর্নীতি ও পেশিশক্তির রাজনীতি থেকে মানুষ মুক্তি চায়। পরিবর্তনের জন্য তারা উন্মুখ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দিল্লি দিয়ে শুরু হলো। একসময় ভারতের পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারে এএপি। এমনকি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা দলটি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।