মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা একজন মানুষ
# কোনো এক শীতের সকালে,
কুয়াশা মোড়া সূর্যকে প্রশ্ন করেছিলাম------ভালোবাসা কি?
সূর্য বলেছিলো,আমার আলোয় ঝলসে উঠা একফোঁটা শিশির বিন্দুই ভালোবাসা ।
কোনো এক ব্যাথাভরা সন্ধ্যায়,
আমায় একজন প্রশ্ন করেছিলো------কষ্ট কি?
আমি বলেছিলাম,হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসে ভালোবাসার
বিনিময়ে অবহেলা পাওয়ার নামই কষ্ট ।
# তুই কি আমার দুঃখ হ'বি ?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নিচে কালো ছায়া
সেইখানে তুই রাত-বিরেতে স্পর্শ দিবি
তুই কি আমার দুঃখ হ'বি ?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হ'বি ?
মধ্যরাতে বেজে উঠা টেলিফোনের ধ্বনি হ'বি ?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর নির্জনতা
ভেঙে দিয়ে ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নাড়তে থাকা দরজাময় করা হ'বি
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হ'বি
তুই কি আমার শূন্য বুকে দীর্ঘশ্বাসের বকুল হ'বি ?
নরম হাতের ছোঁয়া হ'বি
একটুখানি কষ্ট দিবি
নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরা রোদন হ'বি
একটুখানি কষ্ট দিবি
প্রতীক্ষারী দীর্ঘ হলুদ বিকেলবেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হ'বি
একটুখানি কষ্ট দিবি
তুই কি একা আমার হ'বি
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হ'বি ?
# মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয় — প্রেম নয় — কোনো এক বোধ কাজ করে।
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতো ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়?
অবসাদ নাই তার? নাই তার শান্তির সময়?
কোনোদিন ঘুমাবে না? ধীরে শুয়ে থাকিবার স্বাদ
পাবে না কি? পাবে না আহ্লাদ
মানুষের মুখ দেখে কোনোদিন!
মানুষীর মুখ দেখে কোনোদিন!
শিশুদের মুখ দেখে কোনোদিন!
# এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ
আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি ?
শেষ বিকেলের সেই ঝুল বারান্দায়
তার মুখে পড়েছিল দুর্দান্ত সাহসী এক আলো
যেন এক টেলিগ্রাম, মুহূর্তে উন্মুক্ত করে নীরার সুষমা
চোখে ও ভুরুতে মেশা হাসি, নাকি অভ্রবিন্দু ?
তখন সে যুবতীকে খুকি বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়–
আমি ডান হাত তুলি, পুরুষ পাঞ্জার দিকে
মনে মনে বলি,
যোগ্য হও, যোগ্য হয়ে ওঠো–
ছুঁয়ে দিই নীরার চিবুক
এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ
আমি কি এ হাতে আর কোনোদিন পাপ করতে পারি ?
এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালোবাসি–
এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যে কি মানায় ?
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে পড়ে
ভীষণ জরুরী কথাটাই বলা হয়নি
লঘু মরালীর মতো নারীটিকে নিয়ে যাবে বিদেশী বাতাস
আকস্মিক ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যাবে সবগুলো সিঁড়ি
থমকে দাঁড়িয়ে আমি নীরার চোখের দিকে….
ভালোবাসা এক তীব্র অঙ্গীকার,
যেন মায়াপাশ সত্যবদ্ধ অভিমান–চোখ জ্বালা করে ওঠে,
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালোবাসি–
এই ওষ্ঠে আর
কোনো মিথ্যে কি মানায় ?
# যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মর” কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-
জাগবে হঠাৎ চমকে!
ভাববে বুঝি আমিই এসে
ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুজবে।
গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আসবে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই-“ সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’
আসবে ভেঙে কান্না!
প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে ফুল
গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই - থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না'ক আর সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
আসবে না ক’ আর সে!
প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার গাঙে আসবে জোয়ার,
দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
দুলবে তরী রঙ্গে,
প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
এক তরীতে ছিলেম সাথে,
এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
সখার কারা-বন্ধ!
বন্ধু তোমার হানবে হেলা
ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
বইতে প্রাণের শান- এ ভার
মরণ-সনে বুঝবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ফুটবে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায়
বাজবে আমার কাঁদনী-
চৈতী-রাতের চাঁদনী।
ঋতুর পরে ফির্বে ঋতু,
সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে,
জাগবে বুকে ক্রন্দন-
টুটবে যবে বন্ধন!
পড়বে মনে, নেই সে সাথে
বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা,
চাইবে আদর, মাগবে ছোঁওয়া,
আপনি যেচে চুমবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হানত,
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত
হ’য়ে শ্রান–
আসবে তখন পান’।
হয়ত তখন আমার কোলে
সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
চাপবে বুকে বাহু বেঁধে,
চরণ চুমে পূজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
# একটি পাখি রোজ আমার জানালায়
আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে।
কখনো দেয় শিস, বাড়ায় গলা তার;
আবার কখনোবা পাখাটা ঝাপটায়।
পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন,
দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু;
নদীর স্বপ্নের জলজ কণাগুলি
এখনো তাঁর ঠোটে হয়তো গচ্ছিত।
কাউকে নীড়ে তার এসেছে ফেলে বুঝি?
হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা।
তাই তো চোখ তার এমন গাঢ় নীল,
মেললে পাখা জাগে নীলের উৎসব।
যখন লিখি আমি টেবিলে ঝুঁকে আর
পড়তে বসি বই, তখন সেই পাখি
চকিতে দোল খায় আমার জানালায়-
খাতার পাতা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় খুশি।
আমার মৃত্যুর পরেও যদি সেই
সুনীল পাখি আসে আমার জানালায়,
আবার শিস দেয়, আমার বইখাতা
যদি সে ঠোকরায়, দিও না বাধা তাকে।
# তবু এই পৃথিবীর সব আলো একদিন নিভে গেলে পরে,
পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে যখন,
মানুষ র’বে না আর, র’বে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখনঃ
সেই মুখ আর আমি র’বো সেই স্বপ্নের ভিতরে।
# ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে
ওকে আমি কেমন করে যেতে বলি
ও কি কোনো ভদ্রতা মানবে না ?
মাঝে মাঝেই চোখ কেড়ে নেয়,
শিউড়ে ওঠে গা
ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে ।
দু'হাত দিয়ে আড়াল করা আলোর শিখাটুকু
যখন তখন কাঁপার মতন তুমি আমার গোপন
তার ভেতরেও ঈর্ষা আছে , রেফের মতন
তীক্ষ্ণ ফলা
ছেলেবেলার মতন জেদী
এদিক ওদিক তাকাই তবু মন তো মানে না
ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে ।
তোমায় আমি আদর করি , পায়ের কাছে লুটোই
সিংহাসনে বসিয়ে দিয়ে আগুন নিয়ে খেলি
তবু নিজের বুক পুড়ে যায়
বুক পুড়ে যায়
কেউ তা বোঝে না
ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।