posondo kori,kintu bortoman bd er rajnite neya hotas.
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জারি করা মৃত্যুদণ্ডাদেশ অবিলম্বে স্থগিত না করা হলে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার যদি ন্যায়নীতির তোয়াক্কা না করে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে, তবে বাংলদেশ এমন এক অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করবে,যা কোনোকালে কোনো জাতি দেখেনি। আর যদি রায়টি কার্যকর করা স্থগিত করা হয়, তবে সেটা হবে এই মর্মান্তিক প্রহসন অবসান হওয়ার সূচনা। মিসরের আল আরাবিয়া পত্রিকায় মঙ্গলবার ক্যাডম্যানের নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটি এর আগে সৌদি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছিল।
যুদ্ধাপরাধ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, প্রত্যার্পণ এবং মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্যাডম্যান বসনিয়া যুদ্ধাপরাধ চেম্বারের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আইন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন।
ক্যাডম্যান বলেন, বাংলাদেশ সম্ভবত একটি ভয়াবহ সঙ্কট থেকে মাত্র এক দিন দূরে রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী মহাসচিব আবদুল কাদের মোল্লা পেছনের দরজা দিয়ে তাড়াহুড়া করে আয়োজন করা ব্যবস্থায় ফাঁসির মুখে পড়তে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে মনে হচ্ছে, জাতিসঙ্ঘ দূত মঙ্গলবার দেশত্যাগ করার পরপরই ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
তিনি বলেন যে ‘মনে হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের চটকদার ও লজ্জাজনক ঘটনার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করছি। ’ এখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ‘বিচারের’ ছদ্মাবরণে বিরোধীদের গুঁড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম হাইজ্যাক করেছেন। আদালত থেকে মাসের পর মাস একের পর এক কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়েছে। আসামিপক্ষের এক সাক্ষীকে অপহরণ করা হয়েছে; বিচারক, প্রসিকিউটর ও আদালতবহির্ভূত ব্যক্তিদের যোগসাজসে পরিকল্পিত যোগাযোগের বিষয় ফাঁস হয়েছে।
তিনি বলেন, হাস্যকর একটি আদালতকে ‘আন্তর্জাতিক’ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে পরিচিতি করানোকে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা হতাশা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, আবদুল কাদের মোল্লাকে প্রথমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে আইন পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান করেন। কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার জন্যই বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে নতুন দায়দায়িত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আগের সময় থেকে কার্যকর করার আইন প্রণয়নের (রেট্রকটিভ) ফলে যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যদের বারংবারের দাবি হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়।
এটা সরকার এবং ট্রাইব্যুনাল উভয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা দেশে ও বিদেশে মারাত্মকভাবে ুণœ করে।
আবদুল কাদের মোল্লার মামলায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এই ট্রাইব্যুনাল পরিকল্পিত অবিচার করেছে। মাত্র একজন সাক্ষীর বক্তব্যের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে দুটি সামঞ্জস্যহীন বক্তব্যে সাক্ষীর অনুপস্থিত থাকার দাবি ওঠে। এর ফলে ওই সাক্ষী ঘটনার সময় উপস্থিত থাকার যে দাবি করেছেন তা অত্যন্ত সংশয়পূর্ণ প্রতীয়মান হয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য হলো, যে আদালতে অভিযোগের আলোকে প্রমাণ তৈরি করা হয়, সেখানে প্রসিকিউটর ও বিচারকেরা যে ন্যূনতম পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই এই সামান্য প্রমাণের অপব্যবহার করবেন, তাতে বিস্ময়ের অবকাশ থাকে কমই। এটাও জানা গেছে, কাদের মোল্লার বিচারে যে ব্যক্তি সাক্ষী দিয়েছেন এবং যার সাক্ষীর ভিত্তিতে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে, ওই ব্যক্তি কিন্তু আসল নন। মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে শিখিয়ে পড়িয়ে হাজির করেছে। তারপরও ট্রাইব্যুনাল ওই সাক্ষীর ভিত্তিতে কাদের মোল্লাকে ওই অভিযোগে নির্দোষ খালাস দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারকেরা (যাদের দুজনকে আসামিপক্ষ পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে অভিহিত করেছিল) তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
ক্যাডম্যান বলেন, ৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত রায় প্রদানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফাঁসি কার্যকর করার জন্য কাদের মোল্লাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। সাধারণত এসব মামলায় কিছু প্রক্রিয়া, বিশেষ করে জেল কোড অনুসরণ করা হয়। আর জেল কোডে বলা হয়েছে, রায়ের সত্যায়িত কপি সরবরাহ করার ২১ দিনের আগে রায় কার্যকর করা যায় না। অথচ ইতোমধ্যেই সরকার দলীয় সদস্যরা বলে বেড়াচ্ছেন যে অতি দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে, জাতিসঙ্ঘ দূত চলে যাওয়ামাত্র গোপনে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ক্যাডম্যান বলেন, এটা অবশ্যই অত্যন্ত অস্বাভাবিক বিষয়। তবে সম্ভবত বিস্ময়কর নয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সর্বজন স্বীকৃত আইনি ভাষ্যও উড়িয়ে দিয়েছে, নিজ স্বার্থে আবেগময় কলঙ্ক খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে সেগুলোর অপব্যবহার করেছে। তবে এর সবই নিষ্ফল চেষ্টা।
যথাযথ মানসম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল যেখানে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারত, সেখানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজে বিশাল ফাটল ধরিয়েছেন।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল এখন অবিলম্বে ফাঁসি কার্যকর করার জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছে। কাদের মোল্লা এবং তার পরিবার এখন অবশ্যই আশা করতে পারে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রায় কার্যকর করা বন্ধ করার আহ্বান জানাবে। কাদের মোল্লা বা তার পরিবার এছাড়া যা করতে পারে সেটা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা।
ক্যাডম্যান বলেন, আসুন আশা করি, খাদের কিনারে থাকা বাংলাদেশ কাণ্ডজ্ঞান ফিরে পাবে।
তবে তা না হলে আমরা এমন এক অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা প্রত্যক্ষ করব যা ইতোপূর্বে কোনো জাতি দেখেনি। তবে অনুরোধ, আহ্বানে কাজ হলে এবং রায় কার্যকর স্থগিত করা হলে সেটা হতে পারে একটি মর্মান্তিক প্রহসনের অবসান হওয়ার সূচনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।