২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয় বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি ফারুক রহমান ও সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিনের ফাঁসি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হানা দিয়ে আত্দীয়স্বজনসহ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর সাতজনের মধ্যে আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আবদুল মাজেদ বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে। দণ্ডিত অপরজন আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আত্দস্বীকৃত পাঁচ খুনির
ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার ক্ষণটির জন্য উন্মুখ ছিল জাতি। ইতিহাসের জঘন্যতম ও নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ৩৪ বছর পর ঘাতকদের দণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদ, শিল্পী, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
১৯ নভেম্বর ঐতিহাসিক এক রায়ে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ৩ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আবদুল গফুর আসামিদের মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তীতে সেটি কার্যকর করা হয়।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত হানা দিয়ে শিশুসন্তান রাসেল, স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ঘটনার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মামলা হয়। বিচারিক আদালত এ মামলায় ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিল বিভাগ ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার বিষয়টি নিয়েও অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে।
এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও সিদ্ধান্ত হয় জাতির পিতাকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধে আসামিকে প্রাণভিক্ষা দেওয়া যায় না।
রিভিউ আবেদন খারিজের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি কর্নেল (অব.) ফারুক রহমান রাষ্ট্রপতির কাছে ইংরেজিতে লেখা আবেদনে তিনটি কারণ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রথমত, তার অবর্তমানে তার বৃদ্ধ মা মাহমুদা রহমানকে দেখার কেউ নেই। দ্বিতীয়ত, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে কাজ করেছেন এবং তৃতীয়ত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য তিনি দুঃখিত।
কারা কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ওই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও সেটি নাকচ হয়ে যায়।
১৯৭৫ সালের ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯৯৬ সালে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। সেখানে আসামি করা হয় ২৪ জনকে। তখন থেকেই ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়। ১৯৯৮ সালে অপর আসামি বজলুল হুদাকে গ্রেফতার করে কনডেম সেলে আনা হয়। সর্বশেষ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পলাতক অপর খুনি একেএম মহিউদ্দিন ল্যান্সারকে আমেরিকা থেকে গ্রেফতার করে তাকেও ঢাকার এ কারাগারে রাখা হয়।
এরপর থেকেই তারা কারাগারের কনডেম সেলে ছিলেন। এর আগে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলায় ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
প্রথম রায় : ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
দ্বিতীয় রায় : নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত রায় দেন।
বিচারপতি এম রুহুল আমিন ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। খালাস দেন পাঁচ আসামিকে। অপর বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির সবার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
তৃতীয় রায় : এরপর ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। খালাস দেন তিনজনকে।
এই ১২ আসামির মধ্যে একজন মারা গেছেন, ছয়জন পলাতক রয়েছেন। অপর পাঁচজন কারাগারে আটক ছিলেন।
দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্ব তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।
চতুর্থ রায় : এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট আপিল শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওই বছরের ৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন। আপিল শুনানির জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন ৪ অক্টোবর পরবর্তী প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন।
আপিল বিভাগ গত ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন।
এরপর করা পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।