আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে শিশুরা তাদের পছন্দ-অপছন্দের ধাপগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড় হবে।
===ফয়সল সাইফ===
ধিক্কার বাংলাদেশের সরকারগুলোর দৃষ্টিকটু সব সিদ্ধান্তকে। নিজেদের অজ্ঞতায় বোধ হয়ে, প্রায়ই তাঁরা বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অথচ নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এই সংবিধানকেই ঢাল বানায়। সাম্প্রতিক সময়ে সংবিধানে নিজেদেরই প্রণীত নির্দিষ্ট কয়েকটি অনুচ্ছেদকে ঢাল বানিয়ে, তাঁরা ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য লজ্জাজনক পন্থা অবলম্বন করেছে।
ফলে এ নিয়ে দেশে যে অপ্রত্যাশিত অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার বেশির ভাগ দায়ই তাঁদের ঘাড়ে গিয়ে বর্তায়। অথচ- অন্যদিকে জনগণের বৈধ বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করার জন্য, অবৈধভাবে টক শো গুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ জন্য টিভি চ্যানেলগুলোকে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে।
গত কয়েকদিন আগে, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর টক শো অনুষ্টান ‘মুক্তবাক’ থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই।
আমাদের প্রচলিত ধারার বাইরে একদমই ব্যতিক্রমধর্মী একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। ভদ্রতা বজায় রেখে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারেন। তা ছাড়া নির্লোভ, নির্ভীক, সচেতন এবং বিজ্ঞ মানুষ। তাঁর এই সব গুণের জন্য খুব দ্রুতই তিনি ‘মুক্তবাক’কে প্রচুর দর্শক প্রিয় করে তুলেন। অথচ তাঁর সাথে যা করা হয়েছে, তা একটা মাত্র ঊদাহরণ।
গত কয়েকদিন ধরে, দর্শকপ্রিয় বিশেষ বিশেষ কিছু আলোচক’কে আর দেখছি না। এর ফলে আমার অন্তত টক শো দেখা বা শোনার আগ্রহ কমে গেছে। এটা কোনো নিরুদ্বেগের বিষয় নয়।
দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র ও সুশাসনের স্বার্থেই বাকস্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের অধিকার এবং ভিন্নমতাবলম্বী মানুষদের বৈচিত্রপূর্ণ অংশগ্রহণ কাম্য। এসবের বিরুদ্ধে গিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত নিন্দাজনক।
গত কিছুদিনে নির্বাচন নিয়ে যা যা হচ্ছে, তার প্রায় কোনোকিছুই বাংলাদেশের জনগণের কাম্য ছিল না। সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তা ছাড়া নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার গ্রহণ করেছে। অথচ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার চাইলেও তা কমিশন গ্রহণ না করার দ্বিমূখী নীতি গ্রহণ করেছে।
যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের দিনক্ষণ নিয়ে, সরকারের দায়িত্বশীল দুই প্রতিমন্ত্রী অসময়ে অতিকথনপ্রিয় না হলে- সেটা অপ্রত্যাশিতভাবে দুই দিন বিলম্বিত হত না।
যদিও তা কার্যকর করতে পারার স্বস্তি আছে।
সবশেষে, আমাদের বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্টানে নজিরবিহীনভাবে ইইউ রাষ্ট্রদূতেরা অংশ নেন নি। এটা নির্দিষ্টভাবে ঠিক কীসের আলামত- সম্ভবত এর কিছুটা অনুমান করতে আমাদের বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। সম্ভবত সরকারের লোকগুলোই এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অজ্ঞ। তাই তাঁরা ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না।
এই দুনিয়ায় একঘরে হয়ে বেশি দিন চলা যায় না। সম্মিলিতভাবে ইইউ আমাদের পোষাক শিল্পের বড় ক্রেতা। মার্কিন বাজারও তাই। আমাদের সরকারের তাচ্ছ্বিল্যের ফলে ভবিষ্যতে যদি ওই বাজারগুলো সংকোচিত হয়ে যায়, তাহলে শুধু ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আমাদের দেশের গরীব মানুষগুলো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলাকালীন সময়ে, দায়িত্বশীল জায়গা থেকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দরুণ সাধারণ মানুষের মত কথা বলে- পরিস্থিতিকে লেজেগুঁবরে করে ফেলায়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশটির সাথেও আমাদের সম্পর্ক নেতিবাচক।
এমতাবস্থায় দেশের অভ্যন্তরে সুশাসন এবং দক্ষ পররাষ্ট্রনীতিই এই অপ্রত্যাশিত সমস্যাগুলোর সমাধান। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশটির সাথে সম্পর্ক নেতিবাচক হওয়া সত্ত্বেও; যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করতে পারা এবং এটাকে টেনে নেওয়া সরকারের কৃতিত্ব। কিন্তু একই সাথে মনে রাখতে হবে, এটাই চূড়ান্ত সাফল্য নয়। এটা হয়তো ৪২-৪৩ বছর আগের সবচেয়ে বড় দগদগে ক্ষতটাকে শুকানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সুশাসন না থাকার ফলে, এমন আরো বহু ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে এ দেশের বহু পরিবারে।
এই কথাগুলো খুব দ্রুত আমাদের অতীতের স্বৈরতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর কানে পৌঁছেছিল এমন ঊদাহরণ নেই। এখনো যে পৌঁছবে সেই দূরাশা করি না। তবুও আমাদের কথা বলতে দেওয়া হোক। যেন আশা নিয়ে বাঁচতে পারি, এক সময় পৌঁছবে। তাই অনুরোধ, টক শো গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অসাংবিধানিক এবং অবৈধ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।