আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্যাখ তোরা, এইবার চেয়ে দ্যাখ !

বেড়ে ওঠার চেষ্টা করছি

বাজারে ''কুলসন '' নামের সেমাই পাওয়া যায়। এই সেমাই প্রথমবার যখন খেলাম আমার বেশ লাগলো । পাকিস্তানের নামে গুনগান গাওয়া শুরু করলাম। এমনিতেই তাদের ক্রিকেটের বেজায় ভক্ত ছিলাম। এর উপর আবার যোগ হয়েছিল সেমাই।

একদম সোনায় সোহাগা। ইন্ডিয়াকে দুই চোখে দেখতে পারতাম না। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলায়। শালার মালু হয়ে মুসলমানদের হারিয়ে দিল ! এই কষ্টে আমার ছোট্ট বুকে উথালপাথাল হয়ে যেত। আমাকে বুঝানো হত '' মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই।

'' আমি পাকিস্তানি ভাইদের এত ভক্ত ছিলাম যে রঙ কিনে দেওয়ালে লিখতাম '' পাকিস্তান "' । ছিঃ! লজ্জা ! অবুঝ ছোটবেলায় এমনটা করতাম বলে নিজেকে প্রবোধ দেবার চেষ্টা করি! তবুও লজ্জা পাই ! ভীষণ লজ্জা লাগে আমার ! আমার এক ক্লাসমেট আফ্রিদির জন্মদিনে তার ভালোবাসা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিল । আমি সেখানে গিয়ে মন্তব্য করলাম '' তোর লজ্জা লাগে না?'' সাথে সাথে দেখি আরেকজন কমেন্ট করেছে '' হেই , রেফাত ! আর ইউ রিটারড , একজন তার ভালোবাসা জানাচ্ছে আর তুমি তার স্ট্যাটাসে এই কমেন্ট করলা?'' আমি উত্তর দিলাম না। কারণ উত্তর দেবার জন্য সাথে কিছু গালিও খরচ করতে হত। এতই বিতৃষ্ণা ওদের প্রতি আমার , গালিও দিতে ইচ্ছে করে না তবুো আজ একটা গালি দেই '' নপ, আই এম নট রিটারড , বাট ইউ আর আ বাস্টার্ড ফর শিওর! অ্যাসহোল! '' নাগরিক ব্লগে লিখেছিলাম একটা লেখা।

নাম দিয়েছিলাম '' সরি পাকিস্তান তোরা সব শুয়োরের বাচ্চা। '' মাত্রাতরিক্ত গালিগালাজ থাকায় সামু( somewhere in blog) থেকে সেটা মুছে ফেলা হয়। সেখানে আমি লিখেছিলাম কিভাবে ক্রিকেটের মধ্যে দিয়ে আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তান প্রীতি। কি চরম রাজনীতি কাজ করছে এর মধ্যে। প্রায়ই কিছু পাকিস্তানি সমর্থক বলে '' এই প্রজন্মের দোষ কি ? এরা তো আর কিছু করে নি ।

'' আমি আজ তাদেরকে বলতে চাই । '' দেখ , ভালো করে দেখ । আজ এই পাকি নতুন প্রজন্ম নেমে এসেছে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে । শুয়োরকে পিটিয়ে যেমন ছাগল করা যায় না , পাকিস্তানি সব সময় পাকিস্তানিই হয়! এদের নতুন কিংবা পুরাতন প্রজন্ম বলে কিছু নেই ! '' আমি কিংবা আমরা আজ থেকে ১০ বছর আগে এমন দৃশ্য দেখি নি ! জাতীয় সঙ্গীত গাইছে আর টপটপ করে গাল বেয়ে পানি পড়ছে , এই দৃশ্য ১০ বছর আগেও বিরল ছিল কিন্তু এখন আমরা সবাই অশ্রু ঝরাই, অশ্রু যে শুধু প্রেমিক প্রেমিকার আগমন কিংবা তিরোধানে ফেলতে হয় না ; দেশের জন্যও ফেলতে হয়, এই জিনিসটি আমরা শিখে গিয়েছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারন করতে শিখেছি।

ঠিক ৭১ এ যেমনটি করেছিল। স্তনের স্তূপ, গলে পচে যাওয়া লাশের সারি, কিংবা শকুনে খাওয়া লাশ দেখে আমরা স্থির থাকতে পারি না, আমাদের রক্তে আগুন জ্বলে, হাত গুটিয়ে আমরা বসে থাকতে পারি না, কেউ লাঠি ধরি , রাজপথে নামি, কেউ বা কীবোর্ড চেপে ধরি শক্ত আঙ্গুলে। কিছু পাপ থাকে যার ক্ষমা নেই, কিছু কাজ থাকে যার রেশ থেকে যায় । এই পাপ এমনই পাকিস্তনিদের জন্য। আমার আর কিছু বলার নেই , জাফর ইকবাল স্যারের লেখা পড়ে আবেগে টগবগ করছি জ্বলছি, এই লোকগুলো এত চমৎকারভাবে লেখে কেন! এই লোকগুলো যেন একেকটা বাংলাদেশ ! এই লোকগুলো যেন আমাদের বাতিঘর! প্রিয় স্যার, আমিও আপনার মত বুঝতে শেখার কোনও পাকিস্তানি জিনিস ব্যাবহার করি নি , হ্যাঁ, পাকিস্তানি ব্র্যান্ডের কোনও আন্ডারওয়্যার হলে সেটা ভিন্ন কথা ! আমার তো কোন স্বজন মারা যায় নি , আমার তো কোন পরিবারের সদস্য মারা যায় নি ! তবে আমার কেন এমন লাগে , কেন এমন রক্তে বান ডেকে যায় ! প্রিয় স্যার, এটাই কি দেশপ্রেম ? এটাই কি আরেক ৭১ ?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।