আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে হিন্দুস্থানে পরিনত করার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন - পর্ব১



রবন্ধের শিরোনামটি দেখতে দৃষ্টিকটু মনে হলেও বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা আরও অনেক বেশী ভয়াবহ। কোটি কোটি মুসলমান শহীদ হওয়ার বিনিময়ে ভারতীয় মুসলমানরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বেচেঁ থাকার জন্য ১৯৪৭ সালে যে ভূখন্ডটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল তা কেড়ে নেয়ার জন্য ব্রাক্ষন্যবাদী ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী ১৯৪৮ সালেই জন্ম দিয়েছিল আওয়ামী লীগ নামক দলটি। পর্যায়ক্রমে উক্ত দলটির নেতৃত্ব থেকে ইসলামী চেতনা সম্পন্ন দূরদর্শী নেতৃবৃন্দকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তদস্থলে প্রতিস্থাপন করা হয় সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক রং হেডেড (পাগল) ঘোষিত শেখ হাসিনাকে এবং হিন্দুস্থানের জামাতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। (যে নিজে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছে আমি হিন্দু ও নই মুসলমান ও নই) এদের সহযোগী হিসাবে এ দলে প্রতিস্থাপন করা হয় অর্থ-নেতৃত্ব ও ক্ষমতালোভী অদূরদর্শী দেশসেরা খুনী, র্দুবৃত্ত ডাকাতদেরকে যারা জনগনের নিকট চাঁদাবাজী, মাস্তানী, টেন্ডারবাজী, দুর্নীতিবাজ, নেশাখোর, মাদক ব্যবসায়ী ও ধর্ষক হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরা ইতিমধ্যে দেশের বিচারালয় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত— র্দূবৃত্তায়ন সম্পন্ন করেছে এবং দেশের সকল সরকারী বেসরকারী গুরুত্বপূর্ন পদসমূহে মুসলমানদের অস্তিত্ব বিরোধী হিন্দুদেরকে পদায়ন করেছে।

ফলে বর্তমানে এ দেশটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসাবে টিকে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনচেতা নবাব সিরাজ যেভাবে তার সরকারের হিন্দু কর্মচারী, সেনাপতি ও হিন্দুদের আত্মীয় মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে পরাজিত হয়েছিল ঠিক তদ্রুপ এদেশের সরকারও হিন্দুস্থানী ষড়যন্ত্রের অসহায় শিকারে পরিণত হবে। উপরোক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রামান্য তথ্যাদি হল ঃ ১। পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের জয়লাভের মূল কারন মুসলিম নবাবদের বিরুদ্ধে এংলো হিন্দুর প্রচেষ্ঠা। নামকরা হিন্দু পরিবারের সংগে মীরজাফরের আত্মীয়তা ছিল।

এজন্য সিরাজ মীরজাফরকে তার অপকর্মের জন্য শাস্তি দিতে সক্ষম হয়নি। (সূত্র: বৃটিশ নীতি ও বাংলার মুসলমান ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, পৃ- ৭০)। ২। নবাব আলীবর্দী খান থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত নবাব সিরাজের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন পদগুলির দায়িত্বে ছিল হিন্দুরা। ঢাকার প্রাদেশিক দেওয়ান ছিল রাজবল্লভ।

বিহারের ১ম গভর্নর ছিল জানকীরাম, ২য় গভর্নর ছিল রাম নারায়ন। অর্থ বিভাগের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ছিল জগৎশেঠের, তার সহযোগী ছিল দেওয়ান চিনুরায়, বাবু বীরুদত্ত, কিরাতচাঁদ ও উমিচাঁদ। সেনাবাহিনীর প্রধান বিভাগের দায়িত্বে ছিল রায়দুর্লভ রাম, বাবু মানিক চাঁদ, রাজা নন্দকুমার ও মোহনলাল। এদের মধ্যে একজন ব্যতীত বাকী সবাই পলাশীর বিশ্বাসঘাতক হিসাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। পরবর্তী ইতিহাসে দেখা গেছে এদেশের ও ভারতের সকল হিন্দুরা পলাশীর বেনিফিসিয়ারী হয়েছে এবং সর্বস্ব হারিয়েছে মীরজাফর সহ সকল মুসলমানরা।

(সূত্র: জাতির উত্থান-পতন, সূত্র: এস,এম, নজরুল ইসলাম পৃ-৩০-৩১)। ৩। ২০০৭ সালের এপ্রিলে রায়বেরের্লি এক জনসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, “আমার পরিবারই পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। (সূত্র: ঞযব ওহফরধ উড়পঃৎরহব, গইও গঁহংযর চধমব- ১১১) ৪। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধী রাজনীতিতে একটি অবস্থান তৈরী করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জ্যোতি সেন গুপ্তের সান্নিধ্যে আসেন।

যিনি মনোরঞ্জন ধরসহ কতিপয় কংগ্রেস নেতার সঙ্গে মুজিবের পরিচয় করিয়ে দেন। মুজিব তাদের সাথে মিলে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য হাসিলে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন। (সূত্র: জ্যোতি সেন গুপ্ত, হিষ্টরী অফ ফ্রীডম মুভমেন্ট অব বাংলাদেশ, ১৯৪৭-৭৩, সাম ইনভলবমেন্ট)। ৫। ২০১২ সালের নভেম্বরে বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে ব্যর্থ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এমতাবস্তায়, প্রধানমন্ত্রীকে আস্বস্ত করার জন্য দিল্লী থেকে ২য় বার বার্তা পাঠিয়ে বলা হয় আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্ক জন্মগত, এর পরেই অন্যদের প্রসঙ্গ। (সূত্র: দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, তাং- ০৩/১১/২০১২ ইং) ৬। যে মুসলিম ঐক্য সর্বভারতীয় হিন্দু ও সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ শাসক গোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে পাকিস্তান হাসিল করেছিল সেই মুসলিম ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ ও ভারত লালিত কম্যূনিষ্ট পার্টি সমূহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিল। এ সংক্রান্ত তথ্য হল- ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনের সম্পূর্ন কাজটি সম্পাদন করে কমিউনিষ্ট পার্টি। প্রকাশ্য রাজনীতিতে কার্যতঃ নিষিদ্ধ এই পার্টি যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান ভুমিকা পালন করে।

বামধারার ছাত্র ইউনিয়ন, গনতন্ত্রী দল ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে থাকা বামরাই এতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তৎকালে হিন্দুস্থানে কমিউনিষ্টদের উপর দমন-পীড়ন অব্যহত থাকলেও দিল্লী পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিষ্টদের পৃষ্ঠপোষকতা করত শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য কমিউনিষ্ট নেতৃত্বের মুল কাঠামোয় হিন্দু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকার কারনে ভারতীয় সাহায্য তাদের জন্য অবারিত ছিল। (সূত্র: মোহাম্মদ হান্নান, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস, পৃ- ২৫)। # মুসলমানদের অস্তিত্ব বিরোধী হিন্দদেরকে পদায়ন করা। উপরোক্ত শিরোনামটি দৃশ্যতঃ খুবই সাম্প্রদায়িক মনোভাবপ্রসূত কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে দিবালোকের মত সত্য ঘটনা।

উপমহাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি হৃদয়ংগম করতে হলে হিন্দু মানসিকতার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে বুঝতে হবে, বিশেষ করে ব্রাক্ষন্যবাদকে ও ঞযব ওহফরধ উড়পঃৎরহব কে বুঝতে হবে না হয় বাংলাদেশের বর্তমান অযোগ্য, অদুরদর্শী ও অথর্ব রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবিদের ভাগ্য বরন করতে হবে এবং দেশ বারবার পলাশী বিপর্যয়ের সম্মখীন হবে। এতদসংক্রান্ত ঐতিহাসিক তথ্যাদি অতি সংক্ষেপে নিম্নরূপ ঃ ১। ১১৯৭ খ্রীঃ থেকে ১৫২৬ খ্রীঃ পর্যন্ত ভারতবর্ষের মুসলিম শাসন কাঠামোতে হিন্দু অংশ গ্রহন ছিল না। হিন্দুরা সম্মিলিতভাবে মুসলিম শাসন উৎখাতের চেষ্টা করত কিন্তু সক্ষম হতনা। এজন্য এসময়ে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে এক মুসলিম রাজবংশ থেকে অন্য মুসলিম রাজবংশের হাতে যেত কিন্তু অমুসলিমদের হাতে যাওয়ার প্রশ্নই উঠত না।

কিন্তু ১৫২৬ খ্রীঃ দিল্লীর সুলতান ইব্রাহীম লোদী পানিপথের যুদ্ধে মোগল শাসক বাবরের নিকটে পরাজিত হলে বাবর দিল্লীর সম্রাট পদে আসীন হন। বাবর নিজ সাম্রাজ্য স্থিরভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই ১৫২৭ সালে রাজপুতানা ও মধ্যভারতের ১২০ জন রাজা সমিল্লিতভাবে বাবরকে ধ্বংস করতে অগ্রসর হয়। খানুয়া নামক স্থানে সংগঠিত এ যুদ্ধে সম্মিলিত হিন্দু বাহিনী মাত্র ১০ হাজার মুসলিম সৈন্যের নিকট পরাজিত হয়। এর পর থেকেই হিন্দুরা তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনে। উক্ত কৌশল হল তারা মুসলমানদের বন্ধু ও সহযোগী সেজে নিজেদের মা বোন কন্যাদেরকে মুসলমান শাসকদেরকে “ভেট” দিয়ে বাদীভূত করে ভিতর থেকে মোগল শাসন ধ্বংসের নিরন্তর প্রয়াস গ্রহন করে।

এর প্রথম শিকার হয় সম্রাট আকবর। নাবালক সম্রাট আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁ নিহত হলে হিন্দুরা আকবরকে কণ্যা দান করে এবং পর্যায়ক্রমে বংশানুক্রমিকভাবে মোগল হেরেমে কন্যা সরবরাহ অব্যাহত রাখে। রাজা মানসিংহের ফুফী জয়পুরী বেগমকে আকবরকে প্রদানের মাধ্যমে জয়পূরী বেগমের পিতা, ভাই ও ভাইপো বংশানুক্রমিকভাবে মোগল সেনাপতির পদ লাভ করে। বিকালীর ও জয়সালমীরের হিন্দু রাজারাও আকবরকে কন্যা দান করে। রাজপুত্র জাহাঙ্গীর পায় মানসিংহের বোনকে, জাহাঙ্গীরের ছেলে খসরু লাভ করে মানসিংহের কন্যা।

এখন থেকে মোগল অন্তপুরে এসব হিন্দু কর্মকর্তা কর্মচারীরা ক্ষমতার পালাবদলে ভুমিকা রাখতে শুরু করে এবং প্রত্যেক পট পরিবর্তনে ভুুমিকা রাখার চেষ্টা করে। সর্বশেষ সম্রাট শাহজাহানের চারপুত্রের মধ্যে সংঘঠিত ক্ষমতার লড়াইটাও ছিল সেনাপতি জয়সিংহের চাণক্যনীতির ফসল। সে আলাদাভাবে প্রত্যেক রাজপুত্রকে একের বিরুদ্ধে অন্যকে যুদ্ধে লিপ্ত করায় যাতে মুসলিম শক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। হিন্দু আত্মীয় স্বজন ও অমাত্যদেরকে সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে পদায়ন করার পরও উক্ত হিন্দুদের মানসিকতা ছিল মুসলিম বিদ্বেষ পরিপূর্ণ। একটি উদাহরন হল- “ মেবারের রাজা সংগ্রামসিংহ, তার পুত্র উদয় সিংহ এবং তার পুত্র প্রতাপ সিংহ বংশানুক্রমিকভাবে আকবরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত ছিলেন।

তারা কেউই আকবরকে কন্যাদান পূর্বক বশ্যতা স্বীকার করেননি। দীর্ঘ যুদ্ধে পর্যুদস্থ উদয়সিংহ এক পর্যায়ে আকবরের নিকট সম্মতিসুচক পত্র লিখলে (উক্ত পত্র আকবরের হাতে যাওয়ার পূর্বেই) আকবরের সভাসদ ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় (শাহজাদা জাহাঙ্গীরের শ্বশুর, বিবানীরের রাজা রায় সিংহের কনিষ্ঠ ভ্রাতা) পৃথ্বিরাজ এক গোপন পত্রে প্রতাপ সিংহকে লিখেন, “আমরা রাজপুতরা আকবরের অধীনতা স্বীকার করে এবং কন্যা দিয়ে অধঃপতিত হলেও আপনার জন্য গর্ব করি। একদিন সম্রাট আকবরকে মরতেই হবে। তখন আমাদের দেশে খাটি রাজপুত বীজ বপনের জন্য আমরা আপনার নিকটেই উপস্থিত হব। রাজপুত জাতি আপনার দিকে চেয়ে আছে।

” এই চিঠি পেয়ে উদয় সিংহ আকবরের বশ্যতা স্বীকারে বিরত হয়”। (সুত্র: জাতির উত্থান-পতন, সূত্র: এস,এম, নজরুল ইসলাম, পৃ- ২৭)। ২। হিন্দুদেরকে উচ্চপদে আসীন করার খেসারত দিয়েছিল বাংলার শ্রেষ্ঠ শাসকগোষ্ঠী ইলিয়াসশাহী রাজবংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান গিয়াসুদ্দীন আজম শাহ। তার অনুগ্রহ ভাজন কর্মচারী রাজা গনেশ প্রসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এদেশে হিন্দু শাসন কায়েম করে রাষ্ট্রীয় ভাবে মুসলিম নিধনে লিপ্ত হয়েছিল।

সে সকল মুসলিম ধর্মনেতাদেরকে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছিল এবং মুসলিম মক্তব, মসজিদ ও জনপদগুলি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। জৌনপুরের শাসক ইব্রাহীম সার্কী হযরত নূর কুতুবুল আলমের আহবানে বাংলায় আগমন করে হস্তক্ষেপ না করলে বাংলা তখনো মুসলিম শুন্য হয়ে যেত। ৩। ভারতীয় হিন্দুদের বর্তমান পূজনীয় বীর মারাঠা দস্যু সর্দার শিবাজী। আধুনিক হিন্দুমানস অগণিত নরহত্যাকারী দস্যু শিবাজীকে দেবতা হিসাবে পূজা করে, কেননা মুসলমান জনপদ বেছে বেছে লুন্ঠন করা, হত্যা করা ছিল শিবাজীর আদর্শ এবং শিবাজী ভারতের মোগল শাসন উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে গোপনে চুক্তি করেছিল।

এ সংক্রান্ত তথ্য হল- “১৬৬৮ সালে ইংল্যান্ডের রাজা ২য় চার্লস প্রচুর পরিমান ঋন নিয়ে বোম্বাই উপদ্বীপটি হস্তান্তর করে দেন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নিকট। এরপর কোম্পানীর সদর দপ্তর স্থাপিত হয় বোম্বাইতে। ১৬৭৪ সালে এই সদর দপ্তর থেকেই মিষ্টার ওকসিনডেনকে এক গোপন দৌত্যকার্যে পাঠানো হয় দুর্গম “রাহিরী দূর্গে”, সিবাজীর রাজ্যাভিষেক বার্ষিকীতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে সেখানে স্বাক্ষরিত হয় মারাঠা দস্যু নেতা সিবাজী ও ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর মধ্যে এক গোপন ঐতিহাসিক চুক্তি। চুক্তি মোতাবেক ভারতবর্ষে মোগল শাসন অবসান ঘটানোর সংগ্রামে মারাঠা শক্তি পাবে কোম্পানীর সাহায্য, আর বিনিময়ে কোম্পানী এদেশে ভোগ করবে অবাধ বাণিজ্যের অধিকার। ” (সূত্র: ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত, আসকার ইবনে সাইখ, পৃ- ৫৪)।

এরই ধারাবাহিকতায় আসে পলাশী এবং বর্তমান হিন্দু মানসকিতা, রবীন্দ্রনাথ সহ সকল হিন্দুই সিবাজীর প্রসংশায় পঞ্চমুখ। সিবাজী বর্তমান হিন্দুদের দেবতা। ৪। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময়কার হিন্দু মানসিকতা সম্পর্কে ২৮/০৯/১৯৪৭ ইং সালে লিখিত এ চিঠিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীকে লিখেন, “আমি নিঃসংশয় দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, পাকিস্তান ডোমিনিয়ন যাতে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য বর্তমান ভারতীয় মন্ত্রীসভা আপোষহীনভাবে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে বদ্ধপরিকর। .............. ১৫ই আগষ্ঠ ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে নতুন ভারতের প্রতিনিধিরা স্বরূপ প্রকাশে বিরত ছিলেন এবং সাধারণভাবে যুক্তি ও সহযোগীতার ভাব দেখিয়েছেন।

.............. ১৫ ই আগষ্টের পর অবস্থার অবনতি হয়ে চলেছে। ভারতীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রীগণ, বেসামরিক কর্মচারীরা এবং অন্যান্যরা সামরিক বাহিনীর কাজে অবিরাম বাধা দিয়ে চলেছে। ভারতীয় নেতৃবৃন্দ এটা পেরেছেন মাউন্ট ব্যাটেনের সাহসে। মাউন্ট ব্যাটেন এটা করেছেন ভবিষ্যৎ অখন্ড ভারতের বুনিয়াদ রচনার জন্য। (সূত্র: মাউন্ট ব্যাটেন, জিগলার, পৃ- ৪০৮)।

৫। ১৯৪৭ সালে প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি, কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সকল নির্বাচিত হিন্দু সদস্য অখন্ড স্বাধীন বাংলার বিরুদ্ধে ও বাংলার ভারত ভুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। অথচ এরাই ১৯০৬ সালের বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ঢাকায় প্রাদেশিক রাজধানী স্থাপনের তীব্র বিরোধীতা করে রক্তক্ষয়ী লড়াই করেছিল। ৬। ১৮৮২ সালে পৌরসভাগুলিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের সিদ্ধান্তে সর্বভারতীয় হিন্দুরা বিরোধীতা করেছে।

৭। ১৯০৯ সালে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে প্রদত্ত মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার তীব্র বিরোধীতা করেছিল সকল শ্রেণীর ভারতীয় হিন্দুরা। ৮। ১৯১৯ সালের মন্টেগু চেমস্ ফোর্ড আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলি স্বায়ত্বশাসন লাভের দিকে এগিয়ে যায়। এতে হিন্দুরা দেখল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রদেশে মুসলমানরা ক্ষমতাসীন হবার সুযোগ পাবে।

তখনি শুরু হল গান্ধীর নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করা হল ভয়াবহ হিন্দু- মুসলিম দাঙ্গা, যাতে অগনিত নিরীহ মানুষ আহত-নিহত-পঙ্গু হল। ৯। বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদন- বাঙ্গালী হিন্দু নেতা ও কংগ্রেস নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস উপলদ্ধি করলেন যে, হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানদের অধিকারসমূহ অস্বীকার করা ও বঞ্চিত করার কারনেই বাংলায় বার বার অশান্তির আগুন জ্বলে উঠছে। এ অবস্থা নিরসনের জন্য তিনি ১৯২৩ সালে সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মিলনীতে একটি হিন্দু মুসলিম চুক্তি সম্পাদন করেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন জে,এম,সেন গুপ্ত, শরৎবসু, জে,এম, দাস গুপ্ত, ডা. বিধানচন্দ্র রায় প্রমুখ হিন্দু নেতৃবৃন্দ এবং স্যার আবদুর রহীম, মৌলভী আবদুল করিম, মৌলভী মুজিবুর রহমান, মাওলানা আকরম খাঁ, মাওলানা মনীরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমূখ মুসলিম নেতৃবৃন্দ।

এই চুক্তির শর্তগুলি ছিল ঃ (ক) স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান ও সংখ্যা লঘিষ্ঠ হিন্দু প্রতিনিধির সংখ্যা জনসংখ্যা অনুসারে শতকরা ৬০ ভাগ এবং ৪০ ভাগ নির্দিষ্ট থাকবে। (খ) ব্যবস্থাপক সভায় জনসংখ্যা অনুপাতে সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। প্রতিটি সম্প্রদায় স্বতন্ত্রভাবে তাদের সদস্য নির্বাচিত করবে। (গ) সামগ্রিকভাবে সরকারী চাকুরীতে ৫৫% মুসলমান নিয়োগ করা হবে এবং যতদিন পর্যন্ত মুসলমানদের সংখ্যা জনসংখ্যা অনুপাতে না পৌঁছে ততদিন পর্যন্ত ৮৮% চাকুরী মুসলমানরা পাবে। (ঘ) মসজিদের সামনে বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ থাকবে।

(ঙ) ঈদের সময় মুসলমানগণ বিনা বাঁধায় গরু কোরবানীর সুযোগ পাবে। (চ) এসব নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি থাকবে যার অর্ধেক সদস্য থাকবেন হিন্দু এবং অর্ধেক সদস্য হবে মুসলমান। উপরোক্ত চুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ১৯২৩ সালে বাংলার মুসলমানরা কিরূপ বঞ্চনা, বৈষম্য ও লাঞ্ছনার শিকার ছিলেন। চুক্তির ধারাগুলিই বলে দিচ্ছে সরকারী বেসরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবস্থান কোথায় ছিল? মুসলমানরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম-কর্ম পালনে সক্ষম ছিল না। হিন্দুরা পশু কুরবানীতে বাঁধা দিত এবং মসজিদের সামনে বাধ্য বাজনা বাজিয়ে মুসলমানদের নামাজ আদায়ে বাঁধা দিত।

এই চুক্তির কথা প্রকাশ হওয়ার পর সমগ্র বাংলার হিন্দুরা এবং সর্বভারতীয় হিন্দু নেতৃবৃন্দ গান্ধীর নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালো এবং চিত্তরঞ্জন দাস ও তার হিন্দু সহযোগীরা নিজ জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সকল হিন্দু নেতা তাদেরকে জাতীয় বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত করল এবং ২২ মে ১৯২৬ সালে (নেতাজী) সুভাষ বাবুর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কৃষ্ণনগর কংগ্রেস সম্মিলনীতে বেঙ্গল-প্যাকট বাতিল করা হল। মুসলমানদেরকে ন্যায্য অধিকার প্রদানের ব্যাপারে এই হল বাংলার ও সর্বভারতীয় হিন্দু নেতৃবৃন্দের মানসিকতা। ১০। বঙ্গীয় প্রজাসত্ব আইন- জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের ব্যাপারে অনুষ্ঠিত ১৯২৮ সালের ভোটাভুটিতে সকল হিন্দু সদস্যরা জমিদারদের পক্ষে ভোট দিল এবং সকল মুসলমান সদস্যবৃন্দ প্রজার পক্ষে ভোট প্রদান করে।

১১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ল প্রতিষ্ঠায় বিরোধীতা করা- রবীন্দ্রনাথ সহ সকল বাঙ্গালী হিন্দু নেতা ও বুদ্ধিজীবি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চরম বিরোধীতা করে। এমনকি ঢাকার হিন্দুরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ছিল। ২টি উদাহরন দিচ্ছি- (ক) তাহলে কি রবীন্দ্রনাথ চাননি যে, তার জমিদারীর অন্তুর্ভুক্ত মুসলমান কৃষক ও শ্রমিক সন্তান এবং অনুন্নতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো পেয়ে ধন্য হোক। ........ বললে আরো লজ্জা হয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আশুতোষ মুখার্জীর (রবীন্দ্রনাথের ভাইঝি জামাতা) নেতৃত্বে সেই সময়কার ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করার জন্য ১৮ বার স্মারকলিপি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।

নীচতা এত নীচে নেমেছিল যে, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদ্রুপ করে বলতেন মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়। ( সূত্র: জীবনের স্মৃতিদ্বীপে: ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার)। (খ) ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। কারন তিনি ছিলেন জমিদার।

তিনি মুসলমান প্রজাদের মনে করতেন গৃহপালিত পশু। (নীরব চন্দ্র চৌধুরী, দি অটোবায়োগ্রাফী অফ আননোন ইন্ডিয়া)। চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.