আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেরে যাননি যুবরাজ

১৯৭৫ সালে আমার মাধ্যমেই সে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেয়। যুবরাজের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একাধারে পিতার, বন্ধুর ও ছোটভাইয়ের মতো। এই তিন সম্পর্কেই আমি ওর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। আমরা দিনে অন্তত দু-তিনবার ফোনে কথা বলতাম।
তার মনোবল দেখে আমি বিস্মিত হই।

যখন অনেক ডাক্তার দেখানোর পর বোঝা গেল যে ওকে এই রোগ নিয়েই থাকতে হবে। তখনও ও হতাশ হয়নি।
খালেদ খান সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ট্রেজারার পদে নিয়োগ পেয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল তার হাত ধরে, নাটকের ক্লাসও শুরু করেছিল। হুইল চেয়ারে বসে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত।

অর্থাৎ জীবনে হার কাকে বলে জানত না যুবরাজ।
আমি আরও বিস্মিত হলাম তার প্রয়াণের পরে-- যখন দেখলাম দীর্ঘদিন নাটকে ছিল না, তারপরও এত লোক তাকে দেখতে এসেছেন!
মৃত্যু হয়তো এত শীঘ্র আসত না, যদি সে যানজটে আটকে না পড়ত।
ব্যক্তিজীবনে ও দারুণ রসিক ছিল। আমাদের গ্রিনরুম সবসময় মাতিয়ে রাখত। যুবরাজ ছিল জীবনের প্রতি নির্মোহ, লোভহীন।

তার দেশপ্রেম ছিল অগাধ। ওর নিজস্ব একটা দার্শনিক চিন্তা ছিল। রবীন্দ্রনাথ, টলস্টয়, শেক্সপিয়র পড়ত।
বাচনভঙ্গি ছিল অপূর্ব। যেটা নিয়ে বড় বড় অভিনেতারা নিরন্তর সাধনা করে গেছেন।

উচ্চারণ ছিল অসাধারণ। শম্ভু মিত্র, স্যার লরেন্স যেটা করতেন। সেই চেষ্টাটাই সে করত। কলকাতায় অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল।   
বাংলাভাষার প্রতি তার প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসা ছিল।


মঞ্চে গান যে সংলাপ হয়ে যায়, সেটা করতে পারত খালেদ খান। তাকেই একমাত্র দেখেছি, যে কিনা মঞ্চের গানকে সংলাপে পরিণত করতে পারত। গান দিয়েও যে কথা বলা যায়, সেটা প্রমাণ করতে পেরেছে যুবরাজ।


তার অভিনয় ছিল দর্শনীয়। টিভিতেও তার অভিনয় প্রশংসার যোগ্য।

রক্তকরবীতে আমি ওর পাশে অভিনয় করতে গিয়ে প্রায়শই নিজের সংলাপ ভুলে যেতাম।
যখন আমি নির্দেশনা দিতাম, অনেককেই যুবরাজের কাছে শিখে নিতে বলতাম। আমার চেয়েও ও ভালো বলতে পারত, অনেককেই আমি ওর কাছে পাঠিয়েছি কথা বলা শেখার জন্য।
মাসদেড়েক আগেও রক্তকরবী করার সময় গ্রিনরুমে এসেছিল। তার কথা শুনে ছেলেমেয়েরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যেত।

ও পাঁচ-ছয় বছর নাটক থেকে বিযুক্ত ছিল। তবুও তাকে কেউ ভোলেনি।
আমরা তাকে ভুলতে পারব না। আমি ওকে কোনোদিন ভুলতে পারব না। ওর সঙ্গে কথা বলাটাই আমার জন্য লোভনীয় ছিল।


যুবরাজ এমন একজন মানুষ, যে নাকি আরও দশবছর হুইল চেয়ারে থাকলেও হাত দুটি মানুষের জন্য ভরে রাখত।


ওর স্ত্রী মিতা হক নিজের নামেই খ্যাত আর ওর মেয়ে জয়িতার গান আমি শুনেছি। ও ভালো গায়। বাবার গুণ পেয়েছে। শোক সামলে নিতে ওদের সময় লাগবে।

ওদের জন্য আমার শুভ কামনা সবসময় থাকবে।
আমরা ২৫ ডিসেম্বর যুবরাজকে উৎসর্গ করে রক্তকরবী মঞ্চস্থ করব। তাকে আরও বেশি করে পাওয়ার জন্যই আমরা রক্তকরবী করব। তাকে ছাড়া আমার জীবনে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আমি শুধু এটিই বলব, আমার ব্যথার আড়ালে ও জেগে থাক।


অনুলিখন: মলয় গাঙ্গুলী

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।