আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্ঞান ভিত্তিক আন্দোলনে চাই জ্ঞান ভিত্তিক সংগঠন



জ্ঞানভিত্তিক সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো ৩টি ভিন্ন স্তরের সমন্বয়ে হয়। ১. আমলাতান্ত্রিক স্তর ২.প্রকল্প দলীয় স্তর ৩.জ্ঞানগত স্তর। উদ্দেশ্যগত ভিন্নতার কারণে নলেজ ওয়াকারের ২টি পৃথক ধরণ থাকে। ১.অনুমোদিত বা অনুমতিপ্রাপ্ত-নলেজ ওয়াকাররা কি করবে এটা এমন ব্যাপার নয় যে তারা সব করবে, তারা নিজেরা অন্যদের কাছ থেকে কিছু নিবে অথবা অন্যদেরকে কিছু দিবে। ২.বিধি নিশেধ আরোপিত বা নিষিদ্ধ।

নলেজ ওয়াকার হবার জন্যে উচ্চশিক্ষিত, উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হয়; সেকেন্ডারি শিক্ষা মোটেই যথেষ্ট নয়। নলেজ ওয়াকারকে জ্ঞান তৈরির প্রক্রিয়ায় ৪টি মূল সম্পদের ব্যবহার করতে হয়-১.জ্ঞান ২.সম্পক ৩.আবেগীয় ৪.সময় সম্পদ। জ্ঞানের রুপান্তরের ২টি ধরণ রয়েছে;১. নীরবে সম্পাদিত ২. স্পষ্টভাবে সম্পাদিত। জ্ঞান সৃষ্টি, আবিষ্কার,জ্ঞানের উন্নতি সাধনে কাযকর ভুমিকা রাখে যোগাযোগ,বিশ্বাস,স্বাধীনতাকে সহায়তা করার মত সুস্থ পরিবেশ।

সাংগঠনিক কাঠামো ও স্তরায়নের কারণে পদোন্নতির ক্রমধারায় উচুঁ স্তরে থাকাদের তোষামোদ, নেতৃত্বদের স্বরের সাথে অধীনস্ত বা অধ:স্তনদের সামঞ্জস্যপূণ স্বর দেখা যায়।

সংগঠনে মানের ক্রমস্তর থাকবে তবে প্রকল্প দলীয় স্তর, জ্ঞানগত স্তর ও আমলাতান্ত্রিক স্তরের একটি সমন্বয় হবে। পরিচালকবগের ভুমিকা হচ্ছে, সংগঠনের ভিশন ও কৌশল ঠিক করে তার উন্নতীতে সহায়তা করা এবং জ্ঞান পরিবতনের প্রক্রিয়ার সাথে আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগতভাবে যুক্তদের অবস্থার সাথে সমন্বয় করা। তথ্য আদান প্রদানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং তত্ত্বগত উন্নয়ন, জ্ঞান উৎপাদন, জ্ঞান স্থানান্তরের সাথে জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবানদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও জ্ঞানের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে উপযুক্ত প্রচার- প্রসার বাড়ানো তথা বিশ্বব্যাংকের নলেজ ব্যাংক প্রকল্পের ধরণে কাযক্রমকে দ্রুত বধনশীল করা খুব গুরুত্বপূণ।

জ্ঞানভিত্তিক সংগঠন মানেই হচ্ছে এমন একটি সংগঠন যেখানে বুদ্ধিমত্তা ও সফলতার সাথে সাংগঠনিক পরিসরে শিক্ষা আদান-প্রদান এবং জ্ঞান সৃষ্টি-সংগ্রহ-বিতরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। সংগঠনের স্বকীয়তা বা স্বতন্ত্রতা অক্ষূণ্ন রাখার স্বাথে সংগঠনের নিজস্ব জ্ঞানকে ব্যবহার করে।

সংশ্লিষ্টদের মনে-চিন্তায় নিরবে সম্পাদিত কাজ এবং কমস্থলের কাযক্রম-কমপদ্ধতির আলোকে বিভিন্ন কমতৎপরতা-কাজ সম্পাদন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন-অত্যন্ত গুরুত্বপূণ। সংগঠনের নিজস্ব সংস্কৃতি থাকতে হবে এবং সংস্কৃতি তৈরি করে তা চচার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় উপযুক্ত নিয়ম নীতি গ্রহণ ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণটা জরুরী। উধ্বতনদের খেয়াল রাখতে হবে-আবিষ্কার বা উদ্ভাবনে এবং পরীক্ষণ বা অনুশীলনে যাতে ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় থাকে।

একটি সংগঠন পরিচিত হয় সংগঠনটি কোন ধরনের কাজ কোন প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করে তার উপর। একটি সংগঠনের করণীয় হচ্ছে তা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা তথা নিধারিত কাযক্রম চালিয়ে যাওয়া।

মানুষকে কেন্দ্র করেই যেহেতু সংগঠন সেহেতু সংগঠনের উদ্দেশ্য হতে হবে জনমানুষকে বেশি কাযকর-কমক্ষম তথা শক্তিশালী করা। যেই সব বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে একটি সংগঠনকে মূল্যায়ন করা হয় তা হচ্ছে-১.সংশ্লিষ্ট মানব সম্পদ ২. উৎপাদিত ও ব্যবহারিত জ্ঞান ৩. সাংগঠনিক সংস্কৃতি ৪. সংগঠনের কাঠামো ৫. সংগঠনের সীমানার ভেতরে ও বাইরে দ্রুত উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য কাযকর ব্যবস্থা, জ্ঞানগত পরিবতনের জন্য সুসংহত ও সুবিন্যস্ত স্থায়ী পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা। নলেজ ওয়াকার হচ্ছে সংগঠনের অনেক বেশি গুরুত্বপূণ ও মূল্যবান সম্পদ। জ্ঞানভিত্তিক সংগঠনের প্রকৃত রুপটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে নলেজ ওয়াকারদের জ্ঞানগত দক্ষতা হচ্ছে অতীব প্রয়োজনীয়।

নলেজ ওয়াকারদের থাকতে হবে জ্ঞানগত দক্ষতা।

মৌলিক জ্ঞান,পেশাগত জ্ঞান,প্রযুক্তিগত জ্ঞান,তথ্যগত সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা এবং উচ্চতর চিন্তা করার যোগ্যতা, ধারণাগত জ্ঞানে পরিপক্কতা-থাকতে হবে। এজন্যে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রী যথেষ্ট নয়; জীবন ব্যাপী শিখতে হবে। নতুন জ্ঞানের উৎপত্তি হলেই পুরাতন জ্ঞানের পরিবতন ঘটেনা-বিকল্প ব্যবহারই গ্রহণযোগ্য করে তোলে। জ্ঞান তৈরির অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমে জ্ঞানবুদ্ধিগত পরিবতন ঘটে ও চিন্তা-চেতনার বিকাশ সাধিত হয়।

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় জ্ঞান সৃষ্টির পদ্ধতি হচ্ছে-১.শিক্ষানবীশি ২.অভিজ্ঞতা বিনিময় ৩.প্রশিক্ষণ নেয়া ৩.যৌথ উদ্যোগ ৪.সামষ্টিক কাযক্রম ৫. অগ্রসর ও অভিজ্ঞদের নৈকট্য লাভ বা সাহাচয ৬. কোন প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ততা ৭.কমস্থলের বাইরে অনানুষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক বৈঠকাদিসমূহ ৮.ছকবাঁধা নিধারিত কাজের বাইরেও তৎপর থাকা।

সম্পকের নেটওয়াকের বিস্তৃতি ও কমতৎপরতার পরিসর সম্প্রসারিতকরণের প্রচেষ্টা থাকলে যে বহি:স্থকরণ ঘটে তাতে দৃষ্টিভঙ্গি-রুচিবোধ উন্নত হয় ও উদারতা বাড়ে। নিজের চিন্তাধারাকে বাইরের জগতের সাথে পরিচিত করানো ছাড়া তা আলোচিত-সমালোচিত-চচিত হয়না। প্রচারে-প্রসারে সাফল্য পেতে হলে রুপকালঙ্কার এবং অপরের সাথে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যসমূহ বুঝে তুলনামূলক বিশ্লেষণের পাশাপাশি নানানভাবে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথোপকথন-বাক্য বিনিময় করে নিজস্বভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারাটা সুফলদায়ক বটে। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই সমন্বয়টা সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হবে? এজন্য বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য ও তত্ত্ব নিতে হবে এবং তার যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে পারতে হবে,বিভিন্ন বৈঠকাদি-অনুষ্ঠানাদি-মেলাতে অংশগ্রহণ করে ভাববিনিময় ও নতুন সম্পক তৈরি-পুরানো সম্পক গভীরকরণ করতে হবে, দূরালাপনীর মাধ্যমে কথোপকথন, সময়োপেযুগী উপস্থাপনা-চাহিদানুযায়ী পরিবেশনা, আইসিটির ব্যবহার করতে হবে।

আর সংগঠনের ভেতরেও কাজের মাধ্যমে শিক্ষা, জ্যৈষ্ঠ সহকমী-উধ্বতনদের সাথে প্রশিক্ষণমূলক কমকান্ডে অংশগ্রহণ ও সুসম্পক গড়ে তোলা, সফলদের অনুকরণ করা, পরীক্ষণ চালানো-গবেষণা করা, কাগজপত্র বা প্রামাণ্য দলিলাদির ওপরে নিজস্ব চিন্তার ছাপ ফেলা, অন্যদের সাথে নিজ চিন্তা নিয়ে তকবিতক ও অন্যদের চিন্তাকে জানার মাধ্যমে কমে চিন্তার প্রতিফলন ঘটানোর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি খুব গুরুত্বপূণ।

জ্ঞান সৃষ্টির কাজ করার ক্ষেত্রে কাজের গুরুত্বানুযায়ী অগ্রাধিকার তালিকা ঠিক করে নিতে হবে কেননা সামথ্য ও সময় সীমিত। এক্ষেত্রে কাজকে গুরুত্বানুযায়ী ভাগ করে নিতে হবে এমনভাবে-১.কখনও করার দরকার নেই ২.অনিয়মিতভাবে বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য বা উপলক্ষ্যে যেগুলো করা প্রযোজন ৩.প্রায়শই যা করতে হবে ৪. নিয়মিত যা না করলে নয় ৫.দৈনিক করতে হবে। এভাবে দৈনিক/সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/মাসিক/বাৎসরিক-করনীয় ঠিক করে নেয়া যেতে পারে। জ্ঞানভিত্তিক সংগঠনের সাংগঠনিক সংস্কৃতি কেমন হতে পারে? দেখতে হবে সামাজিকতা-সামাজিক বন্ধন কোন স্তরের? খুব নীচুস্তরের-নিচুস্তরের-নিরপেক্ষ-উচ্চ স্তরের-অনেক উচুঁ স্তরের।

জ্ঞান স্থানান্তর ও কাজের দায়িত্বে পরিবতন কি কখনই ঘটেনা নাকি মাঝে মাঝে ঘটে-প্রায়ই ঘটে-নিয়মিত ঘটে-দৈনিক ঘটে। কমস্থলে পরিবেশটা প্রাণবন্ত-কমমুখর-মুক্ত খোলামেলা কিনা? যোগাযোগ কি শুধু আনুষ্ঠানিক নাকি অনানুষ্ঠানিক? আত্ম পরিচয় কিভাবে সেখানে নিমিত হয়-আত্মকেন্দ্রিকতা বা স্বাথপরতা বেশি দেখা যায় নাকি ত্যাগ-উদারতা-মিল বেশি দেখা যায়? সংগঠন কি খুব কঠোরভাবে-অনমনীয়ভাবে-বাঁধা ধরা অবস্থার মধ্য দিয়ে নিয়ম নীতি মেনে পরিচালিত হয় নাকি সংশ্লিষ্টদের সাথে অত্যন্ত নমনীয় আচরণ করে?সংগঠনের কাজ-কমসূচি ও পরিচালনা কি সংগঠনের পূবনিধারিত সংবিধান বা কমপদ্ধতি দ্বারা নিধারণ হয় নাকি কোন বস দ্বারা নিধারিত হয় নাকি সময় ও তাৎক্ষণিক বাস্তবতার দাবি অনুযায়ী ঠিক হয়? সংগঠনের সাথে সম্পৃক্তরা কোন মানের যোগ্য বা কতটা কমক্ষম? সংগঠনের ভেতরেই উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ বা পারদশী ব্যক্তি আছে নাকি বাইরের অভিজ্ঞদের যুক্ততা নিয়ে কাজ করতে হয়। সংগঠনের ব্যবস্থাপনার প্রকৃতিটা কেমন? ব্যক্তি স্বাধীনতা খুব বেশি নাকি কঠিনভাবে তত্ত্বাবধান বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়? স্ববস্তরে ক্ষমতায়নের ধরণটা কেমন? এক বা একাধিক কারো কতৃত্বে অন্যরা বশীভূত থাকে নাকি যৌক্তিক উদ্দেশ্যমূলক মানদন্ডের বিচারেই ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ আছে? যথাযথ মূল্যায়নের পরিবেশ কি আছে? কমপ্রেরণা বা কমোদ্দীপনা জাগানোর মত সৃজনশলীতা বিকাশে সহায়ক সুস্থ ব্যবস্থা কি প্রতিষ্ঠিত? জ্ঞানের দ্বার কি সবার জন্যে উন্মোচিত নাকি প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত-অভিগম্যতা সীমাবদ্ধ? চিন্তা করা ও তার প্রকাশ বিকাশের কলাকৌশল কতটা শক্তিশালী?সামাজিকভাবে মযাদাবান বা উচু স্তরের মানুষজনের সাথেই কি শুধু সংগঠনের সম্পক নাকি সবস্তরের মানুষদের নিয়েই কাযক্রম?

জ্ঞানভিত্তিক সংগঠনে আইসিটির ব্যবহার ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। সংগঠনকে সাবজনীন গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে দলগত সতকতা, প্রত্যক্ষীকরণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পারদশী বিশেষজ্ঞের যথাযথ কদর, আইসিটি সংক্রান্ত বিশেষ জ্ঞানে দক্ষ ব্যক্তিত্ব এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সরবরাহ ও ব্যবহার, জ্ঞান নকশা পদ্ধতি, তাৎক্ষণিক সংবাদ আদান প্রদানের ব্যবস্থা, ইন্টারনেট-কম্পিউটার এর ব্যবহার ও অনলাইন মাধ্যমগুলোতে সরব বিচরণ,কমপ্রবাহ পদ্ধতির অস্তিত্ব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব বেশি গুরুত্বপূণ। আইসিটির নানান ধরনের ব্যবহারে ও সমন্বয় ঘটানো দরকার।



সংগঠন গতিশীল ও শক্তিশালী হবে যদি তার ধরনে নতুনত্ব থাকে, উদ্দেশ্যে ভিন্নতা থাকে এবং কাজের ধরনে স্পষ্ট পাথক্য থাকে। জ্ঞানভিত্তিক সংগঠনগুলোকে গতিশীল করে এমন পযায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে সকল জটিলতা ও নেতিবাচক বাস্তবতাকে পায়ে ঠেলে আলোকিত মানুষ, সচেতন পরিবার, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তথা সমৃদ্ধ দেশ ও উন্নত জাতি গঠন সম্ভব হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.