আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃক্ষ নিধন

হঠাৎ সভামাঝে হৈচৈ, মন্ত্রীর দৃষ্টি সরু, বর্শা ফেলি মেঝের প’রে পেয়াদারা তামাশা দেখিতে মগ্ন, উজির নাজির সেনাপতি সকলেই স্বপ্নাবিষ্ট যেন! সভাকবির মস্তিস্কে উদ্গিরিত হইতেছে একে একে বাক্যের ঝঙ্কার। পারিষদ মাঝে আসন আলোকিত করিয়া বসিয়াছেন স্বয়ং রাজাধিরাজ। বৃক্ষসাজে আসিয়াছে রাজসভায় একদল প্রজা, সঙ্গে ফরিয়াদ। এ জীবনে রাজা হেরিয়াছে বহু সাজ, বহু বেশ; বৃক্ষরুপী প্রজা দর্শনে আজি কৌতুকের নাহি শেষ! ঈষৎ হাসিয়া রাজা শুধাইল প্রশ্ন,
- নাম কি হে? - মেহগনি। - তোমার? - আমি দেবদারু মহারাজ।

- আর, ঐদিকে যাহারা?
দক্ষিন শাখা ঊর্ধ্বে তুলিয়া আগন্তুকেরা নিজ নিজ পরিচিতি করিল জ্ঞাপন।
অট্টহাস্যে কহিলেন রাজা- বেশ বেশ, সুমধুর নাম বটে! তা কি হেতুতে করিয়াছ এরূপ ধারণ? সকলই কি বিদ্রুপ, সকলই পরিহাস, নিছকই আনন্দ প্রদান কিংবা চিত্ততুষ্ট করণ? নাকি, সারবস্তু কিছু আছে ইহাতে?
সুযোগ সন্ধানী সভাকবি কন হাসি- "রাজাগণ যান মৃগয়ায়, যান তপোবন বিহারেতে; মোদের রাজনের প্রতাপ এমনই, অটবী আসিয়া দাঁড়ায়েছে সমুখেতে। "
দক্ষিন হস্তের ইশারায় কবিরে থামাইয়া রাজা আগত প্রজাগণে কহিলেন- বালখিল্যে অধিক কাল ক্ষেপণ স্বভাবেতে মোর নাই; প্রার্থনা কর বর্ণন।
প্রতিনিধি এক তাহাদের আগাইয়া আসিল; নতজানু, করজোড়, শিথিল স্কন্ধ, আনত মস্তক। কহিল, - মহারাজ।


‘মহারাজ’ শব্দের এমন ভিন্নতর উচ্চারণ রাজা কখনই শোনে নাই। রাজ্যের যত ক্ষোভ, যত ক্ষেদ, যত মাতম, যত হাহাকার একত্রে বিরাজ করিতেছে যেন ঐ চারটি অক্ষরের মাঝে। প্রাসাদের হস্তিকাকার চারটি মূল স্তম্ভ একত্রে কাঁপিয়া উঠিল ঐ উচ্চারণে। আগন্তুকের সম্মুখে নিজেকে বড্ড তুচ্ছ হইল মনে। ক্ষীণস্বরে কহিলেন রাজা- কহ।


- হে কুলপতি অধিরাজ, আপনাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসের উপকরণ যোগান দেয়া আমাদের কর্ম। পুব হইতে পশ্চিমে, উত্তর হইতে দক্ষিনে, ঈশান হইতে নৈঋতে যখন পাগলা হাওয়ারা দাপিয়া বেড়ায়; যখন আসমানের সমান দরিয়ার ঢেউ বাসুকির ফণা তুলিয়া আপনাদের দংশন করিতে আসে, মোরা সংশপ্তক সৈন্যের ন্যায় বক্ষ পাতিয়া শত্রুর মুখামুখি দাঁড়াইয়া তাহাদের তেজ হ্রাস করি যাহাতে আপনাদের ঘরবাড়ি প্রাসাদ রক্ষা পায়, আপনারা রক্ষা পান। আপনাদের জ্বলন্ত উনুনে, গৃহসজ্জায়, আসবাবে আমাদের নিত্য জলাঞ্জলি। তাহা আপনাদের ‘প্রয়োজন’ জ্ঞান করিয়া ওইটুকু ত্যাগ মানিয়া লওয়া আমাদের ধর্ম। আমাদের শিকড়ের বন্ধনে বাঁধিয়া আপনাদের মাটির ক্ষয় রোধ করণ, ফুলে ফলে ছায়ায় আপনাদের আপ্যায়ন- সেও ধর্ম বটে মোদের।

আসন্ন পরিবেশ বিপর্যয়ে আমরাই থাকিব বন্ধু আপনাদের। কিন্তু মহারাজ, আজি মোরা হত্যার স্বীকার; গত কয় মাসে স্বয়ংক্রিয় করাতের তলে গিয়াছে আমাদের পনের সহস্র প্রাণ, একদল পশুর সহিংসতার নব কৌশল আজি বৃক্ষনিধন, তাহারা কি জানে না বৃক্ষের প্রয়োজন? পশুর স্বার্থসিদ্ধিতে সড়কের প’রে মোদের জীবনাবসান, মোদের রুধিরে রঞ্জিত আজি রাজ্যের দশ সহস্রাধিক ক্রোশ সড়ক পথ। মোদের গোত্রে, মোদের পল্লীতে আজি স্বজন হারানোর হাহাকার মহারাজ; তাহা শ্রবনের শক্তি নাই মনুষ্যে, নাই সুরাসুরে, ভগবানে। তবে যে বৈজ্ঞানিক কহিয়া গেছে- গাছেদেরও মন আছে, আছে আবেগ, আছে অনুভূতি! মহারাজ, বৈজ্ঞানিক নয় মিছে। মোদের অদৃশ্য অশ্রু, মোদের প্রেম, ভালবাসা, অনুভূতি যাহারা সভ্য কেবল তাহারাই দেখিয়াছে।


চিন্তিত রাজন কহিলেন অবশেষে- তোমরা সত্যিই বৃক্ষ? ইহা ছদ্মবেশ নয়? - ঐ কর্ম মনুষ্যের, মহারাজ; বৃক্ষেরা কি তাহাতে পারদর্শী হয়? - কি প্রতিকার করিতেছ প্রার্থনা? হুংকার ছাড়ি কহিলেন তিনি, “সেনাপতি, সেপাই পেয়াদা সহযোগে হও অগ্রসর, ধরিয়া আনো অন্তত কয়টাকে; ক্ষমা নাহি করিব বৃক্ষ হন্তারকে। ” - মহারাজ, আপনি নমস্য, জ্ঞানের আধার। তবে অভয় দেন তো বলি এই বিচারে হইবে না প্রতিকার। - তবে? - একটি বিশাল ছাকনি গড়িতে হইবে। - ছাকিবো কি তাহাতে? - মনুষ্যে আর পশুতে।


খবর: রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ হিসেবে জামায়াত-শিবির সারাদেশে বৃক্ষ নিধনের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা সারাদেশে ১৫ হাজারেরও বেশি গাছ নিধন করেছে। এর মধ্যে শুধু বন বিভাগেরই রয়েছে ১৪ হাজারেরও বেশি গাছ। বিভিন্ন আকারের এই গাছ কাটার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে ২০-৩০ বছর সময় লাগবে।
(সড়কের উপর পড়ে থাকা কাটা গাছের স্তুপের একটি ছবি দিয়েও সরিয়ে নিলাম।

ঐ ছবি দেখলে কষ্ট হয়। )

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.