আমাকে ফেবুতে খুজতে https://www.facebook.com/eislamul
রাত প্রায় দুটো! কিন্তু স্বর্ণার ঘুম আসছে না। ঘুম না আসার কারন অবশ্য ক্লিয়ার না। আজ সারাদিন পবন অনেক জ্বালাতন করেছে। দুই বছর বয়স মাত্র ছেলেটার, কিন্তু এখনই যেন দুষ্টের শিরোমণি। এখন মাকে জড়িয়ে কেমন গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
মুখের দিকে তাকালেই কেমন যেন মায়া মায়া লাগে।
স্বর্ণাকে জড়িয়ে এখন অবশ্য আরো একজন গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। স্বর্ণার স্বামী চয়ন। স্বামীর নামের সাথে নাম মিলিয়ে ছেলের নাম 'পবন'। স্বর্ণার অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই।
স্বর্ণা এখন ভাবছে অন্য কথা।
তার মাথায় ঘুরছে ৫ বছর আগের এক স্মৃতি! সেদিনও এমন একটি রাত ছিল। হালকা শীতের রাত। সে রাতেও আজকের মতন আকাশ থেকে জ্যোৎস্না ফেটে পড়ছিল। তার ঘুমও আসছিল না।
তাদের একতলা বাসার জানালার সামনে এসেছিল তার ভালোবাসার মানুষটি। অনেক ভালোবাসতো স্বর্ণা তাকে। তার চেয়ে বড় কথা, স্বর্ণাকে সে আরো বেশি ভালোবাসতো। হুট করে স্বর্ণার তখন এক বিয়ের সম্বন্ধ আসলো, আর মানুষটি পাগল হয়ে চলে এল তাকে নিয়ে যেতে। রাতের আঁধারে।
স্বর্ণার কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করেছিল ছেলেটি সেদিন। কিন্তু স্বর্ণা পারেনি। বাবা-মা-সমাজের কথা চিন্তা করে ফিরিয়ে দিয়েছিল ছেলেটিকে। স্বর্ণার পারেনি ভীতুর মতন তার হাত ধরে পালিয়ে যেতে সেদিন। আজও তার মনে পড়ে ছেলেটির ডুকরে কেঁদে ওঠার সেই দৃশ্য।
জ্যোৎস্নার আলোয় তার মুখের এক পাশ ছিল আলোকিত, আরেকপাশ অন্ধকার। চোখের পানি থেকে জ্যোৎস্নার আলো যেন ঠিকরে বেরোচ্ছিল। আহারে! কি অসহায়ই না লাগছিল ছেলেটিকে। আজও স্বর্ণা ভুলতে পারেনা সেই অসহায় চেহারা।
হঠাৎ চয়ন একটু নড়ে ওঠে ঘুমের মধ্যে।
স্বর্ণা খুব ভালোভাবে তাকায় স্বামীর দিকে। আকাশ থেকে জ্যোৎস্নার আলো সেদিনের মতই ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে। জানালা দিয়ে সেই আলো এসে পড়ছে চয়নের মুখের এক পাশে। মুখের এক পাশে আলো, আরেকপাশে অন্ধকার। ঠিক সেদিনের মতন।
যদিও এই পাঁচ বছরে চয়নের চেহারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, এসেছে আচরনেও। সেদিনের সেই পাগল প্রেমিকটি আজ একজন বাবা। তার পবনের বাবা। কিন্তু ঘুমন্ত চেহারায় আজও রয়ে গেছে সেই অসহায়ত্বের চিহ্ন। সেই অসহায় প্রেমের চিহ্ন!
হঠাৎ আবেগে স্বর্ণার বুকটা ভরে ওঠে।
পরম মমতায় সে হাত রাখে চয়নের কপালে। তার এই ছোট্ট জীবনে সুখী হবার জন্যে এই দুটো মানুষের চেয়ে বেশী আর কিছু চাই না। কিচ্ছু চাই না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।