আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলামত ভাল নয়

লিখে খাই, সবার ভাল চাই


আলামত ভাল দেখা যাচ্ছে না। যেন ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশ। ঘর থেকে বেরুনোটাই যেন বিপজ্জনক। ঘরে বসেই কাটাতে হবে সময়।

এটাই বা বলি কিভাবে? ঘরও তো এখন নিরাপদ নয়। চলছে অভিযান। গ্রেপ্তার অভিযান। বিরোধী নেতারা ঘরে থাকতে পারছেন না। রাত কাটাতে হচ্ছে অন্যত্র।

বাইরে বেরুলেও বিপদ, ঘরেও বিপদ। তাহলে তারা যাবেন কোথায়? পিতা-মাতারা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে উদ্বেগে সময় কাটান। কোচিংয়ে পাঠিয়ে মন পড়ে থাকে সন্তানের কাছে। রাস্তা-ঘাটে কোন বিপদ হলো কিনা? পুলিশ আবার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় কিনা? কারণ, গ্রেপ্তারে তো কোন বাছবিচার নেই এখন। এই তো গত সপ্তাহে কলেজ পড়–য়া ৪ বন্ধু কোচিংয়ের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়।

পথিমধ্যে তাদের পুলিশ ধরে। নিয়ে যায় থানায়। নানা কথাবার্তা জিজ্ঞেস করে ৩ জনকে ছেড়ে দেয়। একজনকে রেখে দেয়। সারারাত থানা হাজতে থাকে।

পরদিন দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক মাসের জেল দেয়। সে এখন কারাগারে। তার পিতা-মাতা এক অস্থির সময় কাটাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংজ্ঞাও এখন বদলে গেছে। আগে জানতাম তাৎক্ষণিক কোন অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দেয়।

এখন দেখি আগের দিন সন্দেহজনক কাউকে ধরে পরদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিচ্ছে। আরও কত কি দেখতে হবে কে জানে? দেশের ক্রান্তিকালে সরকার ও বিরোধী দল কে কাকে কিভাবে ঘায়েল করবে এ কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। বিরোধী নেত্রীর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণার পরই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থকে। এ নিয়ে উত্তেজনা সরকারি দলে, উত্তেজনা বিরোধী দলে। উত্তেজনা জনমনে।

উত্তেজনা দেশজুড়ে। বিরোধী নেত্রীর এ কর্মসূচি ঘোষণার পর পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয় সরকারি দল থেকে। তখনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, এ কর্মসূচি বিরোধী দল কতটুকু পালন করতে পারবে ? গত দুই দিন ধরে মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্য উত্তেজনাকে আরও বেগবান করেছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, ইতিমধ্যে ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে বোর্ডার ওঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর বাইরে থেকে ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা হোটেলে উঠতে পারছেন না।

এমনকি আত্মীয়স্বজনের বাসা-বাড়িতে উঠতে পারবেন কিনা এ নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকায় নতুন কেউ উঠছেন কিনা তার তদারক করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, বিরোধী দলের এ কর্মসূচি দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবে। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সহিংসতার আভাস পেলে নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, নির্বাচনের আগে নিরাপত্তার স্বার্থেই ঢাকায় কোন রকমের অভিযাত্রা করতে দেয়া হবে না।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একে ধ্বংসযাত্রা বলে উল্লেখ করেছেন। আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রাকে সরকার সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিত সভা করে গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রাকে যে কোন মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর প্রস্তুতি হিসাবে মহানগর সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ওই দিন ঢাকা শহর থাকবে আওয়ামী লীগের দখলে।

মসজিদ, মন্দিরে অপরিচিত কাউকে দেখলে পুলিশের হাতে তুলে দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। সরকারের মন্ত্রী ও সরকারদলীয় নেতাদের কথার সঙ্গে কাজেরও মিল দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে সরকার। বুধবার রাতে সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার এবং সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী নেত্রীর গুলশান অফিসের সামনে থেকে। ওই রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই অভিযোগ করেছেন তার কার্যালয়ে কোন নেতা-কর্মীকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে। জেলায় জেলায় গ্রেপ্তার অভিযান তো চলছেই। বিদেশী পত্রপত্রিকা ইতিমধ্যে বাংলাদেশকেই একটি কারাগার আখ্যা দিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা ভণ্ডুল করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। ১৮ দলীয় জোটও যে কোন মূল্যে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি পালন করবেই।

এ অবস্থায় ২৯শে ডিসেম্বরকে নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল এখন মুখোমুখি। পরিস্থিতি একেবারেই ঘোলাটে। কি হয় সামনে কেউ বলতে পারছেন না। তবে আলামত যে ভাল নয় তা সবাই টের পাচ্ছেন।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।