আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতির বাচ্চা



“তোমাকে ভালোবাসতেই হবে। গত তিন বছর ধরে তোমার পিছনে আমি পাগলের মত ঘুরছি। তুমি কেন ভালোবাসবানা?”
যখন এই কথাগুলো হাতির বাচ্চাকে বলছিলাম ও হয়তো আমার কথাগুলো শুনতেই চাচ্ছিলোনা।
হ্যাঁ, আমি ওকে এই নামে ডাকতাম ''হাতির বাচ্চা''।
মনে হয়, কথাগুলো ওর এক কর্ণকুহরে যেয়ে আরেক কর্ণকুহরে তা পরিশোধিত হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।

আমি এসব ভেবে আরো ক্ষ্যাপা হয়ে গেলাম। মেজাজটা গরম করে ওকে বললাম,
“কি তোমার কানে যায়না আমার কথা, এমন করতেছো কেন?”
অবশেষে রাজকন্যা তার অমৃতবাণী দ্বারা আমাকে মুগ্ধ বিমোহিত করলেন। এমনই মুগ্ধ বিমোহিত করলেন যে আমার কানে তব্দা খেয়ে গেলো। নাক দিয়ে কানের গরম ধোয়া বের করতে করতে বললাম,
“এত বাজে গালাগালি কোথা থেকে শিখছো। খবরদার আমাকে গালি দিবেনা।

আমার আরো ভালবাসা বেড়ে যায় তোমার জন্য”।
রাজকন্যা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তার পাগল করা হাসিটা দিয়ে বললেন,
“আমি তোমাকে গত তিন বছর ধরে বলছি আমার ব্যাপারে আশা করে লাভ নাই। আমার তোমাকে ভালো লাগেনা। কখনোই লাগেনাই”।
“তাহলে এই তিন বছর আগের এক বছর যে প্রেম প্রীতি ছিলো ওইটা কি ছিলো?”
“ওইটা কিছু ছিলোনা।

তখন আমি বুঝার চেষ্টা করছি তুমি কেমন? তোমার সাথে আমার ম্যাচ করবে কিনা। ” তার সরল সোজা উত্তর।
আমি মেজাজ খারাপের চরম পর্যায়ে যেয়ে বললাম,
“ধুর মাইয়া তোমাকে ভালবাসিনা। রাখলাম ফোন। সন্ধ্যার দিকে ফোন দিলে ফোনটা ধরো”।


রাজকন্যা হাসতে হাসতে বলে,
“কেন এমন করছো অর্ক। আর কাউকে পছন্দ করতে পারোনা?”
আমি টানা একমিনিট নিশ্চুপ থেকে ফোনটা রেখে দিলাম।

পাঠক মজার কথা বলি, আমি রাজকন্যা নামে যে মেয়েটাকে পাগলের মত ভালোবাসি তাকে কখনো মোবাইলে ফোন করিনা। আমার কাছে মোবাইল জিনিসটা ফাজলামির উপকরণ মনে হয়। বাসায় এখনো সরকারী ফোন সার্ভিস আছে এবং ওইটাই ব্যবহার করি।

বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, অনেক গুড ফিল হয় তাতে।

রাজকন্যার সাথে প্রেম প্রীতি শেষে থিসিস কর্মে মনযোগ দিলাম। কামরুল স্যার ঝাড়ি দিয়ে লাস্ট উইকে বলছিলো যদি নেক্সট বুধবারের মধ্যে ADC দিয়ে টেম্পারেচার কন্ট্রোলার বানাতে না পারি তাহলে সে আমারে থিসিস ফেল করায় দিবে। যদিও ইঞ্জিনিয়ারিং লাইফে জীবনেও শুনিনাই থিসিসে কাউকে ফেল করানো হয়। আমি এইসব সাত পাচ ভাবতে ভাবতে মাইক্রোকন্ট্রোলার দিয়ে কিভাবে কনভার্টার বানানো যায় চিন্তা করতেছি।

মাথায় তখন রাজকন্যার কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমরা অনেক ভালো একটা প্রেম করেছিলাম তিন বছর আগে। কিন্তু আমি তাকে কখনো বুঝাতে পারিনাই তাকে আমি কতটা চাই। এইজন্যই কি সে হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে? বুঝতে পারিনা, বুঝতে চাইনা। শুধু জানি তাকে দরকার, অনেক দরকার আমার জীবনে।

আমি তাকে আজ প্রায় এক মাস পর ফোনে পেয়েছি। আমি সবসময় বুঝতে চেয়েছি সে আমাকে কেন ঘৃণা করে। কেন আমার সাথে কথা বলতে চায়না। আমি চলে যাওয়ার পর সে আরো দুইজনের সাথে এফেয়ার করেছিলো। আমি তবুও তাকে ভালোবাসি, কেন বাসি জানিনা।

বুঝিনা, কাউকে তা বলতেও চাইনা।

সন্ধ্যায় তাকে ফোন করে পাওয়া যাবেনা জেনেও আমি বারবার ফোন দিলাম। প্রতিবার তার বাসার কাজের মেয়ে ফোন ধরলো এবং শেষবার আমাকে বললো, “ভাইজান আপামণি বাসায় আছে কিন্তু ফোন ধরবোনা। উনি আমারে বলতে বলছিলেন যে উনি বাসায় নাই। কিন্তু আমি সইত্যবাদী।


আমি বিশাল ঝাড়ি দিয়ে বললাম “মর। ”
মেজাজটা খারাপ করে যখন বাহিরে বের হলাম ধোয়া টানতে তখন বাহিরে ঝমঝময়ে বৃষ্টি। মাথার মধ্যে একটা পাগলা বুদ্ধি আসলো। আমি রিকশা ডাক দিলাম। বললাম হালিশহর থেকে নাসিরাবাদ যাইতে।

রিকশাওয়ালা ভাড়া জিজ্ঞেস না করে আমাকে তুলে নিয়ে জোরে টান দিলো। সে বুঝতে পারছে আমার মাথায় এখন পাগলামী ভর করছে। আমি বৃষ্টির মধ্যে ভেজা সিগারেট টানতে টানতে যখন রাজকন্যার বাসার সামনে আসলাম সে তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে রেলিং দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টির পানি ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আমি হাত নাড়লাম যাতে অবশ্যই সে বিরক্ত হলো বলে বুঝতে পারলাম। কিন্তু আমি মূক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাজকন্যার পলেস্তরা খসে পড়া, বিবর্ণ বাড়ির ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি তাকে এবং শুধুই তাকে।



সময় চলে যায়, আমিও বদলে যাই। রাজকন্যা হারিয়ে যায় কোন সে অবগাহনে আমি তা জানিনা, একসময় জানার চেষ্টাও আর করিনাই। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ভালোবাসেনা তাকে জোর করে কাছে আনা যায়না। যাকে ভালোবাসি এতোটা তাকে আর কষ্ট দেবো কেন? আমি তার থেকে নিজেই হারিয়ে যাই। মনে আছে শেষবার ফোন করে চিৎকার করে কাদতে বলেছিলাম,
“তুমি আমাকে ভালোবাসলানা কেন? আমি হারায় যাবো তোমার থেকে, সারাজীবনের জন্য।

তুমি আমাকে ভালোবাসলানা কেন???”
আমরা মনুষ্য জাতি ভালবাসা ছাড়া কেন বাচতে পারিনা তা আমি বুঝিনা। একসময় কি বিজ্জানীরা এমন কিছু আবিষ্কার করবেন যাতে হৃদয়ের অনুভূতিগুলো গুড়িয়ে মুচড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া যাবে চিরতরে, নতুন করে ইনস্টল করা যাবে নতুন কোন ভালোবাসাকে।

চার বছর কিভাবে কিভাবে যেন কেটে গেলো। আমি এখন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ডিপার্টমেন্ট হেড হয়ে বসে আছি। আমার সামনে কোন লক্ষ্য নাই, আমি অন্ধ মোষের মত দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছি আর মানুষকে দৌড়ানি দিচ্ছি।

জীবনে কেউ এসেছিলো নাকি জানতে চাচ্ছেন তো? হ্যা এসেছিলো এবং সে আছে এখনো। তার নাম আত্রলিতা, দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের একটি চমৎকার দেশ গ্রীস দেশের মেয়ে। মধ্যসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ক্রীটে তার বসবাস বিশাল বড় একটা পরিবার নিয়ে যাতে ভালোবাসাবাসির কোন শেষ নেই। আমার সাথে কিভাবে কিভাবে যেন ইন্টারনেটে পরিচয় হলো বছর দুই আগে। একসময় ছবি শেয়ারিং, প্রায় দিন ভয়েস চ্যাট এবং অবশেষে একজনের আরেকজনের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ।

আমি তাকে বেশ পছন্দ করি কিন্তু ভালোবাসিনা বলেই মনে হয়। তবে তাকে ছাড়া আমার চলেওনা। সারাদিন এস.এম.এস চলতে থাকে এবং নিয়মিত সে আমার সাথে ঝগড়া করে। মজার ব্যাপার হলো, সেও প্রায়ই আমাকে গালাগালি করে তবে গ্রীস ভাষায়। সব কিছুই ঠিকমত চলছিলো এবং চলতো যদি না আবার রাজকন্যা উদয় হতো।



শনিবার সকালবেলা ঘুম থেকে একটু দেরীতে উঠলাম কারণ অফিস থেকে দুদিনের ছুটি নিয়েছি। কিছুদিন থেকেই শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। ইচ্ছা ছিলো একটু কক্সবাজারে বেড়াতে যাবো, কিন্তু মাত্র দুদিনের জন্য যাওয়ার কোন মানে হয়না। সকালে যখন নাস্তা করছি অপরিচিত নাম্বার থেকে মোবাইলে ফোন এলো। ফোন ধরে হ্যালো বলার আগেই বুঝতে পারলাম রাজকন্যা।

কিভাবে বুঝলাম জানিনা। আমি চুপ করে ফোন ধরে রাখলাম। ওই প্রথম আমাকে বললো,
“কালকে আমার বিয়ে”।
“কনগ্র্যাটস। শুনে অনেক খুশি হলাম”।


ও কিছুক্ষণ ইতিস্তত করে বললো,
“আমি আসলে তোমার কাছে ফোন করছিলাম আগের ব্যাপারগুলো নিয়ে কিছু বলতে”।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
“আগের ব্যাপারগুলো নিয়ে কিছু বলার দরকার নাই। আমি ভুল করছিলাম তোমাকে বহুদিন বিরক্ত করে। যখন বুঝলাম তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসোনাই আমি তোমার থেকে দূরে চলে গেছি। তবে আমি এখনও লজ্জা পাই যখন মনে হয় আমার করা পাগলামীর কথা।

আমি দুঃখিত”।
রাজকন্যা চুপ করে শুনে কি যেন বলতে যেয়েও বললোনা। আমার সেটা বোঝার আগ্রহ হচ্ছিলোনা। ও আমাকে আবার বললো, “কাল আমার বিয়ে। আমি এখনও আগের বাসাতেই আছি”।


আমি জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললাম,
“তুমি কি আমাকে নিমন্ত্রণ করতে চাচ্ছো?”
ও ইতস্তত করে বললো,
“তা না”।
হঠাৎ করে কি যেন হলো, আমি চিৎকার করে বললাম,
“তাহলে কি আবার নতুন করে খেলতে চাচ্ছো? তোমার মনে পড়েনা আমি তোমার জন্য কত কষ্ট পাইছিলাম? তোমার মনে আছে তোমার বাসার সামনে আমি দিনের পর দিন দাঁড়ায় থাকছি একবার তোমাকে দেখার জন্য। তুমি কি করছিলা মনে আছে? আমাকে একবার পাত্তা দাওনাই। তোমার জন্য আমি আমার বাবা মা বন্ধু বান্ধব সবার থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম। তোমাকে ছাড়া আমি কোন কিছু ভাবতাম না তুমি জানোনা, তুমি জানতানা? এখন কি বুঝাতে ফোন করছো?”
আমি অপর পাশ থেকে মৃদু কান্নার শব্দ শুনতে পাইলাম।

আমার মেজাজটা তাতে আরো খারাপ হলো। আমি আরো জোরে চিৎকার করে বললাম,
“খবরদার মেয়ে কান্নাকাটি করবানা। ফাইজলামি করতে ফোন করছো? আমার সাথে যখন ১ বছর ২ মাস প্রেম করছিলা তখনও তো ফাইজলামি করছিলা তাই না? আমি ছাগল এর পর তুমি ১০-১২ টা প্রেম করলেও তোমার পিছে লেগে ছিলাম। আমি তোমাকে ভুলে গেছি যেদিন তুমি আমার বাসায় ফোন করে আমার মা বাবার কাছে কমপ্লিন করছো। আমার আব্বু আম্মু কতটা কষ্ট পাইছিলো জানো?”
ও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললো,
“আমি স্যরি, আমি স্যরি।

আমি বুঝিনাই”।
আমার আরো মেজাজটা গরম হলো। আমি রাজকন্যাকে বললাম,
“এখন ফোন করছো কেন? কি মনে করছিলা আমি মরে গেছি? নাকি আবার কোন রকম মানসিক যন্ত্রণা করতে ফোন করছো? তুমি আমাকে কোন যন্ত্রণা দিতে পারবেনা, কারণ আমি তোমাকে এখন আর কেয়ার করিনা”।
ও এমনভাবে ফুপিয়ে কাদছিলো আমার ঝাড়ি খেয়ে যে মুখ থেকে কিছু বের হচ্ছিলোনা। শুধু আবছাভাবে বুঝলাম, ও আমাকে বারবার স্যরি বলছে।

আমি মেজাজ গরম করে ফোন রেখে দিলাম। ফোন রাখার আগে বললাম,
“ভুল করেও আর ফোন দিবানা”।
আমার মাথাটা প্রচন্ড ঘুরাচ্ছিলো। অনেক বেশি চাপ পড়েছে মাথায়। আমি বসে থাকতে পারছিলাম না।

আবার বিছানায় যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে যখন উঠলাম, তখন মাথায় বারবার একটা চিন্তাই ঘুরছে ও আমাকে ফোন করছে কেন? মাথাটা হালকা হলে বুঝলাম ও কি চাচ্ছে।
আমি আমার ডেস্কটপ খুলে, আত্রলিতা কে ছোট্ট একটা মেইল লিখলামঃ
“প্রিয় আত্রলিতা, তোমার ধারণা সঠিক। আমি কখনো তোমার কথা শুনতে চাইনাই। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তুমি সঠিক বলেছিলে।

আমি আমার ভালোবাসাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম শুধু। হারিয়ে যেতে দেইনাই। কিছুক্ষণ পর আমি রাজকন্যার বাড়িতে যাবো এবং তাকে একটা চড় দেবো।
প্রিয়, আমাকে ক্ষমা করো। হৃদয়খানি তো একটাই, একে ভাঙ্গবো কি করে? সব যে একখানেই জড়ো হয়ে থাকে।

ভালো থেকো”।

আমি আমার অনেক আগের নীল পাঞ্জাবী পরে খোচা খোচা দাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে রিকশায় উঠে বললাম,
“চল মামা নাসিরাবাদ যাই”।
দরজা খুললো রাজকন্যার বাবা। আমি সালাম দিয়ে বললাম,
“আঙ্কেল কেমন আছেন?”
ওর বাবা আমাকে চিনতো যখন আমি ওর সাথে এফেয়ারে ছিলাম। আমাকে দেখে এখন কি চেনার কথা? উনার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো চিনতে পারছেন।

আমাকে অমায়িকভাবে জিজ্ঞেস করলো,
“বাবা কেমন আছ?”
আমি হাসি হাসি দিয়ে বললাম,
“খারাপ নাই, কিন্তু খুব বেশি ভালো নাই”।
আঙ্কেল আমাকে ঘরে নিয়ে গেলেন। দেখলাম ওদের ঘরে বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। ওর কাজিন, মামা চাচায় ঘর ভর্তি। সবাইকে সালাম দিলাম, ছাগলের মত ওর কাজিনগুলাকেও সালাম দিলাম।

সবাই মনে হলো আমাকে দেখে কিছুটা বিরক্ত। এই বিয়েবাড়ির ঝামেলায় অপরিচিত মানুষ দেখলে মনে হয় সবাই একটু বিরক্ত হয়। সবশেষে রাজকন্যার দেখা পেলাম। ও ওর রুমে সাজগোজ করছিলো। আমার কন্ঠ শুনে বের হয়ে আসলো মনে হয়।



আমি ওর দিকে তাকিয়ে ভিলেন টাইপ হাসি দিলাম। ফরিদী ভাইও লজ্জা পাবে এমন হাসি শুনলে। আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম রাজকন্যার মুখ রক্তশূণ্য হয়ে গেলো। আমি ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটা এখনো খোলা। পাঠক আমি সেইসময় যা করেছিলাম তা হয়তো শুধুমাত্র মুভিতেই সম্ভব।

আমি অর্ধউন্মাদ একজন রাজকন্যার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“বেটি দৌড়া”।
দৌড় দিয়ে যখন পিছনে তাকালাম দেখি আমাদের দিকে ওর বাসার সব মানুষ মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। কেউ যেন বুঝতেই পারছেনা কি করতে হবে। রাজকন্যা সবাইকে সরো সরো বলে যখন দৌড় দিয়ে আমার হাত ধরলো আমি ওকে শক্ত করে ধরে উসাইন বোল্টের গতিতে ভৌ দৌড় দিলাম। রাস্তায় যেয়ে প্রায় চলন্ত একটা সি.এন.জিতে উঠে ওকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম, “এই কয়দিনে আর কয়টা প্রেম করছো?”
ও আমার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“এখন না বললে হয়না?”
আমি বললাম,
“না বললে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো”।


ও কান্নাভেজা ভরাট চোখে বললো,
“আমি তোমাকে ছাড়া কারো সাথেই কখনো প্রেম করিনি। যাদের কথা তুমি শুনছো ওইগুলা তোমাকে দূরে রাখার জন্য। তোমার বাসায় যখন ওই ঘটনার পর ফোন দিয়েছিলাম তখন আর পাই নাই। এরপর জানলাম তোমরা এখন আর ওই বাসায় থাকোনা। কিছুদিন আগে বহু কষ্টে তোমার সেলনম্বর পেলাম।

আমি শুধু একবার তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম যে তোমাকে ছাড়া কখনো কাউকে ভালোবাসিনাই”।
আমি মেজাজ গরম করে বললাম,
“আমাকেই যখন ভালোবাসছিলা তখন এমন করছিলা কেন? এত পেইন দেয়ার অর্থ কি?”
ও মাথা নিচু করে বললো,
“জানিনা আমার কি হয়েছিলো। যখন দেখলাম তুমি আমাকে ঠিকমত ভালোবাসার কথা বলোনা, একটুও কেয়ার করোনা তখন মনে হইছিলো তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসো নাই। আর আমিও অনেক কিছু বুঝিনাই”।
আমি ওকে আসলে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

জাস্ট বললাম,
“তুমি একটা উজবুক”।
ও আমাকে শক্ত করে ধরে বললো,
“জানি। আর তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বলছি। আসলে আমার আজকে বিয়ে হচ্ছিলোনা। বিয়ে আমার বড় বোনের হচ্ছিলো।

কিন্তু তোমাকে মিথ্যা না বললে তুমি এভাবে এসে আমাকে নিয়ে যাবেনা তাই এমন মিথ্যা বলা। স্যরি”।

আমি আমার গাধার মত বড় বড় কান নিয়ে তখন এই ভয়ংকর মেয়ের পাশে বসে রাগে গজগজ করছি। মনে মনে শুধু এটুকুই ভাবছি, মানুষ এত ভালোবাসে কেন??

উৎসর্গঃ একজন প্রিয় মানুষকে কথা দিয়েছিলাম তার জন্য একটি গল্প লিখবো, কথাটা রাখলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।