আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতির কেন নাক লম্বা?

বিশাল এক জঙ্গল। নানারকমের গাছগাছালি, জীব-জানোয়ারে। পাখিরা সারাদিন গান গেয়ে আর কিচিরমিচির ডেকে মাতিয়ে রাখে গোটা বন। জীব-জানোয়াররা ঘুরেফিরে বেড়ায় বনের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। বড় শান্ত স্বভাবের তারা।

সবাই নিজের মতো করে চলাফেরা করে। সেই বনে বাস করত এক হাতি।

হাতি মানে বিরাট আকারের হাতি। ছাইকালো গায়ের রঙ। বিরাট কুলার মতো দুটি কান।

তবে শরীরের তুলনায় ছোট ছোট দুটি চোখ। আর লেজের তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না বলা যেতে পারে। তাই লেজটা তার খুব ছোট। ওই ছোট লেজটা মাঝে মাঝে দু'চারবার নেড়েচেড়ে খেলা করে।

কিন্তু সে বিরক্ত তার ওই লম্বা দুটো দাঁত নিয়ে।

ওদুটো তো কোনো কাজেই লাগে না তার। শুধু দেখায় বাহারি মাত্র।

আর লম্বা নাকটা? যাকে সবাই শুঁড় বলে। শুঁড় নামের অমন নাকটা তো তার আগে ছিল না। নাক ছিল তার অন্যান্য জানোয়ারের মতোই খাটো।

নাকটা তার অমন লম্বা হলো কেন, সেই কাহিনীটাই বলছি- গভীর জঙ্গলের হাতি। ভীষণ শক্তিশালী ছিল সে। যদিও বনের কারও কোনো ক্ষতি করত না। তবু বনের সবাই তাকে খুব ভয় করত। খুব সমীহ করে চলত তাকে।

কী জানি, যদি কোনো কারণে কখনো ক্ষেপে যায়। ক্ষেপে গিয়ে তাদের ওপর চড়াও হয়। তখন তাদের অবস্থা যে কি হবে। তাই সব প্রাণী হাতির কাছে এসে বিভিন্নভাবে তার গুণগান করত। নানাভাবে তার তোয়াজ করত।

বানর এসে শরীরে হাত বুলিয়ে দিত। চামচিকারা তার কানের ভেতর ঢুকে কান চুলকে দিত। হরিণ এসে পা টিপে দিত। চোখ পরিষ্কার করে দিতে ভালুক।

এমনিভাবে সবাই তাকে আরাম দিত।

এতে করে তাদের ওপর খুব খুশি থাকত হাতি। এমনিভাবে শান্তি-সুখে দিন কাটত তার।

ওই জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটা নদী।

সেই নদীতে বাস করত এক কুমির।

সে যেন এক রাজা।

পানির রাজা।

নদীর পানির মধ্যে বসবাসকারী সবাই তাকে ভীষণ ভয় করত। তাকে এড়িয়ে চলত।

কিন্তু সবাই রাজা বলে মানত তাকে।

ব্যাপারটা এই রকম।

জঙ্গলের রাজা হাতি।

আর নদীর রাজা কুমির।

অর্থাৎ দুই দেশের দুই রাজা।

ডাঙ্গার রাজা।

পানির রাজা।

সুখে-শান্তিতে দিন যাচ্ছিল তাদের। ...

কিন্তু এক দিন হঠাৎ করে কি জানি হলো।

দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেল। কেউ কারও কাছে আসে না। দূর থেকে দুজনে আকার-ইঙ্গিতে একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করে।

শব্দ করে একে অন্যকে শাসায়।

এরপর থেকে দুজনেই সুযোগ খুঁজতে থাকে একে অন্যের ক্ষতি করার।

কিন্তু মনমতো সুযোগ কারও আসে না।

বাগে পায় না কেউ কাউকে।

এক দিন ব্যাপার হলো কী?

প্রায় পুরো দিন জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে হাতিটার খুব তেষ্টা পেল।

অনেক খোঁজাখুঁজি করে আশপাশে একটুও পানি কোথাও সে দেখতে পেল না। এদিকে তেষ্টায় সে প্রায় কাহিল।

মস্তবড় মাথা ঘুরিয়ে দুই চোখ দিয়ে চারদিকে সে দেখে নিল।

কেউ নেই কোথাও।

তখন প্রায় দুপুর।

এ সময় কুমিরটারও নদীর তীরে আসার কথা নয়। সে তো আসে প্রতিদিন সকালবেলায়। আরাম করে রোদ পোহাতে।

এ কথা চিন্তা করে সে আস্তে আস্তে একপা দু'পা করে নামল নদীর কিনারে। তারপর মাথাটা নিচু করে মুখটা বাড়িয়ে দিতে শুরু করল পানিতে চুমুক দিতে।

এমনি সময় সেই কুমিরটা লাফ দিয়ে উঠে কামড়ে ধরল হাতির নাকটা।

হাতি বুঝতে পারেনি যে কুমিরটা পানির নিচে লুকিয়ে ছিল।

নাকে কুমিরের কামড় খেয়ে সে হকচকিয়ে উঠল। টান দিয়ে কুমিরের মুখ থেকে নিজের নাকটাকে সে ছাড়িয়ে নিতে চাইল।

কিন্তু কুমির কি আর ছাড়ে?

শত্রুকে শাস্তি দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ সে আজ পেয়ে গেছে।

এমন সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়?

হাতি জোরে টানছে তার নাক ছাড়িয়ে নিতে।

ওদিকে কুমির টানছে হাতির নাক কামড়ে ধরে তাকে নদীতে নামানোর জন্য।

এমনিভাবে দুই পক্ষের টানাটানি।

সে কী টানাটানি!

'কেউ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান। '

এমনিভাবে চলছে অনেকক্ষণ।

দীর্ঘ সময়। ...

তারপর হঠাৎ করে কুমিরের মুখ থেকে ফসকে গেল হাতির নাকটা।

কিন্তু একী! এ কী দেখছে হাতি! দুই দিকের টানাটানিতে অনেক লম্বা হয়ে গেছে হাতির নাকটা। একী দশা হয়েছে তার নাকের!

মনটা তার খুব খারাপ হয়ে গেল। কেমন করে এ নাক দেখাবে সে অন্যদের?

চিৎকার দিয়ে সে কাঁদতে লাগল।

এমন সময় হঠাৎ করে দৈববাণী হলো- 'ওহে হস্তিপ্রবর! মন খারাপ করো না। এতে তোমার কোনোই দোষ নেই। কিন্তু তোমার যে নাক লম্বা হয়ে গেছে, তা তো আর ছোট করা যাবে না। তবে তোমাকে কথা দেওয়া হচ্ছে- আজ থেকে পৃথিবীতে যত হাতি জন্মগ্রহণ করবে, সবারই নাক লম্বা হবে তোমার নাকের মতো। আর সে নাকের নামও পালটে যাবে।

তার নাম হবে 'শুঁড়'।

সেদিন থেকে শুরু হলো সব হাতির লম্বা নাক।

আর সে নাক পরিচিত হলো 'শুঁড়' নামে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।