তবে প্রাথমিক সমাপনীতে রেকর্ড পাসের হার নিয়ে ‘আত্মতুষ্টির’ কিছু নেই জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক দুইজন উপদেষ্টা বলছেন,শিক্ষায় অগ্রগতি হলেও মান বাড়েনি,অবশ্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এবছর প্রাথমিক সমাপনীতে ৯৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
২০০৯ সালে প্রাথমিক সমাপনীতে ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২০১০ সালে ৯২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ২০১১ সালে ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ৯৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে।
আর ইবতেদায়ীতে ২০১০ সালে ৭৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে।
ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯ সালে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাথমিকে ধারাবাহিকভাবে পাসের হার বেড়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ, শুণ্য দশমিক ০৯ শতাংশ এবং ১ দশমিক ২৩ শতাংশ পয়েন্ট।
আর ২০১০ সালে শুরু হওয়া ইবতেদায়ীতে যথাক্রমে ১৬ দশমিক ০২ শতাংশ, ১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।
পাসের হার বৃদ্ধিতে ‘ছেদ’ না ঘটলে আগামী বছরই প্রাথমিক সমাপনীতে পাসের হার ‘পৌঁছাবে’ শতভাগে।
তবে এই পাসের হার বাড়ার মধ্যে আত্মতুষ্টির কিছু দেখছেন না গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাচ্চারা কষ্ট করে, অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল করেছে, এটা খুশি হওয়ার মতোই বিষয়।
“শিক্ষায় অগ্রগতি হচ্ছে।
তবে শিক্ষার মান বাড়ছে এটা স্বীকার করছি না। ঢালাও পাস হলে পরীক্ষা নেয়ার কি দরকার?”
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নির্দেশনা অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণি পাসের আগে একজন শিক্ষার্থীকে ৫০টি ‘দক্ষতা’ অর্জন করতে হয়।
এই প্রসঙ্গটি তুলে ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা রাশেদা বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে এই ৫০টি মানদণ্ডের মধ্যে ১০ শতাংশ দক্ষতা যাচাই করা হয়। বাকী ৯০ শতাংশ দক্ষতা ‘টিক চিহ্ন’ দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পাসের হার বাড়াতে উত্তরপত্র মূল্যায়নে কিছু ‘অলিখিত নির্দেশনা’ দেয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানও মনে করছেন পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পাসের হারের সঙ্গে বিভিন্ন মানের (দক্ষতার মানদণ্ড) তথ্যও জানানো দরকার। তাহলে বোঝা যাবে শিক্ষার মান বেড়েছে কি না?”
“শুধু সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে শিক্ষার মান যাচাই করা যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক মূল্যায়নও প্রকাশ করা দরকার। ”
“সিঙ্গেল সূচক (পাসের হার) নিয়ে মাতামাতি করা ঠিক না,” বলেন হোসেন জিল্লুর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ দাবি বলেন, শিক্ষক, অভিভাবকদের সচেতনতার বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ের ফলে ধারবাহিকভাবে পাসের হার বাড়ছে।
এবছর বিশেষ কোনো বিষয়ে ফল বিপর্যয় হয়নি বলেও জানান তিনি।
ফাঁস হয়েছিল দুই বিষয়ের প্রশ্নএবার প্রাথমিক সমাপনীতে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রমাণ মিললেও ওইসব পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, ঢাকা, খুলনা, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুর জেলায় বাংলার ৫৩ শতাংশ এবং ইংরেজির ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।
কিন্তু প্রাথমিক সমাপনীর পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলছেন, প্রায় সব জেলাতেই এবার প্রাথমিক সমাপনীর বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল।
ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমেও পরীক্ষার কয়েক দিন আগে থেকে প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, প্রশ্ন ফাঁসের ফলে শিক্ষার্থীরা যে বেশি নম্বর পেয়েছে এ অভিযোগ ঠিক না। কারণ শিক্ষার্থীরা গতবারের চেয়ে এবার ইংরেজিতে কম নম্বর পেয়েছে।
“প্রশ্ন ফাঁসের ফলে কেউ বেশি নম্বর পেয়েছে এটারও প্রমাণ পাওয়া যায় না।
”
পাসের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কোনো অভিভাবক-শিক্ষক কি চান কোনো শিক্ষার্থী ফেল করুক? আমরাও লক্ষ্য নিয়েছি কেউ যেন ফেল না করে। ফেল করা কৃতিত্বের বিষয় নয়। ”
পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়ছে না- এমন বক্তব্যের বিষয়ে নাহিদ বলেন, “যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি, এটা ঠিক আছে। তবে বেশি পাসের ফলে শিক্ষার মান কমেছে না। শিক্ষার মান ঠিকই আছে।
”
“কনজারভেটিভ ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। আমরা শতভাগ পাস করাতে চাই,” পাসের হার নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে বলেন নাহিদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।