আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গিবাদ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির অবসান চাই



স্বাধীনতার চার দশক পরও নতুন করে স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। দেশ সামগ্রিকভাবে এগিয়েছে, কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলের অপতৎপরতা ও সহিংস তৎপরতা অব্যাহত আছে। এজন্য প্রায়শ দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার প্রচেষ্টা চলছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিপন্ন করার আয়োজন চলছে। বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত করা হচ্ছে, জনজীবন অনিরাপদ করা হচ্ছে। সংবিধান, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন ব্যাহত করার রাজনীতি অব্যাহত আছে।

১৮ দল তথা বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের মানুষকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষীয় শক্তিকে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদী অপশক্তি রাজনীতিকে উত্তপ্ত করার জন্য ক্রমাগত হুমকি, উস্কানি ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি, পঁচাত্তরের খুনীচক্র, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার জঙ্গিবাদী শক্তি একসঙ্গে মিলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্নকারী হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি ঘটিয়ে দেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বানাতে সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি একজোট হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপপ্রচার, বিভ্রান্তি ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের স্বপক্ষে জামায়াত-শিবিরের তৎপরতা, তা-ব ও উস্কানির সমর্থক ও সহযোগী বিএনপি সম্পূর্ণ প্রগতিবিরোধী ও গণতন্ত্র বিপন্নকারী একটি দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জামায়াতের নিয়ন্ত্রণাধীনে এ দলটি আত্মঘাতী তৎপরতায় লিপ্ত। ক্রমাগত হরতাল, অবরোধের নামে সহিংসতা ও হত্যা চালিয়ে জনসমর্থন হারিয়েছে বিএনপি। সংসদবিমুখ হয়ে, আলোচনা ও সমঝোতার পথ পরিত্যাগ করে জঙ্গিস্টাইলে রাজনীতি করছে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিররূপে ভূমিকা পালন করে সন্ত্রাসী রাজনীতি বিস্তারে সক্রিয়।

তাকে আইনের উর্ধ্বে রাখায় দেশের জনগণ অনিরাপদ ও শঙ্কিত। বিএনপি নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে না গিয়ে হতাশ ও বিভ্রান্তির মধ্যে আছে। নাশকতা করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেলে বন্দি, পলাতক ও গৃহহারা হয়েছে। এজন্য খালেদা জিয়ার চরমপন্থি সিদ্ধান্তই দায়ী। এদেশে জঙ্গিসন্ত্রাসের উত্থানে বিএনপি-জামায়াতের অবদান আছে।

গ্রেনেড হামলা ও বোমাবাজির মাধ্যমে বারবার দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং জননিরাপত্তা বিঘিœত করার আয়োজন চলছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা, ক্ষমতাদখলে উস্কানি দেওয়া, বিডিআর হত্যা ও ষড়যন্ত্র করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা হয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ব্যবসায়ীদের বেকায়দায় ফেলা, ব্রাদারহুডকে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনের জন্য দেশে আনয়ন, উগ্রধর্মীয় গোষ্ঠীকে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে সরকারকে বিতর্কিত ও অভিযুক্ত করার ব্যাপক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। জেএমবি, জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম ও হিজবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ধর্মীয় সংগঠনের সদস্যরা দেশব্যাপী অস্থিরতা ও সহিংসতা সৃষ্টিতে নিয়োজিত। ১৮ দলের আশ্রয়ে দেশবিরোধী, জনকল্যাণবিরোধী, সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী অপপ্রয়াস অব্যাহত আছে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু শ্রেণির উপাসনালয়, ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ও উগ্রধর্মীয় গোষ্ঠী ধারাবাহিক সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে তাদের রয়েছে নাশকতার মহাপরিকল্পনা। সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। অপশক্তির চরমপন্থার বিপরীতে সরকারের উদারতা ও শৈথিল্যের অবকাশ নেই।

জননিরাপত্তা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে র্যাবের অভিযান, যৌথবাহিনীর তৎপরতা, সেনাটহল কার্যকর হয়েছে। অপরাধীরা যতই সংগঠিত ও তৎপর হোক না কেন তাদের জনসমর্থন নেই। জনসমর্থনহীন তৎপরতায় সমর্থন দিয়ে, পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সরকারকে শক্তহাতে জঙ্গিবাদী অপশক্তিকে, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের, নাশকতার অপশক্তিকে, স্বাধীনতাবিরোধীদের মোকাবেলার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।

আইনশৃঙ্খলার বিপর্যয় ঘটলে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। পাকিস্তানের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে পুনরায় ২০১৩ সালে। ’৭১ সালে তারা বাঙালিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করে পরাজিত হয়েছিল। পাকিস্তানের আইএসআই-এর সক্রিয় তৎপরতাকে এদেশে সফল হতে দিচ্ছে জামায়াত-বিএনপি। পাকিস্তান সংসদে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে হত্যাকা- বলে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেছে।

এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবাদ জানালেও বেগম খালেদা জিয়া কোনো নিন্দা জানাননি। এতে প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়ার দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিরোধী অবস্থান। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছেন, পুরস্কৃত করেছেন। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া একই নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। ক্ষমতালোভী খালেদা দেশ ও জনগণবিরোধী শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিনষ্টের জন্য।

তাই বামদলসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন দলকে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে অগ্রসর হতে হবে। প্রগতিবিরোধীদের মাধ্যমে এদেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার সুরক্ষা হবে না। বিএনপির অবস্থা ক্রমশ মুসলিম লীগের মতোই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বী এ দলে কোনো প্রগতিশীল নেতৃত্ব নেই, গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিত্ব নেই। দরকার নতুন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।


দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে সম্পন্ন করে নববর্ষকে বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন মেরুকরণের দিকে নিয়ে যেতে হবে। একুশ শতকের উপযোগী নেতৃত্ব, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ভারত একটি উদীয়মান বিশ্বশক্তি। তাকে পাশে রেখে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। তরুণদের জাগ্রত চেতনাকে বলিষ্ঠ করতে হবে।

তাদের মধ্য থেকে প্রগতিশীল নেতৃত্ব ও সুশীল সমাজ বেরিয়ে আসবে আগামীতে। সোনার বাংলা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৪২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। দেশকে মধ্যম আয়ের উপযোগীরূপে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে ২০২১ সালের মধ্যে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনেকাংশে বাস্তবায়িত হয়েছেÑএ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

অপশক্তিসমূহের অপপ্রয়াস ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা হতে দেশকে, জনগণকে নিরাপদ রাখতে হবে। অপশক্তির দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার উৎস বন্ধ করতে হবে। বেকার ও দরিদ্র, তরুণ ও বিভ্রান্তদের সুপথে আনয়নের সচেতনতামূলক উদ্যোগ দরকার। দরিদ্রদের জামায়াতিকরণের প্রক্রিয়া রোধ করতে হবে। ত্রাণ, সাহায্য, ঋণ ও পুনর্বাসনের নামে জামায়াতিকরণের উদ্যোগ প্রতিহত করা প্রয়োজন।

জঙ্গিসন্ত্রাস ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের তৎপরতা সন্ধান করে সেগুলোর কেন্দ্র সমূলে নির্মূল করতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাজনীতিতে সহায়তা দিতে হবে। অপশক্তিসমূহের অপতৎপরতা রোধের বিকল্প নেই। জঙ্গিবাদ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিপরীতে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল চাই।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.