আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিয়াল যেভাবে কুকুরের শত্রু হলো

এই সেই ............. তখন ছিল শীতকাল, বাংলা দিনপঞ্জিতে চলছিল তখন পৌষ মাস। সেই সময় শীতের প্রকোপে অঞ্চলের সকল পুকুরের পানির উপর বরফের স্তর জমে পরিবেশ করে তুলেছিল ভয়াবহ। কোথাও খাবার উপযোগি পানি নেই। বনে পশু পাখি সবাই তখন অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছিল। শিয়ালও তাদের মতো মহা বিপদে ছিল, পানি পাওয়া না গেলে সে বাঁচবে কিভাবে? কুকুর ছিল তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

কুকুর কাজ করত একটি গৃহস্থের ঘরে। কুকুরের মাধ্যমে শিয়াল জানতে পারল ঐ গৃহস্থের ঘরে পানি আছে এবং কুকুর ঐ বাড়ি থেকে প্রতিদিন পানি নিয়ে আসে। শিয়ালের দুরবস্থার কথা জানতে পেরে কুকুর শিয়ালকে শীত না কমা পর্যন্ত কুকুরের বাসাতেই থাকার পরামর্শ দেয়। কুকুরের আমন্ত্রণ পেয়ে শিয়াল খুশী মনে তার থাকার সকল সরঞ্জাম নিয়ে কুকুরের বাসায় অতিথি হিসেবে বসবাস শুরু করে। শিয়াল কুকুরের বাড়িতে থাকতে আসায় কুকুরও খুশী।

কুকুরের ছিল ৫টি বাচ্চা যাদের দেখা-শোনা করার মত কেউ ছিল না। এখন শিয়াল আসায় সেই বাচ্চাদের দেখা-শোনা করতে পারবে, লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিতও করতে পারবে। শিয়ালও ফুটফুটে ৫টি বাচ্চা দেখে মহা-খুশী। কুকুর প্রতি সন্ধ্যায় চলে যেত তার গৃহস্থের বাড়িতে। গৃহস্থের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া সেরে সারারাত গৃহস্থের ঘরদোর পাহারা দিত এবং সকালে কিছু খাবার দাবার নিয়ে নিজ বাসায় ফিরে আসত।

বাসায় এসেও দুচোখ এক করার সুযোগ ছিল না তার। শিয়াল অতিথি হিসেবে তার বাসায় আসার আগে সেই তার বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে যেত, শিকার করতে শেখাত, পড়তে শেখাত, পাহারা দিতে শেখাত যা এখন শিয়াল নিজেই নিজ উদ্যোগে বাচ্চাদের শেখাচ্ছে দেখে কুকুর মনে মনে কিছুটা শান্তি পেল। যাক এখন অন্তত কিছুটা শান্তিতে ঘুমানো যাবে। শিয়াল প্রিয় বন্ধুর বাসায় অতিথি হিসেবে এসে ভেবেছিল অতিথি হিসেবে যেহেতু এসেছে তাই অন্তত ভাল কিছু খাওয়া যাবে। মোরগ পোলাও, মুরগী শিরনি এসব আরো কত কি খেতে পাবে ভেবে সে খাবারের অপেক্ষায় ছিল।

কিন্তু গৃহস্থের বাড়ি থেকে কুকুর যে খাবার আনল তা দেখে শিয়ালের আশার মুখে চুনকালি পরল। কুকুর এনেছে বাসি ভাত, মাংসের হাড়, মাছের মাথার অল্প অংশ। এসব কুকুরের পেটে হজম হতে পারে তাই বলে শিয়ালের পেটে এসব হজম হবে? অতিথিকে কিভাবে আপ্যায়ন করতে হয় তা কুকুর এখনো শিখল না। শিয়াল হতাশ হয়ে এসবই খেল, বিপদে যেহেতু পড়েছে খেতে তো হবেই। --------------------- এভাবেই চলল কয়েকদিন।

ইতিমধ্যে শীতের বুড়ি হাটতে হাটতে পা রেখেছে পৌষ থেকে মাঘে। কুয়াশার শীতল চাদর জড়িয়ে প্রকৃতি গুটিয়ে থাকে সারাক্ষণ। তবুও নিয়ম করে কুকুরকে যেতে হয় তার কর্মস্থলে। বাসায় থাকে শুধু শিয়াল ও কুকুরের ৫টি বাচ্চা। কুকুর গৃহস্থের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর শিয়াল প্রতিদিনের মতই কুকুরের বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে বসে, পড়াতে বসে।

আজ শিয়াল কুকুরের বাচ্চাদের ডেকে বলল-, -আজ আমি তোমাদের অংক শেখাব। কুকুরের সবকটি বাচ্চা একস্বরে জানতে চাইল "অংক কি?" -"অংক হলো হিসাব করার মাধ্যম। " শিয়াল জবাব দিল। -"অংক দিয়ে কি হয়?" -"অংক জানলে তোমরা তোমাদের সংখ্যা জানতে পারবে, তোমাদের সাথে নতুনকে যোগ করতে পারবে, পুরাতনকে বিয়োগ করতে পারবে। " -"কিভাবে জানতে পারব?" বাচ্চারা উৎকণ্ঠিত কণ্ঠের জানতে চাইল।

-আচ্ছা আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, তোমরা সকলে গোল হয়ে বসো। তারপর একজন থেকে বলে যাও "এক, দুই, তিন, চার, আমরা একাই সবার, সময় হবে পাবার। " আজ তোমরা এতটুকুই পড়ে মুখস্থ করো। এভাবে প্রতিদিন অল্প অল্প করে তোমাদের অংক শেখানো হবে। ------- সকালে কুকুর কাজ থেকে ফিরে বাচ্চাদের প্রশ্ন করল-, -"কাল তোমরা কি করলে?" -"শিয়াল মামা কাল আমাদের অংক শিখিয়েছেন।

" বাচ্চারা জবাব দিল -"তা কি অংক শিখিয়েছে শুনি?" -"এক, দুই, তিন, চার, আমরা একাই সবার, সময় হবে পাবার। " সমস্বরে সবাই বলে উঠল -"বাহ! খুব ভাল, খুব ভাল। তোমরা তোমাদের শিয়াল মামার কাছ থেকে আরো এমন অংক শিখো। ঠিক আছে?" -"আচ্ছা ঠিক আছে। " বলে সবাই সায় দিল।

--------- প্রতিদিনের মতো আজ সন্ধ্যায়ও কুকুর চলে গেল তার গৃহস্থের বাড়িতে। আর এই সুযোগে শিয়াল বাচ্চাদের নিয়ে অংক শেখাতে বসল। -"বাচ্চারা, কালকের অংকটি তোমাদের মনে আছে?" -"জী শিয়াল মামা। " বাচ্চারা জবাব দিল। -"আচ্ছা তাহলে বলতো কালকের অংকটি কি ছিল? আর যে সব শেষের শব্দটি বলবে সে আমার কাছে চলে আসবে আমি তাকে পাঠশালায় ভর্তি করে দিব।

" বাচ্চারা আগের মতো গোল হয়ে বসে একে একে বলতে লাগল "এক, দুই, তিন, চার, আমরা একাই সবার, সময় হবে পাবার। " সব শেষে যে বাচ্চাটি সর্বশেষের শব্দটি উচ্চারণ করল সে শিয়ালের কাছে চলে আসল। শিয়াল তাকে একপাশে দাড় করিয়ে রেখে অন্যদের নতুন অংক শেখাতে ব্যস্ত হলো। তাই সে তাদের আগের মতো গোল হয়ে বসতে বলল এবং তাদের নতুন অংকটি শিখিয়ে দিল ও বাচ্চারা গোল হয়ে বসে একে একে বলতে লাগল, "পাঁচ, ছয়, সাত, আট, চার জনের এক খাট, তিনে বসে মোদের হাট। " আর সেই বাচ্চাটিকে নিয়ে শিয়াল চলল পাঠশালায় ভর্তি করতে।

পরদিন কুকুর এসে বাচ্চাদের কাছে জানতে চাইল-, -"তোমরা নতুন কি অংক শিখলে?" বাচ্চারা সমস্বরে বলতে লাগল -"পাঁচ, ছয়, সাত, আট, চার জনের এক খাট, তিনে বসে মোদের হাট। " নতুন অংক শুনে কুকুর খুব খুশী। যখন জানল একজনকে পাঠশালায় ভর্তি করানো হয়েছে তখন সে আরো খুশী হলো শিয়ালের প্রতি। এবার তার বাচ্চারা শিক্ষিত হবেই। ---------- ঐদিনও সন্ধ্যায় কুকুর চলে যাওয়ার পর শিয়াল বাচ্চাদের নতুন অংক শেখালো এবং আগের অংকটি থেকে শেষের জনকে পাঠশালায় নিয়ে গেল।

নতুন অংকটি হলো "নয়, দশ, এগার, বারো, দুই জন এক করো, এক জন হবে বড়ো। " পরের দিনও সে নতুন অংক দিল এবং আগের অংকের শেষের জনকে পাঠশালায় নিয়ে গেল। এবারের অংকটি হলো "তের, চৌদ্দ, পনের, ষোল, পরের কথা সব ভুলো, শূন্যের পিঠে এবার ঝোলো। " -------------- শীতের বুড়ি ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে পেরিয়ে যাচ্ছে শীতকালের সীমানা। বসন্ত চলে এসেছে দুয়ারে।

চারজনকে পাঠশালায় ভর্তি করানোর পর তখন শুধু একজন বাকি থাকল শিয়াল তাকেই নতুন অংক শিখিয়ে চলল। একদিন কুকুর বাসায় এসে তার একমাত্র বাচ্চাকে প্রশ্ন করল- -"এখন কি অংক শিখছ?" বাচ্চাটি বলল "সতের, আটার, উনিশ, কুড়ি পালাচ্ছে দেখ শীতের বুড়ি, এবার বাপু সরে পরি। " এই অংকটি শোনেই কুকুরের মনে শন্দেহ তৈরি হলো। তাই সে শিয়ালকে ডেকে তার বাকি চার বাচ্চার কথা জানতে চাইল। শিয়াল বলল তারা খুব ভালো আছে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে।

কুকুর এতটুকু শুনেও খুব আস্বশ্ত হতে পারল না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল। আজ বিকালে কাজে যাবার নাম করে লুকিয়ে থাকবে এবং দেখবে কোন পাঠশালায় তার বাচ্চাকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা নামার আগে কুকুর শিয়ালকে সবকিছু দেখতে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। শিয়াল এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল তাই সে সর্বশেষ বাচ্চাটিকে নিয়ে পাঠশালায় রওনা হলো।

শিয়াল বাসা থেকে বের হওয়া পরই কুকুর পেছন থেকে তাকে লক্ষ্য রাখতে থাকল। চারদিকে রাত্রির নিস্তব্ধতা। কালো ছায়ায় ঢেকে রেখেছে সমগ্র অঞ্চল। মাঝে মাঝে দুর থেকে ভেসে আসছে নিশাচরের ডাক। অনেকদূর আসার পর কুকুরের শন্দেহ যখন ভুল মনে হতে লাগল তখন লক্ষ্য করল শিয়াল তার বাচ্চার ঘাড়ে দাঁত বসাতে চাইছে।

তখন সে দৌড়ে গিয়ে শিয়ালকে তাড়া করল। আর শিয়াল কুকুরকে দেখে বাচ্চা ফেলে দৌড়ে পালিয়ে গেল। কুকুরের আর বুঝতে বাকি রইলা তার বাকি চার সন্তান পাঠশালায় গিয়েছে নাকি পেট-শালায় গিয়েছে। শিয়ালকে অন্ধের মত বিশ্বাস করারই ফল হলো তার সন্তান হারানো। সে এখন বুঝতে পারছে সন্তানের দেখা-শোনা অন্যের হাতে নয় নিজেকেই করা উচিত।

সেই থেকে শিয়ালের সাথে কুকুরের শত্রুতা শুরু। বংশানুক্রমিক-ভাবে সেই শত্রুতা আজো চলছে এবং হয়ত চলবে আজীবন। শিয়ালকে এখন দেখা মাত্রই কুকুর তাড়া করে নিয়ে যায় সীমানার বাহিরে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।