আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বজুড়ে জ্বালানীর সঙ্কট কি আসন্ন?

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো...

বিশ্বজুড়ে জ্বালানীর সঙ্কট কি আসন্ন?
হাসান কামরুল
জ্বালানী ব্যবস্হার প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক জীবনের মহোত্তম ভিত গড়ে উঠেছে । পৃথিবীজুড়ে মোট জ্বালানী ব্যবহারের শতকরা ৩৭ ভাগ আসে তেল থেকে, ২৫ ভাগ কয়লাভিত্তিক, ২৩ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক এবং বাকি ১৫ ভাগ বিকল্প জ্বালানী হাইড্রো, নিউক্লিয়ার, ও বায়ো মাস থেকে পুরণ করা হয়। কয়লা, নিউক্লিয়ার শক্তি ও পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় সবচেয়ে বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাস মুলত গৃহস্হালী কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে গত ৪৪ বছর পৃথিবী ব্যাপী তেলের ব্যবহার ছিল অগ্রগণ্য।

৬১ বছর ধরে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খননে ঝুকে পড়েছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। ১৩৩ বছর ধরে পৃথিবীতে কয়লার ব্যবহার হয়ে আসছে । যা কিনা সবচেয়ে পৌরণিক জ্বালানী ব্যবস্হা বলেও বিবেচ্য । সেই সঙ্গে পৃথিবীজুড়ে প্রাকৃতিক সম্পদ ভিত্তিক জ্বালানীর চাহিদা বেড়েছে হাজারগুন।

Click This Link

এক যুক্তরাষ্ট্রই ব্যবহার করে পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ২৫ ভাগ তৈল।

যার ৭০ ভাগই আমদানি নির্ভর। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ তেল ও গ্যাসের মজুদের হিসেব করলে এ অঙ্কটা আরো পরিস্কার হবে। মোট মজুদের ৬১ ভাগ তেলের মজুদ রয়েছে শুধুমাত্র মধ্যপাচ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৪ভাগ। ৬৬ দশমিক ৩ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাসের মুজদ রয়েছে মধ্যপাচ্য ও রাশিয়াজুড়ে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট গ্যাসের মজুদের পরিমাণ মাত্র ৩ দশমিক ৪ ভাগ।


বর্তমানে এক ব্যারেল ক্রুড ওয়েল বা অপরিশোধিত তেলের দাম ১৪৫ ডলার এবং প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ প্রাকৃতিক গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার দর ১০ ডলারেরও বেশি। যদি এ অব¯হা চলতে থাকে তাহলে সামনের সময়ে পৃথিবীময় আবার জ্বালানী সঙ্কটের মুখে পড়বে। যদিও ১৯৭৪ সালের জ্বালানী সঙ্কটকেই গত ৪০ বছরের সবচেয়ে বড় সঙ্কট বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু জ্বালানীর সহজলভ্যতা করা না গেলে এর চেয়ে ভয়াবহ সঙ্কট বিশ্ববাসির জন্য অপেক্ষা করছে। এনার্জি ইনফরমেশন এজেন্সি’র দেয়া তথ্য মতে, এক যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের প্রয়োজন পড়ে এবং এ চাহিদা ক্রমাগত হারে বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি করেছে ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট এবং চলতি (২০১৪) বছরের জন্য এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছে প্রায় দ্বিগুন ৬ টিসিএফ। যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুতের শতকরা ৪৮ ভাগ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে এসেছে বলে ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পৃথিবীর মোট তেল রিজার্ভের শতকরা ৮৫ ভাগ মজুদই রয়েছে আফ্রিকা, রাশিয়া , কাসপিয়ান ও পারস্য অঞ্চলে এবং গ্যাস রিজার্ভের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে রাশিয়া, ইরান ও কাতার এ তিন রাষ্ট্রে। বিশ্বব্যাপী ভবিষ্যত জ্বালানী সঙ্কট নিয়ে রয়েছে নানান বিশ্লেষন। তাবৎ দুনিয়ার বড় বড় সব বিশ্লেষকদের কারো কারো মত এই যে, পৃথিবীজুড়ে না জ্বালানী সঙ্কট ছিল, না ভবিষ্যতে এ ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে।

তবে জ্বালানীর যে সঙ্কট মাঝে মাঝে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে হতাশ করে তোলে তা হলো ধনীক দেশগুলোর নীতিগত বৈষ্যম্যের ফল। আর বৈষম্যের গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দিতে য্ক্তুরাষ্ট্রে। জ্বালানী ব্যবহার ও নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে একমুখি নীতি । আগামি শতাব্দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হলে জ্বালানীর ক্রমাগত মজুদ বাড়াতে হবে। অন্যথায় সিকি শতাব্দীর পর জ্বালানী ব্যবহার ও সহজলভ্যতায় চীনের কাছে মার খাবে যুক্তরাষ্ট্র।

কেননা যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানী খাত ফসিল ফুয়েল ভিত্তিক হওয়ায় নি:শেষ হতে সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
পৃথিবীর পরাশক্তি দেশগুলোর অর্থনীতির ভিত কাপানো রাষ্ট্রের নাম চীন। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জ্বালানীর ব্যবহার ও নিত্যনতুন জ্বালানীর উৎস সন্ধানে চীন মরিয়া। ২০২০ সালের মধ্যে নবায়ণযোগ্য খাত থেকে চীন ১৩৭ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ¯িহর করেছে। আর যার জন্য চীনকে ব্যয় করতে হবে ২৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

যা হবে মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ১৬ ভাগ। অর্থাৎ ২০২০ সালের পর চীন তার মোট চাহিদার ১৬ ভাগ বিদ্যুৎ রিনিউভল খাত থেকে উৎপাদন করতে যাচ্ছে। যা হবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নবায়ণযোগ্য জ্বালানীর উৎসের ব্যবহার। এ ১৬ ভাগ বিদ্যুৎই চীনের অর্থনীতিতে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি করবে।

বসে নেই দক্ষিণ কোরিয়া।

জিজু আইসল্যান্ডে ইতোমধ্যেই স্হাপন করেছে ৫০০মেগাওয়াট বায়ুকল। যা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দ্বীপবাসির ২০শতাংশ জ্বালানীর চাহিদা মিটাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রমাগত জ্বালানীর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কার্বণ নি:সরণের পরিমাণও বাড়বে ক্রমাগতভাবে। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এ সময়ের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলবে। ফলশ্রুতিতে ২৬ দশমিক ৯ বিলিয়ণ টন কয়লার ব্যবহার গিয়ে পৌছবে ৪২ দশমিক ৯ বিলিয়ণ টনে এবং এ দেশগুলোতে কয়লা ব্যবহারের শতকরা হার বেড়ে দাড়বে ৫৯ শতাংশে।

এর পাশাপাশি এশিয় অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে আশার সঞ্চারক দেশ জাপান। যদিও দেশটির অর্থনীতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত। জাপানের অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি আণবিক শক্তি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশটি সুনামির আঘাতে কিছুটা হলেও অনবায়ণযোগ্য জ্বালানী থেকে সরে এসেছে। সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরিয় এ দেশটি ”গ্যাস হাইড্রেট” নামক নতুন প্রাকৃতিক সম্পদের বৃহত্তম মজুদের দেখা পেয়েছে।

যার পরিমাণ ১০০ ট্রিলিয়ণ ঘণ মিটার। যা জাপানিজদের মধ্যে নতুন আশা সঞ্চার করেছে। পাশাপাশি জাপান সৌরালোক ব্যবহারকে গৃহস্হালী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছে।

জ্বালানী সঙ্কট রীতিমত এক ভয়াবহ অর্থনীতি সঙ্কটকে উসকে দিচ্ছে। ১৯৭০ সালের জ্বালানী সঙ্কটের ফলে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও ও কানাডা’র অর্থনীতিতে মারাতœক ধস নামে ।

১৯৭৩ সালের সঙ্কটের পিছনে ওপেকের নীতিগত দুর্বলতা ও ইসরাইলের প্রতি ণড়স করঢ়ঢ়ঁৎ ধিৎ ’র পশ্চিমা বিশ্বের ক্রমাগত সমর্থনকেই দায়ী করা হয়। ১৯৭৯ সালের ইরানের রিভ্যুলুশের কারণে বিশ্বজুড়ে তৈল সঙ্কট দেখা দেয়। ২০০০ সালে বৃটেনজুড়ে ক্রুড ওয়েলের মুল্য বৃদ্ধির কারণে চরম অ¯িহরতা দেখা দেয়। ২০০০-২০০১ সালে ক্যালির্ফোনিয়াজুড়ে ছিল চরম বিদ্যুৎ সঙ্কট। ২০০৪ সালের আর্জেটিনার গ্যাস ক্রাইসিস।

উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি জ্বালানি সঙ্কটের মুখে কয়েক বছর ধরেই। ২০০০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত গোটা দুনিয়াজুড়েই ছিল ফসিল ফুয়েল সঙ্কট যার মুলে ছিল ইউএস ডলারের দর পতন। ২০০৮ ছিল মধ্য এশিয়া জুড়ে এনার্জি ক্রাইসিসের পিছনের কারণটা ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ এ অঞ্চলজুড়ে জলবিদ্যুৎই এনার্জির মুল নিয়ামক কিন্তু তাপমাত্রার অধিক নি¤œগমণ ও লো ওয়াটার লেভেলের কারণে জল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভাটা পড়ে যার ফলে প্রায় ১শত কোটি মানুষ পুরো বছর ধরেই জ্বালানী সঙ্কটের মধ্য দিয়ে পার করেছে। ২০০৫’র শেষের দিক থেকে শুরু করে ২০০৮’র শুরু পর্যন্ত ডিজেল ও কয়লার অপর্যাপ্ততার কারণে উদিয়মাণ দেশ চীন জ্বালানী সঙ্কটের মুখে পড়ে। ২০০৯ সালটিও বৃটেনের জন্য ভালো যায়নি।

এ বছরে বৃটেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করার ঘোষণার কার্যকর করার জন্য বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে পড়ে, যা পুরো বৃটেনের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়। ২০১০ ও ২০১১ সালটি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশগুলোকে ঔভাবে জ্বালানী সঙ্কটের মুখে না পড়লেও ২০১২ সালে ইরান ইস্যুতে সেই আশঙ্কাকে আবারো উসকে দেয়। ফলে ওপেকভুক্ত দেশগুলো ভবিষ্যত জ্বালানী সঙ্কট থেকে বিশ্বকে বাচাতে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অবরোধ বা যুদ্ধকে কৌশলগত কারণে অসমর্থণ করে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইরান আক্রমন থেকে পিছিয়ে পড়ে। পৃথিবীর মোট রিজার্ভের সিংহভাগ প্রাকৃতিক সম্পদই গুটি কয়েক দেশের হাতে।

তাই এ দেশগুলোর মর্জির ওপরই নির্ভর করছে আগামি দিনের পেট্রোডলারের রাজনীতি ও জ্বালানীর সহজলভ্যতা।

হাসান কামরুল: জ্বালানী ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক।
যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.