بسم الله الرحمن الرحيم -الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين، وعلى من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين
কথিত আছে যে, আজ থেকে প্রায় ৬ দশক আগে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতে গোনা ক’জন মানুষ নিয়ে হযরত মাওলানা ইলিয়াছ কান্ধলভী (রহ.) তাবলীগের দাওয়াতে মেহনত শুরু করেন। তাবলীগের এ মেহনত এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। হজরত ইলিয়াছ (র.) ১৩৫১ হিজরি সালে হজ্ব থেকে ফিরে আসার পর সাধারণ মুসলমানদের দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীনি শিক্ষা দিতে থাকেন। এরই মাঝে একদা তিনি মহানবী (স.) কে স্বপ্নে দেখেন এবং মহানবী (স.) তাকে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের জন্য নির্দেশ দেন। মহানবীর (স.) নির্দেশ মোতাবেক তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সূচনা করেন।
তারপর এ কাজকে আরও বেগবান ও গতিশীল করার জন্য এ উপমহাদেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও বুজর্গদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয় এবং দিলস্নীর কাছে মেওয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য ইজতেমা বা সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়। [এই কথিত কথা কতটুকু সত্য তা আমার জানা নেই]
এরপরই ক্রমেই তাবলীগের কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের গন্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.) এর মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলীগ শুরু হয়। তারপর ১৯৪৬ সলে বিশ্ব ইজতেমা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়।
এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গির পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গির ভবেরপাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব ইজতেমা সেই থেকে এ পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলীগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, তাবলীগ জামায়াতের সদর দফতর দিল্লীতে থাকা সত্বেও এর বার্ষিক সমাবেশের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়। কথিত আছে, তাবলীগ জামায়াতের মুরুবি্বদের বৈঠকে ইজতেমার স্থান নির্ধারণের জন্য নাকি লটারি হয়েছিল। সেই লটারিতে বাংলাদেশের নাম ওঠে।
আর সেই থেকেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ এ বিশ্ব ইজতেমা। ভারতের মুম্বাই ও ভূপালে এবং হালে পাকিস্তানের রায় বেন্ডে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও জনসমাগমের বিচারে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমাই বড় এবং বিশ্ব দরবারে বিশ্ব ইজতেমা বলতে বাংলাদেশের টঙ্গিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমাকেই বুঝায়।
বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন-উত্তরঃ-
** পৃথিবীর কোন দেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়?
বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
** বিশ্ব ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য কি?
বিশ্ব ইজতেমার মূল উদ্দিশ্য হলো ধর্মীয় কাজের জন্য মুসলমানদিগকে একত্রিত করা।
** ইজতেমা শব্দটি কোন ভাষা?
ইজতেমা শব্দটি আরবী ভাষা।
** ইজতেমা বলতে কি বুঝায়?
ইজতেমা বলতে ধর্মীয় কাজে একত্রিত বা সমবেত হওয়াকে বুঝায়।
** বিশ্ব ইজতেমার দায়িত্ব ও কর্তব্য কি ?
বিশ্বের আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে কুরআন-হাদিসের বয়ান শুনা ও তা বিশ্বের দরবারে পৌঁছিয়ে দেওয়া।
** তাবলীগ শব্দের অর্থ কি?
তাবলীগ শব্দের অর্থ হলো প্রচার বা প্রসার।
** তাবলীগ বলতে কি বুঝায় ?
তাবলীগ বলতে ইসলাম ধর্মের কর্মকাণ্ডের প্রচার ও প্রসারকেই বুঝায়।
** চিল্লা বলতে কি বুঝায় ?
চিল্লা বলতে ১৪/১৫ জন মুবাল্লিগ ঈমান ও আমলের কাজে ৪০ দিন যে কোন মসজিদে ইবাদতে মগ্ন থাকাকে বুঝায়।
** একটি চিল্লায় কত জন মুবাল্লিগ অংশ নেয়?
একটি চিল্লায় ১৪ থেকে ১৫ জন এর মত মুবাল্লিগ অংশ নেয়।
** এক চিল্লা কত দিনে হয় ?
এক চিল্লা ৪০ দিনে হয়।
** চিল্লাদানকারীরা কি কাজে নিয়োজিত থাকেন ?
চিল্লাদানকারীরা বিশ্বাবাসীর নিকট তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাতসহ ইমান আমলের দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত থাকেন।
** আখেরী মোনাজাতের উদ্দেশ্য কি?
আখেরী মুনাজাত এর উদ্দিশ্য হলো নিজ, পরিবার, দেশ, জাতী ও বিশ্ব শান্তির জন্য বিশেষভাবে দোআ করা।
** তাবলীগ জামাতের ১ম উদ্যোক্তা মুরব্বী কে ?
তাবলীগ জামাতের প্রথম উদ্যোক্তা মাওঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রাহঃ।
** মাওঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবীর রাহঃ-এর জন্ম স্থান কোথায়?
মাওঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবীর রাহঃ এর জন্ম স্থান ভারতের দিল্লীতে।
** তাবলীগ জামাতের ১ম সূচনা হয় কোন্ দেশে?
তাবলীগ জামাতের ১ম সূচনা হয় ভারতের দিল্লীতে।
** মাওঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রাহঃ কত সাল হতে এই মহতি কাজের দাওয়াতি কাজ শুরু করেন।
মাওঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রাহঃ হিজরী ১৩৪৫ সন হতে এই মহতি কাজের দাওয়াত শুরু করেন।
** মাওঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রাহঃ কত সালে ইন্তেকাল করেন?
মাওঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রাহঃ ১৯৪৪ ইংরেজী সনে ইন্তেকাল করেন।
** বাংলাদেশে কত সাল হতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ?
বাংলাদেশে ১৯৪৬ইং সন হতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।
** সর্ব প্রথম বাংলাদেশের কোথায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়?
সর্ব প্রথম ঢাকার কাকরাইলস্থ প্রাচীন তাবলীগ মসজিদে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে।
** বাংলাদেশ ২য় বিশ্ব ইজতেমা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
বাংলাদেশ ২য় বিশ্ব ইজতেমা চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে।
** বাংলাদেশে ৩য় বিশ্ব ইজতেমা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
বাংলাদেশে ৩য় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে ১৯৫৮ সালে।
** ১৯৬৬ সনে বিশ্ব ইজতেমায় কতজন মুসল্লী অংশগ্রহণ করেছিল?
১৯৬৬ সনে বিশ্ব ইজতেমায় মাত্র ৪৫০০ জন মুসল্লি অংশগ্জরহণ করেছিল।
** ১৯৬৬ সালে মুসল্লীদের পানির জন্য কতটি হস্ত চালিত নলকূপ বসানো হয়েছিল ?
১৯৬৬ সালে মুসল্লীদের পানির জন্যমাত্র ১০টি হস্ত চালিত নলকূপ বসানো হয়েছিল।
** বর্তমানে ইজতেমা ময়দানে অঢেল পানি সরবরাহের উৎস কি?
৪টির অধিক বিদ্যুৎ চালিত গভীর প্রডাকশন নলকূপ।
** বর্তমানে বিশ্বে কতটি জামাত তাবলীগ জামাতে মেহেনত করে যাচ্ছে?
প্রায় ২০০ শতের অধিক জামাত।
** বর্হিঃবিশ্বে কতটি দেশ তাবলীগ জামাতে মেহেনত করে যাচ্ছে?
প্রায় ১১২টি দেশ।
** বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের সদর দপ্তর কোথায়?
বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের সদর দপ্তর ঢাকা শহরের কাকরাইলস্থ তাবলীগ মসজিদে।
** বিশ্ব ইজতেমায় মুসলীম মুসল্লী ছাড়া অন্য কোন ধমর্মের লোকেরা অংশগ্রহণ করে?
হ্যাঁ, প্রায় ২০০ শত সনাতন ধর্মের লোকেরা অংশ গ্রহণ করে থাকে (জরিপ অনুযায়ী)।
** তাবলীগ জামাতে কি কি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়?
তাসকিল, জুড়নেওয়ালে জামাত, গাশ্ত, চিল্লা, সাল, তালিম, বয়ান, এলান, আমির, মেহনত, জিম্মাদার, জামাত, সাথী, মামুর,
মোতাকাল্লেম, হযরতজী, উসুলি ইত্যাদি।
** ঢাকা শহরে কাকরাইলস্থ তাবলীগ মসজিদের অপর নাম কি?
জিন্দা মসজিদ।
** কাকরাইল মসজিদকে জিন্দা মসজিদ বলা হয় কেন?
প্রায় ৪০ বছর যাবৎ এই মসজিদের কোন তালা-চাবি নেই, সর্বক্ষণিক মুসল্লীরা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে। (( উপাসনায়রত থাকে, প্রতি
মুহূর্তেআরাধনা চলে (এই শব্দ দুইটা বাদ দেওয়া হল)) যার ফলে দরজা বন্দের প্রয়োজন হয় না বলেই সর্বদা জিন্দা।
** বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লী কারা?
বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লী সমগ্র বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা।
** বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লীদের পার্থক্য কিরূপ?
কোন পার্থক্য বা ভেদাভেদ নেই, আমির ফকির সকলেই এখানে সমান সমান।
** বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সহজ-সরল খাবার কি?
সাধারণত ডাল খিচুরি।
** বিশ্ব ইজতেমায় পত্রে কাওকে দাওয়াত দেয়া হয় কি না?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, কাওকেই দাওয়াত দিতে হয় না, ধর্মপ্রাণ মুসলমারা আল্লাহর দাওয়াতে সকলে নিজ
নিজ দায়িত্ব অংশগ্রহণ করে থাকেন।
** বিশ্ব ইজতেমায় মুনাজাতের নির্দিষ্ট সময় কখন?
সকাল ১০টা হতে জোহরের আগ পর্যন্ত।
** বিশ্ব ইজতেমায় আগত অধিক সংখ্যক বিদেশী মেহমান কোন্ দেশের?
পাকিস্তানের।
** বিশ্ব ইজতেমায় প্যান্ডেল নির্মাণের শ্রমিক কারা এবং কত দিন পর্যন্ত সময় লাগে?
ধর্মপ্রাণ সকল শ্রেণীর স্বেচ্ছা শ্রমিক প্রায় ৩ মাসের অধিক সময় লাগে।
** বিশ্ব ইজতেমায় অর্থ যোগানদারী কারা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশী-বিদেশী ধর্মপ্রাণ বিত্তশালীরা।
** বিশ্ব ইজতেমা আমাদেরকে কি শিক্ষা দেয়?
বাদশা, আমির, ফকির সকলেই সমান, সকলেই আল্লাহর বান্দা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।