রোববার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস-২০১৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই পরামর্শ দেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
মাহবুবে আলম বলেছেন, “মন্ত্রণালয়কে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সম্পদের বিবরণ নিতে হবে এবং তা ঠিক আছে কি না নিয়মিত যাচাই করতে হবে। কারণ সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে উদ্দেশ্য সফল হবে না।
“কিছু কথিত মুক্তিযোদ্ধা আছে, যারা সরকারের কাছে চাকরি চায়। তারা সবাই-ই কাস্টমস অথবা সেটেলমেন্ট অফিসে চাকরি চায়।
কেউ শিক্ষক হতে চায় না। এ থেকে বোঝা যায় কাস্টমসে কি আছে। ”
কর পরিশোধে কিছু ব্যবসায়ীর আন্তরিকতা না থাকার এবং শুল্ক ফাঁকির দেয়ার প্রবণতারও সমালোচনা করেন তিনি।
“আমি ব্যবসায়ীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সব ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দেয়ার বিষয়ে আন্তরিক নন। অনেকেই বিভিন্ন বাহানায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের বোকা বানায়।
আবার অনেক ব্যবসায়ী আদালতের আশ্রয় নেন। আমি বলছি না সব ব্যবসায়ী অন্যায়ভাবে আদালতের আশ্রয় নেন। ”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,“এইচএস কোড পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এক পণ্য আমদানিতে অন্য পণ্যের কোড ব্যবহার করে থাকেন তারা।
“তাছাড়া ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির সুযোগও ট্যাক্স ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অনেকেই বড় বড় লরি, গাড়ি, আমদানি করে ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে দেখায়। ”
এসব ক্ষেত্রে মামলা হলেও অনেক সময় তা সরকারের পক্ষে যায় না বলে হাইকোর্টে রাজস্ব বোর্ড থেকে দুজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করেন রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা।
রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনিও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সৎ ও নীতিবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “পরিবর্তিত বিশ্বে আপনাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও মানবিক সহায়ক দিক থাকতে হবে। ”
কাস্টমস আইন প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে তা সকলের জন্য সহজবোধ্য করার পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য যেভাবে বাড়ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে কাস্টমস বা আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আর থাকবে না। আমরা হয়ত তখন ‘ইউজার ট্যাক্স’ নেব, যা পানি, সেচ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাত থেকে আসবে। ”
গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আয় বাড়ায় শুল্ক কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ দ্বিগুন হতে কমপক্ষে ১০ বছর লেগেছে।
এবারই প্রথম পাঁচ বছরে দ্বিগুন হয়েছে। এসবই হয়েছে রাজস্ব আয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আন্তরিকতার কারণে। ”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “স্থানীয় শিল্পকে সহায়তা করতে শুল্ক হার অনেক কমানো হয়েছে। আগামীতে কাস্টমস আইন করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি সেটা আরো ব্যবসাবান্ধব করা হবে।
”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার শহীদুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সূচনা বক্তব্য রাখেন পানগাঁও কাস্টম হাউজের কমিশনার মাসুদুল কবীর।
‘যোগাযোগ: সহযোগিতার মাধ্যমে তথ্য বিনিময়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের ১৭৯টি সদস্য দেশে এবারের দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের কাস্টমসের ৬টি কাস্টমস হাউজ, ৩৯টি এলসি স্টেশন ও ১৪টি করিডোর কার্যকর রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি চোরাচালান ও মাদক পাচারসহ সীমান্ত পর্যায়ে বিভিন্ন বেআইনি কার্যক্রম বন্ধে কাজ করছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।