বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে দেশীয় উদ্যোক্তারা মজবুত ভিত্তি তৈরি করে নিয়েছেন। নিজস্ব প্রচেষ্টায় গত এক দশকে একাধিক পণ্যের ক্ষেত্রে তাঁরা দেশকে স্বাবলম্বী করেছেন।
গত শতাব্দীর শেষ দশকেও দেশের বাইরে থেকে বেশির ভাগ ইলেকট্রিক পণ্য আমদানি করতে হতো। তবে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন বৈদ্যুতিক তার থেকে শুরু করে ফ্যান, সুইচ, সকেট, মাল্টি কট, লাইট ফিটিংস ইত্যাদি মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ দেশেই তৈরি হচ্ছে।
এসব পণ্য উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ‘ইউরিয়া রেজিনস’ আমদানি করতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। আবার বিদেশ থেকে সম্পূর্ণ তৈরি সুইচ, সকেট, প্লাগ ইত্যাদি আমদানিতেও একই পরিমাণ শুল্ক দিতে হয়। এ কারণে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তারা পড়ছেন বিপাকে।
এ জন্য বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইএমএমএ) আসন্ন ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে ইউরিয়া রেজিনসের আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে সমিতি বৈদ্যুতিক সুইচ, প্লাগ ও সকেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করাসহ একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছে।
সমিতির নেতারা দাবি করেন, ইউরিয়া রেজিনসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান বছরে ৩৬ টন কাঁচামাল উৎপাদন করে, যা কিনা চাহিদার ২ থেকে ৩ শতাংশ। দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতে ২০১১-১২ অর্থবছরে আমদানি শুল্ক ১২ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। আর এ কারণে চলতি অর্থবছরে ওই কাঁচামালের প্রায় ৪০ শতাংশ আমদানি কমে যাবে।
এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘কাঁচামাল আর তৈরি পণ্যের আমদানি শুল্ক কখনোই সমান হতে পারে না।
এমনটি হলে দেশীয় শিল্প টিকে থাকতে পারবে না। ’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশীয় প্রতিষ্ঠান যদি ওই কাঁচামাল পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে, তবে আমরা আমদানি করব না। তবে তা না হলে শুল্ক কমাতে হবে। একজনকে বাঁচাতে এক হাজারজনের ক্ষতি করা হবে—এমনটি হতে পারে না। ’
সারা দেশে ছোট-বড় ১৫ শতাধিক ইলেকট্রিক পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আছে।
তবে বিইএমএমএর সদস্যসংখ্যা প্রায় এক হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
জানা যায়, ১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘পাক কেব্লস’ দেশে প্রথম বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন শুরু করে। স্বাধীনতার পর তা ইস্টার্ন কেব্লস নামে উৎপাদন করে। পরে এই খাতে যুক্ত হয় বিআরবি, প্যারাডাইজ, পলি, বিবিএস, খাজা, আজিজ কেব্লসসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০টি প্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিক তার তৈরি করছে। প্রায় ১০ বছর ধরে বৈদ্যুতিক তারের ক্ষেত্রে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানিও করছে। অন্যদিকে বৈদ্যুতিক পাখার চাহিদার ৯০ শতাংশ মেটাচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক পাখা ও যন্ত্রাংশ উভয় পণ্য আমদানি করতে ২৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত আছে।
এটি দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিচ্ছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
তবে উদ্যোক্তাদের দাবি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সহায়তায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান ডাম্পিং করে দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক পাখা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে নিম্নমানের পণ্য ও মূল্য কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েস) আমদানির ঘটনা দেশীয় এই শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ জন্য বৈদ্যুতিক পাখা আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ আরোপ করলে দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে বলে মনে করেন সমিতির সভাপতি।
এ ছাড়া তিনি হট রোলড স্টিলশিট ও এনামেলড কপার উইন্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের দাবি করেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।