আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিংশ শতকের সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকীেতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই

কবি, নাট্যকার, এবং বিশ শতকের সাহিত্যাঙ্গনের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস্। ইয়েটসকে ধরা হয় ঐতিহ্যগত ভাবধারার অত্যন্ত দক্ষতাসম্পন্ন একজন কবি। তিনি আয়ারল্যান্ডীয় ও ব্রিটিশ উভয় সাহিত্যেরই একজন প্রবাদ পুরুষ। তাঁর সাহিত্যকর্মে কেল্টিক সাহিত্য, লেডি গ্রেগরি এবং অ্যাবি থিয়েটারের স্থপতি এডওয়ার্ড মার্টিনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিদ্যামান। আইরিশদের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে স্বাধীন আয়ারল্যান্ডে তার রাজনৈতিক ভূমিকা, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিসহ সব কিছু মিলিয়ে ইয়েটসের কাব্যে রাজনীতি এবং আইরিশ জাতীয়তাবাদের প্রভাব প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যায়।

তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলী’র একটি সুদীর্ঘ মুখবন্ধও লিখেছিলেন। কিন্তু ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কার দেবার কারনে তিনি প্রকাশ্যে বহু পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের কবি প্রতিভার তীব্র সমালোচনাও করেছিলেন। উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস ১৯২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৩৯ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।

মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


(১৯১১ সালে তোলা আলোকচিত্রে উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস)
উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস William Butler Yeats ১৮৬৫ সালের ১৩ জুন আয়ার‌ল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনাও করেছেন ডাবলিনে, কিন্তু তাঁর শিশুকালের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আয়ার‌ল্যান্ডের শহর কাউন্টি স্লিগোতে। যুবক বয়সেই তাঁর কবিতা পড়ার শুরু, এবং এই বয়সেই তিনি আয়ারল্যান্ডীয় কিংবদন্তিগুলো ও অকাল্ট সাহিত্যের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। জাতীয়তাবাদে যেমন রাজনীতি মিশে থাকে, তেমনি থাকে আবেগের মাখামাখি।

একটু বাড়াবাড়ি হলেও বলা যায় যে আবেগ ছাড়া কোন জাতি জাতীয়তাবাদের জন্মই দিতে পারে না। ‘দি সেকেন্ড কামিং’, ‘ইষ্টার ১৯১৬’, ‘লিডা এ্যান্ড দি সোয়ান’সহ আরও কিছু কবিতায় কবি ইয়েটসের আইরিশ জাতীয়তাবাদের প্রতি প্রবল সহানুভূতি, ইংল্যান্ডের আক্রমনের কঠোর সমালোচনা ফুটে ওঠে। জীবনের অধিকাংশ সময় ইয়েটস আয়ারল্যান্ডের বাইরে কাটালেও জন্মভূমির প্রতি টান মোটেও কমেনি, জন্মভূমিকে ভুলেও যাননি। জন্মভূমি সবসময় ইয়েটসের কল্পনার ভেতরেই ছিল। আর তাই মাতৃভূমিকে অপমানিত হতে দেখে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছেন, অপমানিত বোধ করেছেন এবং কবিতার মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তুলেছেন।

তাঁর প্রথম পর্যায়ের কাজগুলো জুড়ে এই প্রভাবে ছাড়া দেখা যায়। উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত তাঁর এই কাজের ধারা চলতে থাকে। তাঁর সর্বপ্রথম কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে।

পাঠকদের জন্য উইলিয়াম বাটলার ইয়টসের "দি সেকন্ড কার্মিং"। এই কবিতাটিকে ইয়েটসের অন্যতম সেরা আধুনিক কবিতা বলা হয়।

১৯১৯ সালের জানুয়ারী মাসে কবিতাটি লিখিত হলেও কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে।
‘দি সেকেন্ড কামিং’
অনুবাদ: সুব্রত অগাষ্টিন গোমজে
ক্রমাগত চক্রে এক দিতে দিতে পাক
বাজ আর বাজিকের শোনে না তো ডাক
ভেঙ্গে পড়ে সবকিছু; কেন্দ্র আর পারে না আগলাতে;
সারা বিশ্ব ভরে যায় হাট-খোলা অরাজকতায়,
রক্ত-উদ্দীপিত ঢেউ বাঁধ ভাঙ্গে, ডুবে যায় তাতে
শুচিতার মহোৎসব দিকে দিগন্তরে;
নিরতিসংশয় সব শ্রেষ্ঠেরা, প্রত্যুত নিকৃষ্টেরা
পাশব প্রবল্যে সব টৈটম্বুর।
অবশ্য আসন্ন কোনো পুনরাবির্ভাব;
অবশ্য আসন্ন সেই দ্বিতীয়াগমন।
দ্বিতীয়াগমন! উচ্চারিত হবা-মাত্র এই শব্দাবলি
প্রপঞ্চ-প্রণব থেকে বিরাট প্রতিমা এক বেরিয়ে আমার
দৃষ্টিকে পীড়ন করে; কোনখানে মরুভূর তাতল বালিতে
বিকট আকৃতি এক, ধড় যার সিংহের, মুন্ড মানুষের,
চাউনি সূর্যের সম ফাঁকা, নির্দয়;
চলেছে মন্থর উরু টেনে টেনে, এদিকে চৌদিক বেড়ে তার
ঘৃণায় অস্থির মরুপাখিদের ছায়াগুলি চক্কর খায়।
আবার আধাঁর নামে; কিন্তু আমি এখন জানি, যে
দীর্ঘ কুড়িশতকের পাথরের ঘুমও
দু:স্বপনে করেছে তাড়িত এ দোদুল দোলনা
আর, কী এই কদর্য জন্তু, যার মাহেন্দ্রমুহূর্ত উপস্থিত,
গুড়ি মেরে চলেছে যে বেথলেহেমে জন্ম নিতে তার?


১৯২৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ইয়েটস।

তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে নোবেল কমিটির বর্ণনা ছিলো, “অনুপ্রেরণা জাগানো কবিতা, যা খুবই শৈল্পিকভাবে পুরো জাতির স্পৃহা জাগানো ভাবটিকে প্রকাশ করেছে। ” ইয়েটস ছিলেন কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত প্রথম আয়ারল্যান্ডীয়। তাঁকে বলা হয় সেই গুটিকয়েক সাহিত্যিকদের একজন যাঁদের সর্বোৎকৃষ্ট কাজগুলো লিখিত হয়েছে নোবেল পুরস্কার জয়ের পর। তাঁর এসকল কাজের মধ্যে আছে দ্য টাওয়ার (১৯২৮), এবং দ্য উইন্ডিং স্টেয়ার অ্যান্ড আদার পোয়েমস (১৯২৯)। ‘দি ওয়ানডারিংস অব অয়সিন’, ‘দি কেলটিক্ টোয়াইলাট’, ‘ক্যাথলিন নি হুলহান’ ‘অন বেইলেস্ স্ট্রান্ড’ এবং ‘এ্যাট দি হকস ওয়েল’ তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলী।

তবে ‘ওয়াইল্ড সোয়ানস্ অ্যাট্ কুল’ কবিতা গ্রন্থটি তাঁকে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। জীবনের শেষ বছরগুলোতে তিনি দুই মেয়াদে আইরিশ সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস কবি হিসাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৮৮০-র দশকে এবং ১৯৩৯ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আধুনিক ইংরেজি সাহিত্যে একজন অগ্রগণ্য কবি হিসাবে দাপটের সঙ্গে বিরাজ করেন। বিশেষ করে দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইয়েটস তার কবিতার মাধ্যমে এক দারুন প্রভাবশালী ভূমিকা রাখেন।

১৯৩৯ সালের ২৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরন করেন জাতিয়তাবাদী কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস্।

আজ তার ৭৫হতম মৃত্যুদিন। বিংশ শতকের সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের মৃত্যুবার্ষিকীেতে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.