আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁটা (২)

(১)
দরদর করে ঘামছি আমি। তুলি দেখে ফেলল না তো আমাকে? দেখে ফেললেই সব্বোনাশ। তবু আমি মরিয়া আজকে। দাঁত কামড়ে দাঁড়িয়ে আছি। কাল ওকে ফোনে বলতে শুনেছি হাতিরপুলে দেখা করবে, কিন্তু এত গাঢ় স্বরে কার সাথে কথা বলছিল অনেক কসরত করেও সেটা উদ্ধার করতে পারিনি।

ফলাফল খুব খারাপ হল। রাতে ঘুম হয় নি ঠিকমত আর সারাদিন ঝিমিয়ে এখন অফিস থেকে পালিয়ে তুলির পিছু পিছু চোরের মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। কাঁটাবনের কাছে এসে ওর রিকশাটা থেমে গেল, মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে তুলি রিকশা থেকে নামল। এদিকে নিজেকে আড়াল করতে আমি আমার রিকশার হুডের ভেতর প্রাণপণে গুটিসুটি মেরে বসে আছি। রিকশাওয়ালা ফিকফিক হাসছে, গলা দিয়ে আমার স্বর বেরুচ্ছে না, নইলে ব্যাটার জন্য একটা রামধমক পাওনা ছিল।


হঠাৎ বুকটা ধক করে উঠল। ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে খেয়ালই করিনি যে তুলির পাশে হাঁটতে শুরু করেছে সজল, হ্যাঁ পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছি-ওটা সজলই। কোনমতে রিকশাটাকে বিদায় করে ওদের পিছু নিলাম। পা ভারী হয়ে যাচ্ছে আমার। মাথার ভেতর সব গুবলেট পাকিয়ে যাচ্ছে।

মিনিট পাঁচেক ফেউয়ের মত ঘুরে টুরে আবিষ্কার করলাম যে ওদের হারিয়ে ফেলেছি। সামনে একটা রেস্তোরাঁ। হয়ত এর আলো আঁধারিতে গিয়ে বসেছে ওরা! আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না আমার। ভেতরে পা না বাড়িয়ে ফুটপাত ধরে এলোমেলো হাঁটতে শুরু করলাম আমি।
(২)
বরের সাজে সজলকে আরো বোকাটে লাগছে আজ।

মনটা ফুরফুর করছে আমার। কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছি নেমন্তন্ন। রাজীবকে অবশ্য টেক্কা দিতে পারছি না। ও এখন এই জগতে নেই, গোগ্রাসে খেয়েই চলছে। তুলি চোখের ইশারায় শাসন করছিল এতক্ষণ।

কাজ না হওয়ায় এবার চাপাগলায় ধমক লাগালো আমাকে
-কী হচ্ছে এসব? অমন রাক্ষসের মত করছ কেন?
-আরে তোমার বন্ধুর শুভ পরিণয় বলে কথা...খাবই তো!
তুলি গজগজ করতে থাকল। আমি আবার রাজীবের প্লেটে নজর দিলাম।
হপ্তাখানেক আগেও খুব মন খারাপের মত হয়েছিল আমার। ঝিল্লির সাথে এখন মাঝেমাঝে দেখা হয়ে যায়, টুকটাক গল্প হয়। কিন্তু এ অপরাধের শাস্তি তুলি এভাবে দেবে সেটা মেনেই নিতে পারছিলাম না।

সজলের সাথে আড়ালে দেখা করতে যাওয়া, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করা- সবই সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তুলি বুঝতে পারছিল আমার মনের মধ্যে কী চলছে, তবু ব্যাপারটা চেপে গেল। কয়েকদিন আগে রাজীবের কাছে জানতে পেলাম- সজলের বিয়ে, সে বিয়ের ঘটক নাকি আবার আমারই গিন্নি! পরে বিশদে জানতে পেলাম ওই দিনগুলিতে কনে বাছাই পর্ব চলছিল, আর সেখানে তুলির কাঁধেই ছিল গুরুদায়িত্ব! এই তবে রহস্য! রীতিমত হাঁফ ছেড়ে বাচলাম আমি।
এসব ভাবতে ভাবতে আরেক টুকরো মাছ প্লেটে নিয়ে আহ্লাদ করে খেতে শুরু করলাম আমি।
-আহ্‌ ধীরে...গলায় আবার কাঁটা বিঁধবে কিন্তু!
তুলির সাবধানবাণীকে তোয়াক্কা না করে বললাম
-কাঁটা? না, আর কাঁটা বিঁধবে না তো!
তুলি হাসছে, বাঁকা হাসি।


-------------------------------

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।