আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তুর ভূত দেখা

অন্তুদের সেই পুরনো ঝোপঝাড়ে ঘেরা সেই পোড়া মাটির পরিত্যক্ত বাড়িটির পাশেই ওরা ক'জন ক্রিকেট খেলছে। খেলতে খেলতে ওরা খেয়াল করল ঝুপ করে কীসের জানি শব্দ হলো। কিছুক্ষণ ওরা ইতিউতি করে শব্দটির সন্ধান করতে থাকল। ওদের দেখে একটি কালো রঙের ধূর্ত বিড়াল দৌড় মেরে পালিয়ে গেল। ছায়াময় বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই।

হঠাৎ ভয় পেয়ে গেল ওরা। ওরা মানে অন্তু, শান্ত, লিটু ও মনি। ব্যাট-বল নিয়ে বিড়ালটিকে ধরতে বীরের বেশে জংলা জায়গাটার বেশ ভেতর এসে পড়েছে ওরা। কিন্তু পরক্ষণই নিজেদের ছায়ার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠল ওরা। অদূরে দেখলো কালো রঙের বিড়ালটা একটি গাছের গুঁড়িতে বসে মিউ মিউ করে ডাকছে।

তার চোখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি ঠিকরে পড়ছে। শান্ত কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, চল অন্তু ফিরে যাই। আমার কিন্তু ভয় করছে। মনে হচ্ছে বিড়ালটি আসলে বিড়াল নয়। শান্তর কথায় ওরা চারজনই বোবা আর্তনাদ করে উঠল।

ভয়ে চারজনের শরীর যেন হিম শীতল হয়ে গেল। ওরা দেখল বিড়ালটা তার খোলস পাল্টে একটি কুকুরে পরিণত হয়ে গেল আর তখনই কুকুরটা তাদের দিকে তেড়ে এসে ঘেউ ঘেউ করে ডাক শুরু করল। অমনি শান্তরা পড়িমরি প্রাণপণ দৌড়ে জংলা ঝোপ ফেলে লোকালয়ে এসে পড়ল। কারও মুখে কোনো কথা নেই। ভয়ে আর বিস্ময়ে ওরা যে যার বাড়িমুখো হলো।

অন্তু চুপিচুপি পড়ার টেবিলে গিয়ে বসল। কিন্তু পড়ায় তার মনটা কিছুতেই বসছে না। জানলা দিয়ে তাকাতেই অদূরে যেন সেই চোখ সেই আগুনমুখো কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে চলছে। ভয়ে অন্তুর সারা শরীর দরদর করে ঘামতে লাগল। জানালার কপাটে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে ঢকঢক করে তিন গ্লাস পানি খেয়ে নিল সে।

তারপরও মনের ভেতর থেকে সে ভয়ার্ত ছবি। সেই অদ্ভুতুড়ে ডাক কিছুতেই মুছে ফেলা যাচ্ছে না। খাবার টেবিলে বসে খানাপিনায়ও রুচি নেই তার। খেল খুব অল্প। মা খেয়াল করলেন, আজ তার অন্তু সোনার খাবারে মন নেই।

কী রে অন্তু কী হয়েছে তোর? অন্তু বলল, কই কিছু না তো মা। মা বললেন, কিছু যদি নাই হবে, তবে আজ এত কম খাচ্ছিস কেন? মায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে অন্তু তাড়াতাড়ি খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে। অন্তু জানে মা কথার পিঠে কথা বলে আসল কথাটি ঠিক পেট থেকে বের করে ছাড়বে। সে জন্য অন্তু তার রুমে ঢুকে বিছানায় চাদর মুড়ে শুয়ে পড়ে। বারান্দায় পায়চারি করছিল সত্তর বয়সের দাদু ভাই।

অন্য দিনে তার সঙ্গে বসে অন্তু রাজ্যের গল্প জুড়িয়ে দেয়। কিন্তু আজ তার সঙ্গে দেখা না করতেই দাদু ভাইয়ের সন্দেহ হলো। তিনি চুপি চুপি অন্তুর রুমে ঢুকলেন, মুখ থেকে চাদরটা টেনে নিয়ে বললেন, কী রে ভাই; আজ আমার সঙ্গে দেখা করলে না যে। অন্তুর মুখ থেকে কোনো কথা সরে না। দাদুভাই ফের দরদমাখা কণ্ঠে বললেন, কী হয়েছে তোমার? আমাকে সব খুলে বলা যায় না।

অন্তু এবার মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক জবাব দেয়। দাদুভাই বললেন তাহলে এবার ওঠে বসো। অন্তু ওঠে বসলো, এবং আজ ঘটে যাওয়া জংলা জায়গার ঘটনাবলি আদ্যোপান্ত বর্ণনা করল। শুনে দাদু ভাই একটুও উষ্মা প্রকাশ করলেন না। তবে বললেন, সাহস থাকা ভালো কিন্তু অতি সাহস অনেক সময় বিপদের কারণ হয়।

অন্তু বলল, সেটা কী রকম দাদু? দাদু চোখের চশমাটা খুলে ভালো করে মুছে নিয়ে আবার চোখে লাগালেন। তারপর বললেন, সে অনেক দিন আগের কথা। আজকের আমাদের পোড়া মাটির জংলা জায়গাটার ভেতর তেমন কোনো ঝোপ ছিল না। ছিল নানারকম গাছের সুন্দর সমাহার। আমরা সেই গাছের গন্ধ শুঁকে শুঁকে বড় হয়েছি।

তখন ক্রিকেট খেলার তেমন প্রচলন ছিল না। আমরা ফুটবল, ডাংগুলি, মার্বেল খেলা নিয়ে মেতে থাকতাম। একদিন হলো কী, আমরা গভীর মনোযোগ দিয়ে ডাংগুলি খেলছি। হঠাৎ দেখি কান্নার শব্দ। যে দিক থেকে এই শব্দ ভেসে আসছে আমরা সে দিকেই ছুটে গেলাম।

একেবারে জংলা জায়গাটার ভেতরে যেতেই কান্নার শব্দটা দেখি আস্তে আস্তে মিইয়ে যাচ্ছে। আমরা একটি তেঁতুল গাছের নিচে দাঁড়ালাম। দেখি ফুটফুটে সুন্দরী একটি মেয়ে গাছের উপরে বসে দু'পা ঝুলিয়ে হি হি করে হাসছে। আরে এ তো মনা বেপারীর মেয়ে পুতলি। যে কিনা গেল বছর তেঁতুল গাছে ঝুলে আত্দহত্যা করেছে।

তবে কেউ কেউ বলে আত্দহত্যা নয়, কোনো অদৃশ্য শক্তি তার ওপর আসক্ত হয়ে ঘাড় মটকে তার রক্ত খেয়েছে। সে যাই হোক, ওই তেঁতুল গাছের ধারেকাছেও পারতপক্ষে আমরা কেউ যাই না। কিন্তু আজ হঠাৎ মৃত পুতলিকে জীবিত দেখে আমাদের অন্তরাত্দা শুকিয়ে কাঠ। আমরা পড়িমরি দে ছুট। পেছনে পুতলিও দৌড়াচ্ছে।

পরে শুনেছি মৃত পুতলির দুষ্ট আত্দা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন রূপ নিয়ে মানুষের ওপর ভরে করে ক্ষতিসাধন করে চলছে।

অন্তু বলে সে কী দাদু ভাই! কোনো দিন তো এই জংলা জায়গাটির মর্মান্তিক কাহিনীটি শোনাওনি। দাদু একটু থেমে তারপর বললেন, শোন অন্তু ভাই, বর্তমান ডিজিটাল যুগে সে কথা তোমরা কেউ বিশ্বাস করবে না বলেই এতদিন তা বলিনি। অন্তু ভাবে, তবে কি বিড়াল ও কুকুরের রূপ ধরে পুতলি তাদের তাড়া করেছিল।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।