আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তুর লাশঃ আত্মহত্যা / দুর্ঘটনা নাকি প্রফেশনাল ক্রাইম?

দৌড়ের উপর আছি কোন লাভ লসের হিসাব থেকে এই লেখা লিখিনি, শুধু নিজের প্রশ্নগুলোই সবার কাছে তুলে ধরতে চাই। প্রশ্ন করার আগে কিছু ভূমিকা দিয়ে নিতে চাই অন্তুর সাথে আমার পরিচয় অনেক দিনের। কিন্তু আমাদের দেখা হয়েছে অনেক কম, কথা হয়েছে অনেক বেশি। আমার ন'ফুপুর বাসার পাশের বাড়িটাই ওদের। আমার কাজিন ধ্রুব আর অন্তু, একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড।

হয়তোবা তার থেকেও বেশি। ধ্রুব'র সাথে আমার ফ্রেন্ডলি সম্পর্কটাই অন্তুর সাথে আমার মেশার সুযোগ করে দেয়। শুনেছি মামলা করার ইচ্ছা বা মানসিক শক্তি, কোনটাই ওর পরিবারের নেই। আমি শুধু চাই সত্য উদঘাটিত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই এই লেখার প্রয়োজনীয়তা।

আমি যতদূর জেনেছি, সেই ধারাবাহিকতাতেই লিখতে চেষ্টা করছি, ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী। গত ২৫ শে নভেম্বর রবিবার ছিলো আমার জন্মদিন। বলতে দ্বিধা নেই, সকালে উঠেই ফেসবুকে লগ ইন করেছিলাম কত মানুষ উইশ করেছে দেখতে। ছুটির দিন বলে অফিস যাওয়ার চিন্তা ছিলো না। একসময় ধ্রুব অনলাইনে আসলো।

সাধারন কুশল বিনিময়ের পর জানালো, অন্তুকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বললাম, "পাওয়া যাচ্ছে না মানে?" ও কি আর ছোট মানুষ? চলে আসবে। ওর ফ্রেন্ডদের কাছে খবর নিয়েছ? ধ্রুব জানালো, অন্তু আগের দিন (আগের দিনটি ২৪ শে নভেম্বর, শনিবার, কয়েকটি মিডিয়া এই বিষয়ে ভুল খবর দিয়েছে) সে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। এরপর ও আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। এখন ওর ফোন বন্ধ।

তখনই মনে খটকা লাগলো, অন্তুর মত ব্যক্তিত্ববান ছেলে দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে থাকলে অবশ্যই বাসায় কাউকে জানাতো। জিজ্ঞাসা করলাম ওর কোন প্রেম ঘটিত ঘটনা আছে কিনা। ধ্রুব জানালো যে তাও নেই বলেই ও জানে। তাহলে কি অন্তুর খারাপ কিছু ঘটেছে? না হলে ওর ফোন কেনো বন্ধ? সারাদিন আর টিভির সামনে বসা হয়নি। ঘুরতে বেরিয়েছিলাম, বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গিয়েছিলো।

ব্লগে ঢুকেই দেখলাম জাবির ছাত্রের অপমৃত্যুর খবর। ছোটবেলা থেকে ওকে অন্তু বলেই জানি, ভালো নাম জানার প্রয়োজন হয়নি কখনো। তাই প্রথমে বুঝতে পারিনি যে সকলের পছন্দের অন্তু আর নেই। যখন জানলাম অন্তুরই লাশ পাওয়া গেছে, প্রথমে ধ্রুবকে ফোন দিয়েছিলাম। ধ্রুব তখন কথা বলার মত অবস্থায় নেই, তাই বেশি কথা আমি জিজ্ঞাসা করিনি।

সব থেকে কষ্ট লাগলো যখন দেখলাম প্রমান এবং কোনরকম আলামত ছাড়াই অনেকে এটাকে আত্মহত্যা বলতে চাইছে এবং সেই দলে অন্তুর ক্লাসমেটদের সংখ্যাই বেশি। আমি বিশ্বাস করি না যে অন্তু আত্মহত্যা করেছে। প্রথম কারনঃ এখনো কোন কিছু পাওয়া যায়নি যেখানে অন্তু তার আত্মহত্যার ইঙ্গিত রেখে গেছে। দ্বিতীয় কারনঃ প্রথম দিন সময় টিভির খবরে জানা গেলো তার শরীরে অস্বাভাবিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেগুলোর উৎস সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি তখনো।

তৃতীয় কারনঃ আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অন্তুর মত প্রাকটিকাল ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। চতুর্থ কারনঃ তার আত্মহত্যার পিছনে কারন হিসাবে তার একাডেমিক ব্যার্থতাকে হাইলাইট করা হচ্ছে। পাবলিক ভার্সিটির কোন স্টুডেন্টের জন্যে ২ সাবজেক্টে ফেল করা আহামরি কোন বিষয় নয়। আমি জেনেছি অন্তু তার শিক্ষকদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছে, এবং পরবর্তিতে আস্বস্ত হয়েছে। এই ঘটনার সত্যতা টিভিতে দেখানো শিক্ষকের মন্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন।

আর একটি মিডিয়াতে বলা হয়েছে সে ২ টার্মে বহিস্কার হয়েছে, যা সত্য নয়। যেসব কারনে আমি মনে করি অন্তু খুন হয়েছেঃ প্রথম কারনঃ শনিবার সকালে সে বের হয়েছিলো, আর তার লাশ পাওয়া যায় রবিবার দুপুরে। তাহলে মাঝের সময়টা সে কোথায় ছিলো? অন্তুর ঘনিষ্ট বন্ধু এবং ক্লাসমেট সৌরভের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, সেদিন (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তু তার সাথেই ছিলো। এরপর সে বসুন্ধরা-পান্থপথ যাবে বলে বিদায় নেয়। বিদায় নেবার আগে সম্ভবত তারা একসাথে নাস্তা করে, তারপর যে যার গন্তব্যে রওনা হয়।

এটাই অন্তুর শেষ খবর। পান্থপথে তার অন্য এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। সেই বন্ধুর নাম আমার জানা নেই। এরপর অন্তু কোথায় ছিলো, কেউ বলতে পারছে না। দ্বিতীয় কারনঃ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অন্তুর লাশে অনবরত মাছি বসছে।

মারা যাবার সাথে সাথে লাশে মাছি বসে কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু যখন তার লাশ পাওয়া গেলো, তখনই যদি সে লাফ দিয়ে থাকে তাহলেও মাঝের হারানো সময়টার হিসাব মিলছে না। তৃতীয় কারনঃ কোথায় গেলো অন্তুর মোবাইল ফোন? লাশের পকেটে মানিব্যাগ ছিলো, যার মধ্যে টাকা এবং পরিচয়পত্র ঠিকঠাক আছে। সেটাতো এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্যেও হতে পারে? অন্তুর মা মারা যাবার পর খুলনার বাসা ছেড়ে ওর বাবা আর ভাইয়ের সাথে ঢাকাতে থাকতো। ওর যদি সত্যিই এই সমাজ বা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোন মেসেজ দেয়ার থাকত, তাহলে সেটা দেবার জন্যে তো সেল ফোনই যথেষ্ট হত।

অথচ শুধু সেল ফোনটাই পাওয়া গেলো না? যেটা কিনা মৃত্যুর আগ মুহুর্তে অন্তুর সাথে কার অথবা কাদের যোগাযোগ হয়েছে তার প্রমান বহন করে? কাছের মানুষদের কাছ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্যে ফোন সেরে রাখার প্রয়োজন হয় না, শুধু অফ করলেই চলে। যদি ধরে নিই যে সে লাফ দিয়েছিলো, তাহলে লাশের কাছাকাছিই ওর ফোনের ভগ্নাংশ পাওয়া যাওয়ার কথা। তা তো পাওয়া যায়নি। তাহলে কি প্লানার্স টাওয়ার থেকে অন্তুর ফোন ছুড়ে ফেলা হয়েছে কোথাও? চতুর্থ কারনঃ ধরে নিলাম, সে আত্মহত্যা করেছে, তাহলে ২৫ তারিখেই কেনো? কি ঘটেছিলো সেদিন যে হঠাৎ তার পুরানো ক্ষত জেগে উঠলো? নতুন কি ঘটেছিলো সেদিন? যদি একাডেমিক কারনেই সে আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে তার ব্যার্থতা যখন সে টের পেয়েছে, তার আশেপাশের কোন এক দিনে আত্মহত্যা করাটাই কি যুক্তিযুক্ত ছিলো না? তাহলে কি ২৫ নভেম্বর ওর ক্ষতস্থান কেউ খুঁচিয়ে দিয়েছিলো? কিন্তু ওর বন্ধুদের কারো কথাতেই সেরকম কোন ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। পঞ্চম কারনঃ প্লানার্স টাওয়ার কেনো? অন্য কোন সুউচ্চ ভবন কেনো নয়? বলা হচ্ছে, 'ইউ আর পি' এর সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় প্লানার্স টাওয়ার থেকে।

তাই ইউ আর পি'র প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করতেই সে প্লানার্স টাওয়ার বেছে নিয়েছে। তাহলে কি অন্তু সেদিনই প্রথম প্লানার্স টাওয়ার গিয়েছিলো? উত্তরঃ "না"। সে প্রায়ই প্লানার্স টাওয়ার এ যেতো। কেনো ? সেটাই পরের পয়েন্ট ষষ্ঠ কারনঃ আত্মহত্যা করার মত মানসিক দুর্বলতা কি অন্তুর ছিলো? অথবা কোন নির্দিষ্ট কারন? উত্তর হচ্ছে, না। আমি কিভাবে জানলাম? আমার সাথে যখন তার শেষ কথা হয়েছিলো, তাকে আমি একাডেমিক ব্যার্থতা নিয়ে চিন্তা করতে দেখিনি।

কারন, সে সুখি ছিলো তার অবস্থান নিয়ে। অন্তু নিয়মিত যাতায়াত করত প্লানার্স টাওয়ারে। সেখানে সিনিয়র প্লানারদেরকে হেল্প করে বিভিন্ন সময়ে সে বেশ কিছু টাকাও আয় করেছে। শেষবার ও বেশ বড় অঙ্কের টাকা পেয়েছিলো। গ্রাজুয়েশন শেষ হতে দেরী থাকলেও সে আয় করা শুরু করেছিলো, এবং সেটা ছিলো তার পছন্দের প্রফেশনের মাধ্যমেই।

তাই তাত্বিক শিক্ষাতে ফেল করা নিয়ে ওর কোন টেনশন ছিলো না বলেই শুনেছিলাম তখন। তাহলে কি ওর মৃত্যুর কারন এই আগাম আয় ? অন্তু কি সার্ভেয়িং করতে গিয়ে কারো ভাতে ছাই দিয়েছে, নাকি কারো গুমর ফাঁস হয়ে গিয়েছে ওর অজান্তেই? এমন সময়ে অন্তু চলে গেলো, যখন সারা দেশের মানুষ তাজরিন ফ্যাশন আর চট্টগ্রামের ফ্লাইওভার এর দূর্ঘটনা নিয়ে শোকগ্রস্থ। তাই অন্তুর মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামানোর বিলাসিতা কেউ দেখায়নি। যারা অন্তুর মৃত্যু কে আত্মহত্যা বলছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, প্রমান হবার আগে এধরনের কথা বলবেন না, তাতে সত্য বিপথে পরিচালিত হবার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্বাস করতে পারছি না এখনো, আর কখনো অন্তুর হাসি মাখা মুখটা দেখব না।

কখনো আর ভূবন ভোলানো হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করবে না, "কেমন আছেন ভাইয়া? অনেক দিন পর পর আপনার সাথে দেখা হয়। " আর কখনো দেখা হবে না তোমার সাথে এই নশ্বর পৃথিবীতে। ভালো থেকো, যেখানেই থাকো সেই না ফেরার দেশ এডিট ১ঃ খুলনা মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তার আমার বন্ধু সাইফুজ্জামান এর কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েছি, মৃত্যুর পর ৬ ঘন্টা পর্যন্ত টিস্যু ঠিক থাকে। তাই এই সময়ে মাছি বসবে না। এই সময়ের পর ব্যাক্টেরিয়া কর্তৃক পঁচন শুরু হলে লাশে মাছি বসতে পারে।

অর্থাৎ যখন অন্তুর লাশ পাওয়া গেছে, তার থেকে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা আগে সে মারা গেছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।