মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়| বেঁচে থাকলে বদলায়| কারণে অকারণে বদলায়........
"নাও নাও, চা নাও!"
আজাদ ভাই আমার দিকে একটা বড় সড় চায়ের কাপ
এগিয়ে দিলেন।
"এন্ড দিজ ওয়ান ফর দা লেইডি!" আরেককাপ
চা তিনি বাড়িয়ে দিলেন পিয়ার দিকে।
পিয়া মিষ্টি হেসে বলল-
"ভাইয়া, আপনি মেক্সিকোর এই দূর্গম পাহাড়ে এত বড়
একটা বাংলোতে কি করে থাকেন একা একা?"
আজাদ ভাই আমাদের চা দিয়ে নিজে ধরালেন
সাগরকলা সাইজের একটা চুরুট।
সেটা কামড়ে ধরে পাপিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিলেন-
"ওয়েল মাই ডিয়ার লেডি। আমি একা একা থাকি না।
আমার সাথে থাকে আমার বুকভরা স্মৃতি আর একদল
বান্ধবী। "
আমি কিছুটা দুঃখী, কিছুটা অবাক হলাম শুনে।
বুকভরা স্মৃতির বিষয়টা পরিস্কার। সাত বছর
আগে আজাদ ভাইয়ের বউ এবং মেয়ে প্লেন
ক্র্যাশে মারা যায়, তাদের স্মৃতির কথা বলছেন তিনি।
কিন্তু বান্ধবীর ঘটনাটা কি বুঝলাম না।
আমার
আগে পিয়াই প্রশ্নটা করল।
"বান্ধবী? আপনার বান্ধবীরা আপনার
সাথে থাকে? কই ভাইয়া? দু'দিন ধরে আছি আপনার
বাড়িতে, কাউকে তো দেখলাম না। "
"দেখেছ। দোতলার কামরাগুলোতে ওরা থাকে। "
আমি হেসে উঠলাম হো হো করে।
"আজাদ ভাই, আপনার
বান্ধবীগুলো সবকটাই ভীষণ সুন্দরী, মানতেই হবে!"
আসলে আজাদ ভাই একজন জুওলজিস্ট
এবং প্রজাপতি-প্রেমী।
পুরো দোতলা জুড়ে প্রজাপ্রতির সংগ্রহ! নানা রংয়ের
নানা প্রজাতির অদ্ভূত সুন্দর সব
প্রজাপতি রয়েছে তার সংগ্রহশালায়। আমেরিকার
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি বিভাগের
ছাত্রছাত্রীরা প্রায়ই ওনার বাড়িতে আসে এই
সংগ্রহশালাটি দেখতে। এই প্রজাপতিগুলোকেই
উনি বান্ধবী বলছেন।
যাই হোক, আমার হাসিতে কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেলেন
তিনি।
পিয়ার দিকে ফিরে প্রশ্ন করলেন-
"তাহলে তোমরা বিয়ে করছ কখন পিয়া?"
পিয়া কেমন যেন লাজুক চোখে আমার দিকে তাকাল।
বলল-
"সামনের এপ্রিলে ভাইয়া। "
"গ্রেট! তাহলে চলো,তোমাদের একটা জিনিস দেখাই। "
আমাদের চা শেষ হয়ে গেছে। আজাদ ভাইয়ের
সাথে উঠলাম দু'জনে।
তার পিছু পিছু দোতলায় গেলাম।
দোতলায় কাঁচ দিয়ে ঘেরা বিশাল আকারের খাঁচায়
অসম্ভব রকমের সুন্দর সুন্দর বিরল প্রজাতির সব
প্রজাপতি। কোন কোনটা অনেক বড়, প্রায় বাজপাখির
সমান।
একটা কাঁচের বাক্সের সামনে দাড়িয়ে আজাদ ভাই
বললেন,
"তোমরা দু'জনেই বিজ্ঞানের ছাত্র।
তোমরা কি সিলডেস্টেরন হরমোনের নাম শুনেছ?"
আমি অবাক হলাম নামটা শুনে!
"না আজাদ ভাই, আমি শুনিনি।
"
"পিয়া, তুমি তো ডাক্তার, তুমি নিশ্চয়ই জানো?"
পিয়া মাথা চুলকে বলল, "ইয়ে...না ভাইয়া, আজকেই
প্রথম শুনলাম। "
উনি সমঝদারে ভঙ্গীতে মাথা নাড়লেন, "আই সি।
শোনার কথাও না। "
পিয়া অবাক হয়ে বলল, "ভাইয়া, এই নামের
কি আসলেই কোন হরমোন আছে?"
"হ্যা আছে। মাত্র দু'বছর আগে আবিস্কার হয়েছে।
এখনো খুব বেশি মানুষ জানে না এটার কথা। "
"এই হরমোনের কাজ কি?"
"এর কাজ সম্পর্কে এখনো পরিস্কার
ধারণা পাওয়া যায়নি। কিন্তু অদ্ভূত-রহস্যময়
একটা জিনিস আছে এই হরমোনে। "
"কি?"
"এই হরমোনে খুব রহস্যময় গঠনবিশিষ্ট একটি এমাইনো এসিড
পাওয়া যায়। রহস্যময়তার কারণ, একই গঠনের
এমাইনো এসিড সারা পৃথিবীতে পাওয়া যায় মাত্র
দু'জন মানুষের মধ্যে।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে,
পৃথিবীর সকল সুখী দম্পতির হরমোনে এই একই গঠনের
হরমোন রয়েছে। "
"তার মানে, একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যেই
কেবল একই গঠনের হরমোন পাওয়া যায় এবং যাদের
মধ্যে পাওয়া যায় সাধারণত তারাই দাম্পত্য
জীবনে অন্য যুগলদের চেয়ে অনেক বেশী সুখী হয়, এই
তো?"
"হ্যা, অনেকটা তাই। আসলে Soul-Mate
বলে একটা কথা আছে না? সেটা। "
"গ্রেট!" পিয়া আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু
হাসি হেসে আজাদ ভাইকে বলল- "ভাইয়া,
আমরা কি আমাদের সিলডোস্টেরন হরমোন একই গঠনের
কিনা পরীক্ষা করতে পারব?"
"আয়াম আফ্রেইড, নো!
আসলে এটা পরীক্ষা করতে গেলে অন্যান্য
হরমোনগ্রন্থির ক্ষতি হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে বলে এখন আর পরীক্ষা করা হয়
না কোথাও। "
পিয়া কেমন যেন চুপসে গেল।
সেটা দেখে রহস্যময়
হাসি দেখা গেল আজাদ ভাইয়ের মুখে।
"মাই ডিয়ার লেইডি, ডোওন্ট বি ডিসএপয়েন্টেড।
এটা পরীক্ষা করার একটা চমৎকার
ব্যবস্থা জানা আছে আমার। "
পিয়া খুশী হয়ে উঠল-
"সেটা কি ভাইযা?"
"একই গঠনবিশিষ্ট হরমোনের দু'জন মানুষ যখন
কাছাকাছি এসে দাড়ায় তখন এক ধরনের গন্ধ
ভেসে বেড়ায় বাতাসে। এই গন্ধে ইন্দোনেশিয়ার
একধরনের নীল
ফুঁটকিওয়ালা বাদামী প্রজাপতি ভীষণরকম আকৃষ্ট
হয়।
আকৃষ্ট হয়ে উড়ে গিয়ে বসে সেই যুগলের শরীরের উপর।
এন্ড গেস হোয়াট, এই সেই নীল-বাদামী প্রজাপতি। "
সত্যিই! কাঁচের বাক্সে একটা বড়সড়
বাদামী প্রজাপতি। ডানায় ছোট-বড় নীল ফুঁটকি।
"তোমরা কি চাও আমি প্রজাপতিটাকে ছেড়ে দিই?
তোমাদের দু'জনের মধ্যে সত্যিই যদি একই গঠনবিশিষ্ট
এমাইনো এসিডের সিলডোস্টেরন থাকে,
তাহলে প্রজাপতিটা ঠিক ঠিক তোমাদের দু'জনের কোন
একজনের শরীরে গিয়ে বসবে।
কি বলো?"
"না, চাই না আজাদ ভাই!"
আমি দ্রুত বললাম। যদিও পিওর সাইন্স, তারপরও
একটা প্রজাপতি দিয়ে জ্যোতিষীর মতো নিজেদের
ভালোবাসা পরিমাপ করার কোন মানে হয় না।
কিন্তু পিয়া আমাকে চোখ রাঙানী দেখাল, বলল-
"ভাইয়া, চাই চাই...!"
আজাদ ভাই হাসলেন। আমাকে বললেন-
"বি কনফিডেন্ট ব্রো! টক লাইক আ ট্রু লাভার!!"
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু পিয়া আমার
হাতটা ধরে ফেলল, যেন হাত চেপে চুপ করাতে চায়!
"ভাইয়া আপনি ছেড়ে দিন তো প্রজাপতিটা!"
আজাদ ভাইয়ের হাতে একটা লম্বা লাঠি দেখা গেল,
লাঠির মাথায় জালের ছাঁকনী। অভ্যস্ত
হাতে প্রজাপতিটা বের করে নিলেন তিনি।
ছেড়ে দিলেন
কাঁচের বাইরে।
প্রজাপতিটা এলোমেলো ভাবে উড়তে লাগল। কিছুক্ষণ
এলোমেলো উড়ে আসতে লাগল আমাদের দিকে...নাহ,
মাঝপথেই দিক পরিবর্তন....এই রে আবার
আসছে...বুঝতে পারছি না প্রজাপতির মতিগতি।
পিয়া আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। দু'জন
প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি প্রজাপতিটার দিকে।
গায়ে প্রজাপতি বসলে বিয়ে হয়- এমন প্রবাদের
পিছনে তাহলে সত্যিই কিছুটা বাস্তবতা আছে!
এই মূহুর্তে আমাদের স্থির দৃষ্টি চঞ্চল প্রজাপতিটার
উপরে নিবদ্ধ হয়ে আছে। আগ্রহ নিয়ে দেখছি ওটার মস্ত
পাখার ছোটাছুটি, নীল-বাদামী আল্পনা! পিয়ার
হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছে আমার হাত.....
প্রজাপতিটা কি আসবে? আমাদের ছুঁয়ে দেবে? আমাদের
দেবে কি সম্ভাব্য সুখী দম্পতির সনদপত্র? না উদাস
মনে আজাদ ভাইয়ের বান্ধবীদের কাছে চলে যাবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।