আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
ধোঁয়ার মত কুন্ডুলি পাকিয়ে থাকত শীতের কুয়াশা, ধানের শীষের ওপর মুক্তোর মত ঝলমল করতো শিশির, ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়া সকালে চাদরে কান ঢেকে বসে পড়তাম মায়ের পাশে, একটু আগে আনা খেজুরের রসটা জাল দেয়া হচ্ছে, শিরনি হবে, তার গন্ধে ম ম করছে পুরো চুলার পাড়।
মাটির দু চোখা চুলা ঘিরে বসে থাকতাম - ভাইবোন সবাই। কখন রান্না শেষ হবে, কখন খাবো।
কেউ নারকেল ভাঙছে, কেউ দুধ নিয়ে আসছে, কেউ সুগন্ধি চালটা ধুয়ে আনছে- ব্যাপারটা কিন্তু এ রকম না। মা সবই এক হাতে করছেন। আমরা কেবল দেখছি, সম্ভব হলে নিভে যেতে থাকা আগুনটা বাড়িয়ে দিচ্ছি। চুলার পাশে হাত রেখে ওম পাবার চেষ্টা করছি।
শীতের সকালের খেজুর রসে যে কেবল শিরনি হতো তা না, আরো কিছু আয়োজন হতো, এর মধ্যে নগন্য আয়োজন রসের ঝোলে চিতই পিঠা ভিজিয়ে রাখা হতো, যে যার ইচ্ছে মত খেতো।
থাকলে পরে মা।
অনেক দিন পর আজ এ্ই শীতের সকালে মনটা খুব খারাপ হচ্ছে। এ রকম একটা আনন্দময় সকাল এ নগর এবং জীবিকার তাড়া আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছ। অথবা আমি নিজে বিসর্জন দিয়েছি কেবল- বয়স, বিত্ত এবং সময়ের কারণে।
তবে মা কখনো ভোলেন না, একটা শীত জলে যাবে আর সন্তান রসের স্বাদ পাবে না, তা হতে পারে না।
তাই ফ্রিজে জমিয়ে রাখা রস নিয়ে মায়ের অপেক্ষা, কখন ঢাকামুখি হবে কেউ। তার হাতে তুরে দেবেন দু চার লিটার রস।
মায়ের জানা- সন্তান এ সব খেয়েই বড় হয়েছে। কিন্তু নগরে বধূদের কাছে এর কী ই বা গুরুত্ব। এখানে মায়ের আবেগটা গুরুত্বহীন।
টাকার মেশিন ঘুরছে, অতীত ধোঁয়াশা হয়ে আসছে, প্রতি মুহুর্তের ব্যস্ততা কেড়ে নিচ্ছে, গিলে ফেলছে পুরনো সময়। ঝাপসা হয়ে আসছে স্মৃতি- !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।