পরিচিত কারো খুব বড়ো ধরনের বিপদ হয়েছে, বাঙালির জন্য এর চেয়ে থুশির খবর আর কীই বা হতে পারে...সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের এই লাইন দুটো শুধু আমি পছন্দই করি না, বিশ্বাসও করি... লেখায় তীব্র রস রয়েছে এমন যে কজন লেখকের লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে তার মধ্যে ওপার বাংলার লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় অগ্রগন্য।
গতকাল রাতে চ্যানেল সার্ফিং খেলা প্রাকটিস করছিলুম হঠাৎ করেই গাজী টিভিতে দেখি সানগ্লাস চোখে ফিচেল চেহারার অসম্ভব বৃদ্ধ একজন মানুষ বেশ টসটস করে বলছেন ‘বাংলাদেশ থেকে একদিন সকালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ এলেন আমার কাছে, শুনলাম তারা লোটাকম্বল নিয়ে নাটক করতে চান। শুনে তো আমি অবাক, লোটা কম্বল কি করার জিনিস! ওতো পড়ার জিনিস...কিছুই নেই তাতে...’
লোটা কম্বল সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস...আর ওই ভীষন বুড়ো লোকটিই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়...নিজের লেখা নিয়ে এভাবে তাচ্ছিল্য ভরে মন্তব্য করতে এলেম লাগে...কাউকে ছোট করার জন্য বলছি না, নিজের লেখা নিয়ে এরকম মন্তব্য করার মতো কলিজা আমাদের এখানকার কোন লেখকের আছে কী না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে আমার...যদিও তারা তিনি ছাড়া অন্য স্বদেশী লেখকদের কারো লেখাই যে পাঠযোগ্য নয় এই জিনিসিটি সর্বদাই যথেষ্ট দায়িত্বের সঙ্গে প্রমানের চেষ্টায় থাকেন...দেশি লেখকদের মধ্যে এক্ষেত্রে তাদের এ ধরনের আক্রমনের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন জনপ্রিয়তম কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ...
হুমায়ূনের মৃত্যুতে তারা বেশ বড়ো ধরনের হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন...আগে যেমন বইমেলা এলেই শুকনো পাংশুটে মুখে তারা অন্যপ্রকাশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে চ্যালাদের নিয়ে হুমায়ূন বিষাদাগার করতেন তা কিছুটা হলেও কমেছে তার মৃত্যুর পর...তাদের সেই পাংশুটে মুখে দেঁতো হাসি লেগেছে...তবে আফসোস প্রতিদিন বিকেলে বেশ ঘন করে ক্রিম-স্নো লাগিয়ে বইমেলার মাঠে তারা দাঁড়িয়ে থাকলেও হুমায়ূনের মৃত্যুর পরও তাদের সামনে অটোগ্রাফ নেয়ার লাইনে এবারো জমেনি..
দীর্ঘতম লেখার শুরুটা করেছিলাম সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে শেষে চলে এলো হুমায়ূন...তার কারন অবশ্য স্ট্যাটাসের প্রথম লাইনেই লেখা আছে...পাঠক হিসেবে কষ্ট একটাই, আমাদের এখানকার সাহিত্য বোদ্ধাদের বিচারে যে লোকটি এক্কেবারে ট্রাশ লেখার পরও আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয় ছিলো, যার নতুন বইয়ের জন্য বসে থাকতাম সারা বছর ধরে বই মেলার আশায় সেই লোকটিই মরে গেলো আর বেকার কিছু সাহিত্য বোদ্ধারাই বেঁচে রইলো...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।