একবার এক খেঁকশেয়াল গেল পাউডারপিলের কাছে। “দেখুন দেখি, বোলতা কামড়ে দিয়েছে পাছায়। ” তারস্বরে চেঁচায় শেয়াল।
এল এক খিটখিটে কুকুরছানা। বলল, “মুরগিটা আমায় ঠুকরে দিয়েছে নাকে।
”
বাতাসে ঝাপটা তুলে দৌড়ে এল খরগোশ-মা, “হায় রে, কী দুঃখের কপাল আমার! ছেলে এবং স্বামী-- গেছে তারা ট্র্যামের তলায়। লাফাচ্ছিল তারা রাস্তায়-- খেলছিল দড়ি-লাফ। ট্র্যামের তলায় পড়ে তাদের পা পড়েছে কাটা। শুয়ে আছে বিছানায়। ”
ডক্টর বললেন, “ভয় নেই।
নিয়ে এস তাদের-- বানিয়ে দেব নতুন পা। আবার খেলবে দড়ি-লাফ। ”
খরগোশ-মা নিয়ে এল তাদের। ডক্টর সেলাই করে দিলেন একজোড়া নতুন পা। আর তক্ষুনি তারা লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল-- “শুরু করল দড়ি-লাফ খেলা।
”
ছেলেকে ঘিরে নাচলেন খরগোশ-মা। হাসলেন আর কাঁদলেন আনন্দে। বললেন, “ধন্যবাদ ডক্টর, বাঁচিয়ে দিলেন ওদের। ”
২
ঘোড়ায় চড়ে দুলকি চালে এল এক শেয়াল-- কোত্থেকে কে জানে! হাতের কাগজ দুলিয়ে বলল, “টেলিগ্রাম, টেলিগ্রাম। হিপো পাঠিয়েছে ডক্টরকে।
কী লিখেছে দেখো--
শিগগির আসুন আফ্রিকায়
বাঁচান আমাদের ছেলেমেয়ে
ভুগছে তারা রোগে। ”
ডক্টর বললেন, “সত্যি নাকি, সত্যি? কী হয়েছে তাদের? অনেক দিন কি আছে তারা শুয়ে?”
“সত্যি তারা ভুগছে অনেক রোগে। কী হয়নি তাদের? জলবসন্ত-হাম, গুটিবসন্ত, মামস, এ্যাপেনডিসাইটিস, ম্যালেরিযা, ব্রঙ্কাইটিস-- সব রোগে ভুগছে তারা। চলুন ডক্টর পাউডারপিল-- সোজা আফ্রিকায়। ”
“অবশ্যই যাব।
” বললেন ডক্টর, “অবশ্যই। বাঁচিয়ে দেব সবাইকে। শুধু বল, যেতে হবে কোথায়? পাহাড় নাকি জলায়?”
“বলছি শোন। আমরা থাকি সাহারায়-- তপ্ত গরম মরু কালাহারি। পাহাড়ের উপরে ফার্নান্ডো-পো।
সেখানে থাকে শক্তিশালী হিপো-- লিমপুপু। ”
৩
ডক্টর পাউডারপিল চললেন আফ্রিকায়। কখনও হেঁটে-- দৌড়ে কখনও। পেরিয়ে গেলেন ঝোপঝাড়, নালা-ডোবা, জলা-পাহাড়। মুখে তার একটিমাত্র শব্দ, “লিমপুপু, লিমপুপু লিমপুপু।
”
পথে নামল দারুণ শীত। পুরু হয়ে জমল তুষার। ঘন কালো হয়ে নামল রাত। চেঁচিয়ে উঠল তুষার-ধবল শীত, “ফিরে যাও, এবার ফের ডক্টর পাউডারপিল। ”
বরফে মুখ থুবড়ে পড়লেন ডক্টর।
চেঁচালেন চিঁ চিঁ করে, “আমি ক্লান্ত-- খুবই ক্লান্ত। কী যে এখন করি?”
তখন বন থেকে বেরিয়ে এল ধূসর নেকড়ে। গেল সে ক্লান্তপায়ে দাঁড়ানো ডক্টরের কাছে। বলল, “এস ডক্টর, চড় আমার পিঠে। ঝড়ের চেয়ে দ্রুত-- বিদ্যুৎবেগে তোমাকে নিয়ে যাব।
”
ডক্টর চড়ে বসলেন নেকড়ের পিঠে। নেকড়ে চলল দুলকি চালে। ডক্টর শুধু বললেন, “লিমপুপু, লিমপুপু, লিমপুপু। ”
৪
কিন্তু পথে পড়ল সমুদ্র। তখন গর্জাচ্ছে সাগর, ফুসছে ঝোড়ো বাতাস-- ঢেউ উঠছে আকাশ সমান উঁচু।
মনে হল সাগর ডুবিয়ে দেবে হ্যাটসুদ্ধ ডক্টরকে।
নেমে গেলেন ডক্টর সাগরে। যেন হেঁটেই পাড়ি দেবেন সাগর। কিন্তু ঢেউ আসছে উঁচু হয়ে। ডক্টর বললেন, “এখন যদি সাগরেই ডুবি-- কী হবে সেই বন্ধুদের? যারা ভুগছে রোগে।
কেউ তো নেই তাদের সেবার জন্য। হায় রে হায়। ”
তখন জল ফুঁড়ে ভেসে উঠল নীল তিমি। এগিয়ে এল তীরের দিকে। নাক দিয়ে জল ছুঁড়ল আকাশে।
বলল, “এস ডক্টর পাউডারপিল-- উঠে পড় আমার পিঠে। বিশাল জাহাজের মতো তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি সাগরের ওপারে। ”
উঠে বসলেন ডক্টর নীল তিমির পিঠে। মুখে তার একটিমাত্র শব্দ, “লিমপুপু , লিমপুপু, লিমপুপু। ”
৫
সাগর-শেষে পাহাড় এবার-- বিশাল উঁচু।
ডক্টর চললেন পাহাড় বেয়ে। সকাল থেকে দুপুর, বিকেল থেকে রাত। কিন্তু পাহাড় হয়ে উঠল আরও খাড়া-- আরও উঁচু আর শক্ত। পাথরে পিছলে গেল ডক্টরের পা। এদিকে ঘনিয়ে এল রাত।
আকাশ হয়ে উঠল কালো, আরও ঘন অন্ধকার।
“আহ! যদি না যেতে পারি পাহাড় পেরিয়ে? তাহলে কী হবে আমার বন্ধুদের? তাদের চিকিৎসা করবে কে? কে দেবে ওষুধ?” পাথরের উপর বসে বসে ভাবছেন ডক্টর পাউডারপিল।
তখন উঁচু পাহাড় থেকে পাখা মেলল বিশাল ঈগল। নেমে এল নিচে। বলল, “উঠে বস আমার পিঠে।
চোখের পলকে তোমাকে পেঁৗঁছে দেব, যেখানে যেতে চাও। ”
ডক্টর উঠে বসলেন ঈগলের পিঠে। মুখে তার একটিই শব্দ, “লিমপুপু, লিমপুপু, লিমপুপু। ”
এদিকে আফ্রিকার লিমপুপুতে রোগে কাতর হিপো। আর বেবি হিপোদের অবস্থা আরও খারাপ।
গাছের
তলায় বসে হিপো তাকিয়ে আছে আফ্রিকা থেকে। খুঁজছে সে আকাশে-- খুঁজছে সে নীল সাগরে। ডক্টরকে
নিয়ে কখন আসবে জাহাজ!
হাতি আর গ-ার যাচ্ছে ফোনের কাছে। তারা এখন রোগে ভারি কাতর। তারা খালি জানতে চায় কখন
আসবে ডক্টর-- দেবে তাদের ওষুধ।
তাদের পাশে বসে কাঁদছে বেবি হিপোরা। ভুগছে তারা পেটখারাপ রোগে। ব্যথায় ছিঁড়ে পড়ছে তাদের
পেট।
অস্ট্রিচের বাচ্চাদের কী দুরবস্থা! আহা! চেঁচিয়ে কাঁদছে তারা। বিলাপ করছে ছোটপাখিরা।
তাদের হয়েছে
মামস, কারও-বা এপেনডিসাইটিস আর ব্রঙ্কাইটিস। কারও হয়েছে টনসিল আর গলায় ঘাঁ। তাদের
কান্নায় কান পাতা দায়। তারা জ্বরে কাঁপছে আর বিলাপ করছে, “কখন আসবে ডক্টর পাউডারপিল? আর
কত দেরি?”
পাখনা আর লেজ মেলে দিয়ে পড়ে আছে বিশাল হাঙর। বিশাল তাদের হাঁ।
দাঁত তাদের এত ধারালো যে
ঝিলিক তুলছে রোদে। খুবই রোগা বাচ্চা হাঙর। পড়ে আছে তারা পাশেই।
ঘাসফড়িং! ওহ, কী যে কষ্ট তাদের! পা ভেঙেছে, পায়ে ব্যথা-- একেবারে লাফাতে পারে না। আর লাফাতে
না পারলে ঘাসফড়িং হয়ে কী লাভ? ব্যথায় কাঁদছে তারা।
চোখ থেকে গড়িয়ে নামছে জল। কোথায় ডক্টর?
কত দূরে আর?
৬
আরে! ওই তো নীল আকাশতলে উড়ে আসছে বিশাল ঈগল। তার পিঠের উপর বসে আছে কে? আরে ওই
তো আমাদের প্রিয় ডক্টর পাউডারপিল। এসে যাবেন এক মিনিটেই।
“হ্যালো আফ্রিকা।
” জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন ডক্টর।
“হু-র-রে। ” পশুপাখি সবাই চিৎকার করে স্বাগত জানাল ডক্টরকে। সবার চোখে আনন্দের অশ্রু।
গতি কমিয়ে আনল ঈগল।
নেমে আসছে আকাশ থেকে। ওই তো নেমে দাঁড়াল। ঈগলের পিঠ থেকে নেমে এলেন ডক্টব-- দৌড়ে গেলেন তার রোগীদের কাছে।
ডক্টর নিয়ে এসেছেন ওষুধ আর মিষ্টি গুড়, জেলি আর মধু। তিনি পরীক্ষা করলেন হিপোদের পেট-- আর ওষুধের সঙ্গে দিলেন মিষ্টি আর জেলি।
বাচ্চাদের গায়ের তাপ নিলেন। দৌড়ে গেলেন বাঘেদের কাছে। তারা এসেছে নাইজেরিয়া থেকে। গেলেন তিনি গরিলাদের কাছে-- তারা এসেছে আরও দূর থেকে। দিলেন তাদের গরম দুধ, ডিম আর মধু।
দশদিন আর দশরাত সেবা করলেন ডক্টর। ঘুমুলেন না মোটেও। সেবা করলেন শিশুদের-- ওষুধ দিলেন রোগীদের।
৭
বিশাল আর ধারালো দাঁতের হাঙর ওষুধ খেয়ে তাকাল চোখ পিটপিট করে। আঁধার জলের তলায় হেসে উঠল হো হো করে।
হাসল সে হাবার মতোই-- কখনও ধীরে-- কখনও জোরে।
“অবশেষে সবাই হল ভালো
লিমপুপু
ছোট্ট শিশুর চোখে জ্বলল আলো
লিমপুপু
সবাই তারা হাসল প্রাণটা খুলে
লিমপুপু
তিরিং বিরিং লাফাল আর নাচল দুলে দুলে;
লিমপুপু”
হিপো এবং তার ছোট্ট সোনামণিরা আনন্দে নেচে-কুদে শিস দিয়ে মাতিয়ে তুলল নদীতীর। গর্জন করল তারা ষাঁড়ের মতো। হিপোরা এল-- এল পুপুরাও। নাচল সব হিপোপটোমাস।
আমরা তাদের বলি জলহস্তী। তারা এসেছে সাহারা মরুর গরম বালির মধ্য দিয়ে কিলিমাঞ্জেরো থেকে। গাইছে তারা--
“বেঁচে থাক ডক্টর পাউডারপিল
সব্বাই ভালো থাক-- থাক মিলঝিল। ”
* বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।