আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্যাকা দেন দুবাই যামু!

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

ট্যাকা দেন দুবাই যামু!
১৯৭৫ সাল থেকে মোটামুটি সবই মনে পড়ে। সেই সময়কার বাংলাদেশের দৈন্য দশা আর মানুষের অসহনীয় দারিদ্র‌ বলে শেষ করা যাবে না। আমার এখনো মনে পড়ে, ভিক্ষুক এসে বলতো, "আপনারা ভাতের মার কি ফেলে দিয়েছেন, না ফেলে দিলে আমাকে দেন, একটু খাই। " সারা দেশই ক্ষুধায় কাতর ছিলো। তার কিছু সময় পরে জিয়াউর রহমান আশির্বাদ হয়ে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি হলেন।

দরিদ্র-ক্ষুধাক্লিষ্ট মানুষের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেয়ার জন্য তিনি প্রান্তরের পর প্রান্তর ছুটে বেড়ালেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বলা হয় সফর। আমরা জানি, তিনি বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন। তার অংশ হিসাবে, একের পর এক আরব রাষ্ট্রগুলো সফর করতে শুরু করেন জিয়াউর রহমান। আর দ্রুত সখ্যতা গড়ে তোলেন ঐ সব রাষ্ট্রগুলোর সাথে।

তিনি তাদের বোঝাতে সক্ষম হন যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নামক সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশ আছে, জনসংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। তাদের ঐ মুসলিম ভাইটি খুব দরিদ্র। তারা যেন ঐ দরিদ্র ভাইটির প্রতি সহানুভুতির হাত বাড়িয়ে দেয়। 'মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই' এই কনসেপ্ট মুসলিম জাহানে রয়েছে সেই শুরু থেকেই, এটি একটি ইসলামিক ডকট্রাইন। সেই আবেগে আরব রাষ্ট্রগুলো সহানুভুতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।

কোন স্বার্থ থেকে নয় কেবলমাত্র ভাই ভেবে। তারা আমাদের নানা ভাবে সাহায্য করতে শুরু করলো। তার মধ্যে সব চাইতে বড় সাহায্যটি হলো আমাদের দেশের মানুষের জন্য আরবে কর্মসংস্থান করে দেয়া। বলা বাহুল্য যে, এদের একটি বিরাট অংশ অদক্ষ শ্রমিক। এই আমাদের কপাল খুলতে শুরু করলো।

ক্ষুধামুক্ত হলো দেশ, লক্ষ লক্ষ মানুষ মুক্তি পেলো বেকারত্বের অভিশাপ থেকে। দলে দলে যেতে শুরু করলো সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, লিবিয়া, ইত্যাদি নানা দেশে। যে দেশের মানুষ বাড়িতে একটি টু-ইন-ওয়ান থাকলে জীবন ধন্য মনে করতো, তাদের ঘরে ঘরে শোভা পেতে শুরু করলো ফ্রীজ, টেলিভিশন থেকে শুরু করে নানা রকম বিলাস সামগ্রী। আর কিছুকাল পরে টিনের ঘরের জায়গায় উঠতে শুরু করলো সুদৃশ্য দালান।

মিডলইস্ট আর দুবাইওয়ালা নামে দুটি কথা ব্যপক প্রচলিত হয়ে গেলো বাংলাদেশে।

খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক ও জনপ্রিয় নাট্যকার আমজাদ হোসেন ঈদের নাটক লিখলেন, "এতিদিন কোথায় ছিলেন?" (নাটকের মূল চরিত্র জব্বর আলী অনেক দিন দেশে অনুপস্থিত ছিলেন। কোথায় ছিলেন তিনি? আসলে তিনি ছিলেন দুবাই। দুবাই থেকে সুটকেস ভর্তি টাকা উপার্জন করে তিনি ঘর ভরেছেন, ঝলমলে শাড়ী গয়নায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জবা-কুসুম-রোকন-দুলালের মা। এই ছিলো নাটকের থীম। ) তাই দেখে বাড়ীর কাজের ছেলে পাগোল হয়ে বলতে থাকে, "ট্যাকা দেন দুবাই যামু, ট্যাকা দেন দুবাই যামু।

অর্থাৎ মালিকের কাছ থেকে যাওয়ার টাকা জোগার করে দুবাই গিয়ে ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাড়ীর কাজের ছেলেও। তখন আমাদের মুখে মুখে ফিরতো এই কৌতুকপূর্ন ডায়লগ, "ট্যাকা দেন দুবাই যামু, ট্যাকা দেন দুবাই যামু।

আমাদের দেশের অনেকেই আরবদের নিয়ে হাস্যরস করে, বলে, আরবরা নাকি ভীষণ বোকা। হ্যাঁ তাই হবে হয়তো! বোকা বলেই হয়তো আমাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আর আমরা যেটা পারিনি তা হলো সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই চল্লিশ বছরে অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ করে তোলা।

চল্লিশ বছর আগেও লেবার পাঠাতাম, এখনো সেই লেবারই পাঠাই।

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, এই মিডলইস্ট এখনো আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটা বড় ক্ষেত্র। সেই মিডল ইস্ট যদি আমাদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে। আমাদের জন্য কর্মসংস্থান বন্ধ করে দেয় আমরা চলবো কি করে?



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.