আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেসিডেন্ট আইলেও ট্যাকা লাগবো!

'আপনে ক্যাডা? এইডা বিআরটিএ। এইখানে প্রেসিডেন্ট আইলেও ট্যাকা দিয়াই কাম করানো লাগবো।

চেষ্টা কইরা দেখবার পারেন। ফর্মই জমা দিবার পারবেন না। পারলে আর বিআরটিএ'র বারান্দায়ই আসুম না।

'- দম্ভোক্তিটি কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বিআরটিএ'র অর্ধশতাধিক দালালের একজনের। ছোট-খাটো ছিপছিপে গড়নের দালালটির বয়স ১৭ কি ১৮। গত ১৮ আগস্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার অৎুহাতে কেরানীগঞ্জ বিআরটিএ-তে গেলে ঘিরে ধরে অন্তত একডজন দালাল। একেকজন একেকভাবে ভয় দেখাতে থাকে। তরুণ থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ সব ধরনের দালালেরই দেখা মেলে সেখানে।

তাদের বক্তব্য, আমাদের কাছে দিয়ে দেন। কিছু খরচাপাতি দিয়ে দিলেই হবে। না হলে ফর্ম জমাই দিতে পারবেন না। যাচাইয়ের জন্য অপেক্ষারত অপরিচিত একজনের ফর্ম নিয়ে কাউন্টারে গেলেই দালালদের কথার সত্যতা মেলে। ১০টা পর্যন্ত ফর্ম জমা নেওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৯টায়ই জানিয়ে দেয়, সময় শেষ।

অবশেষে দালালের কথামতো পেছন দিক দিয়ে দুই রুম পরে গেলে প্রতি ফর্মের জন্য ২০০ টাকা দাবি করে ফারুক নামের কর্মচারীটি। এ ব্যাপারে সহকারী পরিচালক আ. সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বললে হাসতে হাসতে ফারুকের জবাব, 'আপনি থানায় গিয়ে আমার নামে মামলা করেন। '

সারাদিন বিআরটিএ ঘুরে দেখা যায়, পুরো প্রতিষ্ঠানটি দালাল আর একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে জিম্মি। এদের হাতে প্রতিদিন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে স্ব স্ব কাজের জন্য আসা সাধারণ মানুষ। ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুটপার্মিটসহ প্রতিটি কাজে সরকারি ফির বাইরে গুনতে হচ্ছে তিন-চারগুণ বেশি টাকা।

এই টাকার একটা নির্দিষ্ট অংশ যায় বিআরটিএ'র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে। বাকিটা দালালদের। দালাল না ধরলে কোনো কাজ করানো যায় না। সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিআরটিএ কার্যালয়ে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক মোটরযান পরিদর্শককে ক্লোজ ও শেখ মো. ইমরান নামে অপর এক মোটরযান পরিদর্শককে শোকজ করেন। এ ছাড়াও তিনি হাতে নাতে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক দালালকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, দালালদের দাপটে লাইসেন্স নিতে যাওয়া সাধারণ গ্রাহকরা অতিষ্ঠ। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের অধীনে ওঠাবসা করা এসব দালাল নিজেদের বিআরটিএ'র কর্মকর্তা পরিচয় দেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তি রয়েছে তাদের। ড্রাইভিং লাইসেন্সের সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে ওই কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ১৫০০ টাকা দিতে হয়। এর বেশি দালাল যা নিতে পারে।

লাইসেন্স শাখার পরিদর্শক কেশব কুমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই অফিসে দালাল থাকলেও আমার শাখায় কোনো অনিয়ম নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক লাইজুল ইসলাম, শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সেলিম, যুবলীগ নেতা পরিচয় দানকারী মজিবর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন দালালদের নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেরাও এই কাজে যুক্ত। তাদের ছত্রছায়ায় টিটো, লাহাব, শাকিল, মাসুম, বোবা সমির, সোহেল, সেলিম, ছাত্রলীগ নেতা (পরিচায় দানকারী) হারুন, ফেরদাউস, আল-আমিন, মামুন ও টুটুলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক দালাল বিআরটিএ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

ইকুরিয়া বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আ. সাত্তার বলেন, কিছুদিন আগে আমি এখানে জয়েন করেছি। বিস্তারিত তেমন কিছুই জানি না। তবে যারা ভুক্তভোগী তারা যদি কোনো অনিয়মের বা ঘুষের ব্যাপারে অভিযোগ দেয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.