তখন রোজার মাস চলছিলো। রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদি নানা কারনে প্রায় দুই মাস ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। তাই মাননীয় উপাচার্য সিদ্ধান্ত নিলেন বাইশ রোজা পর্যন্ত ক্লাস হবে নো হাংকি পাংকি, ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান এসেও বললেন নো হাংকি পাংকি। বাধ্য হয়েই সবাই মিলে ক্লাস শুরু করলাম। তখন আবার ছিল বর্ষাকাল।
ঈদের ছুটির দুদিন আগে সকাল থেকেই তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। কোন রকমে ছাতা মাথায় দিয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌছালাম। বাসে উঠেই মনটা ভালো হয়ে গেল, আমি সহ বাসে আর মাত্র দু’জন প্রচুর সিট ফাঁকা। পছন্দমত একটা সিটে বসেই টের পেলাম সিট ভেজা, ছাদ থেকে টুপ টুপ করে পানিও পরছে। আধ ঘন্টা পরে বাস ছাড়তেই পানি পরার মাত্রা আরও বেড়ে গেল।
হঠৎ একটা চিৎকার, পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার পেছনের সিটে বসা মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে, কারন জিজ্ঞেস করতে হল না দেখি তার সিটের উপর দরদর করে পানি পরছে। মাঝ বয়সী এক রসিক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “বাইরে বৃষ্টি পরতাছে বাসের ভেতরেও বৃষ্টি, ছাতি মেইল্ল্যা বইসা পরেন। ” আমি আমার ছাতাটা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ছাতা খুলে বসে পরুন। দেখতে দেখতে অনেকেই ছাতা খুলে বসে পরলো। কিছু উৎসাহী যাত্রী মোবাইল ফোনে ছবিও তুলে রাখলো।
পেছন থেকে একজন বলে উঠলো, “পানিতে আর কি সমস্যা? পানিই তো জীবন”। আমিও সাহস করে বলেই ফেললাম, তাহলে খেয়ে দেন না, নাকি রোজা রাখছেন? বাসের সবাই হেসে উঠলো, পেছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটাও ছাতা হাতে মুচকি মুচকি হাসছে।
ক্যাম্পাসে নেমে মেয়েটার সাথে কথা হলো, পরিচয় হলো। সেই থেকে প্রতি রোজার ঈদে মেয়েটাকে একটা করে ছাতা উপহার দিতে হয়। এখন আমার বাসায় অনেক ছাতা, কিন্তু ছাতা ধার টার দেয়ার মধ্যে আমি নাই।
অনেকে যেমন দিনে তিনবেলা জামা বদলায়। আমিও বর্ষাকালে তিনবেলা ছাতা বদলাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।