আমি একটি স্মার্টফোন কিনেছি। হাতে পেয়েছি সপ্তাহ তিনেক হল। গুগল নেক্সাস ৫, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসেছে গত বছরের নভেম্বর মাসে, মূল্য ১৬ জি বি, $ ৩৫০ ওবং ৩২ জি বি $ ৪০০, আমারটি ১৬ জিবি।
বাজারে এখন নানান ধরণের স্মার্টফোনের সমাহার দেখি। অ্যাপেলের আইফোন, স্যামসাং, সনি, এলজি, নোকিয়া, এইচটিসি ইত্যাদি।
এই সবগুলি কোম্পানির রয়েছে টপ এন্ড মডেল। মানে এমন মডেল যেগুলির স্পেসিফিকেশন সাধারণ মডেলের চাইতে অনেক উন্নত। গতি, স্পষ্টতা, মেমোরি-এগুলি সবকিছুই এই মডেলগুলিতে একটু বেশী বেশী। আর তাই দামও অনেক। কোনটির ৫০০ তো কোনটির ৬০০ ডলার।
আর ইউরোপ,অ্যামেরিকার মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে পরেছে এগুলি কেনার জন্য। ইটালিতেই দেখেছি আই ফোন ৫ বাজারে আসার পর অ্যাপেলের দোকানের সামনে দীর্ঘ কিউ। বিক্রিও হয় মুড়ি মুড়কির মতন।
কিন্তু আমি ছা-পোষা মানুষ। ভীষণ মূল্য স্পর্শকাতর।
আমার চাই ভাল ফোন, ভাল সাউন্ড রেকর্ডার, ভাল ভিডিও, ভাল ক্যামেরা আবার একইসাথে দাম হওয়া চাই সর্বনিম্ন। আমি অনেক নেট ঘেঁটে দেখলাম, গুগল এদের কোন অংশে কম নয়, ক্ষেত্র বিশেষে এদের চাইতেও এগিয়ে রয়েছে। আর এই স্মার্ট ফোন ৫ এর মূল্য অন্যান্য টপ এন্ড স্মার্ট ফোনগুলির অর্ধেক, ৩৫০ ডলার। আর যাই কোথায়! পড়িমরি করে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফোন করে এক অতিশয় ভদ্রজনকে অর্ডারের লিংক দিয়ে এই মাল হস্তগত করা সারা। তাই হাতে চটজলদি চলে এল গুগল নেক্সাস ৫ নামক গ্যাজেট কিংবা স্মার্ট ফোন এবং একটি আস্ত ক্যামেরা! তাছাড়া এর আগেও মাত্র ১০০ ইউরো দিয়ে গুগল এরই আরেক প্রোডাক্ট গুগল নেক্সাস ৭ ট্যাবলেট ব্যাবহার করে খুব সন্তুষ্টি পাচ্ছি।
তাই গুগলের প্রতি একটা আস্থার জায়গা তৈরি ছিল আগে থেকেই।
তবে এই স্মার্ট ফোনটি আমার কেনার একমাত্র উদ্দেশ্যই হল এই ফোনের ভেতর যুক্ত থাকা ক্যামেরার ব্যাবহার। এখন বেশী প্যাঁচাল না পেরে দেখে নেয়া যাক, এই ক্যামেরার মধ্যে কি কি আছে।
আমি এই বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়েছি কানেক্ট ডিপ্রিভিউ ডট কম নামক সাইটটি থেকে, এগুলি আমার ফোনের স্পেসিফিকেশনেও উল্লেখ ছিল। তবে তাঁর দিকে এখনও চোখ মেলে দেখা হয়নি।
আমি গত দুইদিন হল গুগল নেক্সাস ৫ ব্যাবহার করছি। এর আগে কখনও কোন স্মার্টফোন ব্যাবহার করিনি। আগেই বলেছি আমি গ্যাজেটটি কিনেছি মূলত এর ক্যামেরা ব্যাবহারের নিমিত্তে। তারপরেও আমি এর অন্যান্য অনুষঙ্গ বিশেষ করে ভয়েস রেকর্ড এবং ভিডিও ব্যাবহারেও আগ্রহী। গান শোনা, সিনেমা দেখা, ইউটিউবে খেলা কিংবা লেখালেখি করা- এগুলি এখন পর্যন্ত এটি দিয়ে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিনা।
সে যাই হোক, প্রথম প্রথম এই ফোন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে ভারী বিপত্তিতে পরেছিলাম। তাঁর একটি কারণ হচ্ছে এই ক্যামেরার লেন্স খানা বডির ঠিক ওপরের ডান পাশে যুক্ত। এতদিন যে ক্যামেরাগুলি ব্যাবহার করেছি তাঁর সবগুলির লেন্স ক্যামেরার মাঝখানে থেকেছে। এখন যখন সাবজেক্টের দিকে বডি তাক করছি তখন আমি সাবজেক্টের অবস্থানই ঠিকমতন ধরতে পারছিনা। প্রথম দিনে তো কি তুলেছি তাই জানিনা।
এখন কিছুটা আয়ত্বে এসেছে। দ্বিতীয় অসুবিধেটি হচ্ছে আমি মনিটরে যে সাবজেক্টের আকারকে কম্পোজ করতে চাইছি, ছবি তোলার পর দেখি তা অন্য আকার নিয়েছে। অন্য ক্যামেরাতেও এই সমস্যা রয়েছে, তবে এখানে আকারটা বেশ পরিবর্তিত মনে হল তুলনামুলকভাবে। এডিটে গিয়ে অবশ্য তা ঠিক করে নেয়া যায়, কিন্তু ছবি তোলার পর ছবি দেখার আনন্দ পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। আর একটা সমস্যা প্রায় সব স্মার্ট ফোনেরই রয়েছে, হয়ত আলাদা করে উল্লেখ করারও দরকার নেই।
তবু বলি। শুরুর দিকে এই ফোনের বডিটি ঠিকঠাক ধরতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। এখন যদিও সয়ে গেছে, তারপরেও বডিকে ধরে ছবি তোলার মধ্যে কোন শক্তপোক্ত অনুভূতি নেই। কেমন খেলনা খেলনা ভাব হচ্ছে। এইটা কি দীর্ঘদিন এসএলআর এবং ডিএসএলআর ব্যাবহার করার জন্য হচ্ছে কিনা জানা নেই।
ফোনটির বডি ডিসপ্লের স্পষ্টতা, রঙ, কনট্রাস্ট নিখুঁত হওয়াতে সাবজেক্ট দেখা যায় খুব সুন্দর। আর ক্যামেরাটি আমার বেশ গতিশীল মনে হল। ছবি তুলে বেশ আরাম আছে। বেশ কিছু মুভমেন্ট সহজেই ধরা গেছে দেখলাম। অবশ্য স্পোর্টস কত ভাল করে ধারণ করা যাবে, নিশ্চিত নই।
আমি এখনও প্রস্তুতি নিয়ে কোন মানুষের মুখ তুলিনি। তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে যা তুলেছি তাতে স্কিন টোন বেশ স্বাভাবিকই আসে বলে মনে হল। একইসাথে মনে হল স্টিল বস্তুর ছবি এবং প্রকৃতির ছবি ভালই উঠবে এই ক্যামেরায়। ম্যাক্রো এখনও চেষ্টা করিনি, বলতে পারছিনা।
এইসব স্মার্ট ফোনের কোন বডি কনট্রোল নেই, যা আছে সব মনিটরে।
ক্যামেরা মেকানিজম অসম্ভব দ্রুত হওয়ায় দেখছি মুহূর্তের মধ্যে ছবি তুলে তা দেখে নিয়ে প্রয়োজনে আবার তোলা যাচ্ছে। আবার এর অপশন নেহাত কম নেই। আমি এক্সপোজার কম বেশী করতে পারছি। হোয়াইট ব্যালান্সকে পরিবর্তন করতে পারছি। শুধু আইএসও-কে ম্যানুয়ালি পরিবর্তন করতে পারছিনা।
এটা সম্পূর্ণই অটো। এই বৈশিষ্টের অনুপস্থিতি আমাকে পরে ভোগাবে মনে হচ্ছে। এইচডিআর প্লাস নামে একটা বৈশিষ্ট্য দেখছি বেশ কাজের। প্রথমে ভেবেছিলাম এই মোডে ছবি তুললে মনে হয় পুরো ছবি তোলার প্রক্রিয়াটিই স্লো হয়ে যাবে। কিন্তু এটাও দেখছি তেমনই ফাস্ট।
আর ডায়নামিক রেঞ্জটাও তুলনামুলক ভালো আসছে। আকাশের রঙটা এই মোডে আরেকটু বেশী নীল পেলাম। তবে এই মোড অন রাখলে হোয়াইট ব্যালান্স আর এক্সপোজার মোড দেখছি চুপটি মেরে বসে আছে, কাজ করছেনা। প্যানোরামা মোডটি এখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। বেশ কয়েকটি সিন মোড আছে, সেগুলিতেও এখনও হাত পড়েনি।
এই ফোন ক্যামেরার এডিটিং অপশনগুলি আমার কাছে দুর্দান্ত মনে হল। ছবি তুলে একবারে মুহূর্তের মধ্যে ক্রপ করা যাচ্ছে, ছবি আঁকা-বাঁকা হলে তৎক্ষণাৎ সমান করা যাচ্ছে, ডিলিট করা, রোটেট করা, ছবিকে উজ্জ্বল করা, অন্ধকার করা, রঙ পরিবর্তন করা সবকিছুই করা যাচ্ছে সহজে, অনায়াসে। আর ছবি এডিটিং করে মুহূর্তের ভেতর ফেসবুক কিংবা ফ্লিকআরে দেয়া যাচ্ছে। আমি সত্যি এই এত দ্রুতগতি দেখে বিস্মিত হয়ে গেছি। অন্য ক্যামেরাগুলিতে মেমোরি কার্ড নিয়ে যে হ্যাপা হোয়, এখানে তার কবর রচনা করা গেছে।
কানেক্টিভিটি যে আসলে কতটা কি করতে পারে তা এই কদিন স্মার্ট ফোন ব্যাবহার করে টের পেলাম।
ইমেজ গুন আমার কাছে ভালই লেগেছে। লেন্স ৩০ মিমি এফ ২.৪ অল্প আলোয় একদম খারাপ নয়। দিনের আলোয় ঠিক আছে। এমনকি ইনডোর কিছু ছবি বেশ চমৎকার এসেছে।
রঙ, কনট্রাস্ট বেশ ভালরকম নিয়ন্ত্রিত বলেই মনে হল। আমি সন্ধ্যায় তোলা একটি ছবিতে আকাশটাতে বেশ গ্রেইন দেখলাম। আবার রাত্রে তোলা একটি ছবিতে দেয়ালে তেমনটা দেখলাম না। এই ক্যামেরার লেন্সকে ৪ গুন পর্যন্ত জুম করা যায়। তবে দেখলাম ৩ গুনের পরে অর্থাৎ ৯০ মিমির পরে ছবি খুব সফট।
এইজন্য আমি জুম টুম ছেড়ে ৩০ মিমিতেই ছবি তুলে যাচ্ছি, এখন পর্যন্ত!
এখন বেশ কিছু ছবি যুক্ত করার পালা। পাঠক দেখুন তো, ছবিগুলি কেমন, চলে কিনা? আমি কিন্তু গত দুই দিন হল বেশ বিক্ষিপ্ত ভাবে ছবি তুলেছি। দেখতে চেয়েছি মুলত ইমেজ গুনটিই। আপনারাও দেখুন আমার সাথে। আমি আপনাদের তুলনায় অতি সাধারণ মানের ফটোগফুর।
অন্য কারো পাল্লায় পরলে হয়ত গুগল নেক্সাস ৫ জাতে উঠত, আমার হাতে পরে যে এর কি অবস্থা, কে জানে! তাই ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। তবে আমি কিন্তু ছবিগুলিতে একমাত্র ক্রপ করা ছাড়া আর কোন পোস্ট এডিট করিনি। যদিও এডিটিং এই যন্ত্রে একেবারেই জলবৎ তরলং।
১)
২)
৩)
৪)
৫)
৬)
৭)
৮)
৯)
১০)
১১)
১২)
১৩)
১৪)
১৫)
১৬)
১৭)
১৮)
১৯)
২০)
২১)
২২)
২৩)
২৪)
২৫)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।