পৃথিবীতে ইসরাইল হল একমাত্র দেশ যার নাগরিকত্ব আপনি ইহুদি হলেই পাবেন। প্রাচীনকাল থেকেই ইহুদিদের জাত ব্যবসা ছিল ব্যাংকিং, সুদের কারবার, চিকিৎসা ইত্যাদি। ইহুদিদের জন্য মদ্যপান বৈধ, মুসলমানদের জন্য নয়। চিংড়িমাছ কাকড়া ইত্যাদি ইহুদিদের জন্য অবৈধ, মুসলমানদের জন্য বৈধ। উটের মাংস মুসলমানদের জন্য বৈধ, ইহুদিদের জন্য অবৈধ।
মধ্য ইসরাইলের ছোট একটা শহর হড হাশারন, যা' গ্রিন টাউন হিসাবে পরিচিত। মরুভুমিকে কিভাবে সবুজ শষ্যের মাঠে রূপান্তরিত করা যায় তা' এই শহরে গেলে দেখা যায়। পৃথিবীর যে কোন ইহুদিই ইসরাইলের নাগরিকত্ব পায় বলেই ইসরাইলকে বলা হয় প্রমিজ ল্যান্ড।
পৃথিবীর সবচেয়ে গোপনীয় ও সবচেয়ে অস্বচ্ছ পরমাণু কার্যক্রম চালাতে ইসরাইল কোথা থেকে এবং কীভাবে অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করতে সমর্থ হলো, তা নিয়ে সব সময়ই ছিল রহস্য। কারণ, নিজ দেশের পরমাণু অস্ত্রের উপস্থিতির বিষয়ে ইসরাইল 'হ্যাঁ' বা 'না' কোনোটাই স্বীকার করে না।
১৯৬১ সালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জন ডাইফেনবেকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৬৪ সালে কানাডার গোয়েন্দা বিশ্লেষক জ্যাকব কূপ মন্তব্য করেন, 'এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরির পূর্বাবস্থায় আছে ইসরাইল। ' এরপর ১৯৬৪ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানীদের ইসরাইলের পরমাণু কর্মসূচি পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু ইসরাইল কৌশলে তাদের প্রকল্পের আসল চিত্র এড়িয়ে যায়।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ইহুদিরা ছিল অত্যাচারের শিকার এবং সেই ইতিহাসই তাদের বর্তমানে হিংস্র বানিয়েছে।
ইসরাইলের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইহুদি। ইহুদিদের প্রধান নবী হলেন হজরত মূসা, যার কিতাব হলো তাওরাত। আমরা ঈসাকে একজন নবী বলে মানলেও ইহুদিরা মানে না। মুসলমানরা কখনো ইহুদিদের পুড়িয়ে মারার কথা চিন্তা করেনি। কিন্তু ইউরোপে খ্রিষ্টানদের হাতে পুড়ে মরতে হয়েছে ইহুদিদের।
চীনে কিছু ইহুদি আছে, যারা দেখতে অবিকল চীনাদেরই মতো। নানাভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ইহুদি ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল। এসব অঞ্চলে স্থানীয় লোকের সাথে ইহুদি ধর্ম বিশ্বাসীদের বিবাদ দেখা দেয়নি। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মাঝখানে ইসরাইল একটি জ্বলন্ত সমস্যার নাম।
ইসরাইলী প্রশাসন আইন, মানবাধিকার এসবে বিশ্বাস করেনা।
তারা টিকে থাকতে চায় শক্তি প্রয়োগ করেই। ষাটের দশকে দেশটি পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়। সে বছর মিসরসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধের শুরুতেই ইসরাইলের নেগেভ মরুভূমিতে পারমাণবিক প্রকল্প গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল মিসরীয় বাহিনীর। কিন্তু প্রেসিডেন্ট কর্নেল জামাল আবদুন নাসের পরিকল্পনাটি বাতিল করে দেন।
বিশ্বের অনেক দেশ তাদের উন্নয়ন ও আধুনিকতার কারণে সারা পৃথিবীতে পরিচিত তবে ইসরাইল এমন একটি দেশ যে দেশটি বিশ্বে হত্যাযজ্ঞের কারণে পরিচিত।
ইসরাইল ভূমধ্য সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই রাষ্ট্রের রাজধানী জেরুসালেম। ইসরায়েলের দক্ষিণে রয়েছে বিশাল নেগেভ মরুভূমি আর উত্তরে আছে বরফাবৃত পর্বতমালা। দক্ষিণে লোহিত সাগরে এক চিলতে প্রবেশপথ আছে। ইসারায়েলের নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ খুব কম।
দেশটি ১৯৭০-এর দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান পেয়ে আসছে, তবে ১৯৯৮-এর পর এই অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়। ভৌগোলিক দিক থেকেই ইসরাইল খুবই ছোট রাষ্ট্র। ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার (৮ হাজার বর্গমাইল) জায়গার মধ্যে আবার অর্ধেকটাই মরুময়। সমগ্র পৃথিবীর ইহুদি নিয়ে রাষ্ট্র গড়তে আরো জায়গার প্রয়োজন। ইহুদিরা তাই আরো জায়গা দখলের স্বপ্ন দেখছে।
চাচ্ছে আরবদের কাছ থেকে আগামীতে আরো জায়গা দখল করে নিতে।
প্রথম মহাযুদ্ধে তুর্কিরা হারার পর প্যালেস্টাইন আসে ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে। আর বহু ইহুদি ইউরোপ থেকে গিয়ে সেখানে আরম্ভ করে উপনিবেশিত হতে। তারা কিনতে শুরু করে প্যালেস্টাইনের জলাভূমি অঞ্চল অনেক মূল্যে। প্যালেস্টাইনের মুসলমান আরবরা ধনী হওয়ার লক্ষ্যে বিক্রি করতে শুরু করে এসব জলাভূমি।
ইহুদিরা এসব জলাভূমি সেচে বের করে আবাদি ভূমি। এ রকম একটি জলা জায়গা তারা সেচে গড়ে তেলআবিব শহর। তেলআবিবে তারা স্থাপন করে একটা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে পড়াশোনা শুরু হয় হিব্রু ভাষার মাধ্যমে। জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতা লাভের পর আরম্ভ করেন ইহুদি বিতাড়ন।
জার্মান ইহুদিরা ১৯৩৫ সাল থেকে দলে দলে এসে উপনিবেশিত হতে থাকে প্যালেস্টাইনে। আরবরা প্রতিবাদ তোলে। ব্রিটিশ প্রশাসন একপর্যায়ে বাধ্য হয় এভাবে ইহুদি উপনিবেশ গড়া বন্ধ করতে। কিন্তু যুদ্ধে জেতার জন্য ইংরেজদের নিতে হয় ইহুদিদের সাহায্য সহযোগিতা। ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে যুদ্ধে সহযোগিতার নামে গড়ে তুলতে থাকে নিজস্ব সেনাবাহিনী।
মুসলমানরা বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইসরাইল রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করে থাকে। এই ঘৃণার পিছনের কারণও অযথা নয়, কারণ এই ইসরাইলের হামলায় গত ৪০ বছরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনের রক্ত ধারা প্রবাহিত হয়েছে। বিনা দোষে কোনও প্রকার কারণ ছাড়াই ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যা করে এবং রক্তে রঞ্জিত করে মুসলিম এলাকা। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে ইসরাইল বাহিনী। ফলে ইসরাইল সকল মুসলিমদের চোখে প্রধান শত্রু।
ইসরায়েল এখন এমন এক যায়গায় পৌছেছে যে আরব দেশ গুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিলে এর কোন স্হায়ী সমাধান নেই।
ইসরায়েলের হীরা কাটার শিল্প, পর্যটন শিল্প ও সফটওয়্যার শিল্প বিখ্যাত। ইসরায়েলি নাগরিকেরা নিজেদের মধ্যে ভাব আদান প্রদানের জন্য মূলত আধুনিক হিব্রু ভাষা ব্যবহার করেন। ভূমধ্যসাগরের তীর জুড়ে রয়েছে অনেক অবকাশ যাপন কেন্দ্র। আরও আছে লবণাক্ত মৃত সাগর, যার পানিতে ভেসে থাকা যায়।
লোহিত সাগরের উপকূল এবং গ্যালিলির সাগরের উপকূলেও অনেক অবকাশ কেন্দ্র আছে। ইসরাইলের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বর্ডার পুলিশ সার্ভিসের। নিয়মিত সার্ভিস ছাড়াও ৪৩ থেকে ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের বার্ষিক অন্তত এক মাস আইডিএফ-এ কাজ করতে হয়। এটি রিজার্ভ সার্ভিস নামে বেশি পরিচিত। ইসরাইল বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র ও কম্পিউটার পদ্ধতি ব্যবহার করে।
১৯৬৭ই. সনে ইসরাইল মিসরে হামলা করে সিনা উপত্যকা দখল করে নেয়, ফলে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ আরম্ভ হয়, যা ছয়দিন ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল। ১৯১৮ সালে ব্রিটেনের সহযোগিতায় ইসরাইলের গুপ্ত ইহুদী বাহিনী "হাগানাহ" গঠিত হয়। এ বাহিনী ইহুদীবাদীদের অবৈধ রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। ইসরাইলের বর্তমান জনসংখ্যা ৭৪ লক্ষ ৬৫ হাজার। আমেরিকার মদদে ইসরাইল এখন এতটাই শক্তিশালী যে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য।
মুসলমানদের শক্তি হিসেবে বর্তমানে ইসরাইলকে চোখ রাঙ্গিয়ে আসছে ইরান। আর তাই ইরান-ইসরাইল এখন এক রণাঙ্গনের নাম।
ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্টের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তার বিরুদ্ধে বিচার চলছে। এ ছাড়া, ইসরাইলের সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী ইহুদ বারাক, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লিকুদ পার্টির সাবেক নেতা এরিয়্যেল শ্যারনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুশে কাতসাও কিছুদিন আগে যৌন কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং সাত বছরের জন্য তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ইসরাইলের প্রায় সব কর্মকর্তাই কোনো না কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ দায়ের করা থেকেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এ থেকে ইসরাইলি সমাজের দুরবস্থার চিত্রই ফুটে উঠেছে।
১৯৫০-১৯৬৬ সালে ইসরাইল দেশটির জিডিপির ৯% খরচ করেছে প্রতিরক্ষা খাতে। ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পর নাটকীয়ভাবে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
১৯৮০ সালে প্রতিরক্ষা খাতে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ শতাংশে। কিন্তু জর্দান ও মিশরের সাথে শান্তিচুক্তির পর এই ব্যয় আবার ৯ শতাংশে নেমে আসে এমন কথা বলা হয়ে থাকে। তবে আসল কথা হচ্ছে ইসরাইলের সামরিক ব্যয় বা এই সংস্থা সম্পর্কে নির্ভর করার মতো কোনো তথ্য কখনোই পাওয়া যায় না। যেটুকু জানা যায় তাতে ২০০৯ সালে ইসরাইল সশস্ত্র বাহিনীর বাজেট ১ হাজার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার।
ফিলিস্তিনের যে মানুষগুলোর বয়স এখন ৪২ তারা জন্মের পর থেকেই ইসরাইলের নির্যাতনকে মোকাবেলা করে আসছে।
সে নির্যাতনে নিহত হয়েছে হাজার ফিলিস্তিনী। কারাগারে বছরের পর বছর ধরে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনী আর বাকিরা চালিয়ে যাচ্ছে কঠিন ও অসম এক স্বাধীনতা সংগ্রাম। কয়েক লাখ ফিলিস্তিনী জন্ম থেকেই উদ্বাস্তু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।