দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ইংরেজি ডায়ালেকটিক্যাল মেটারিয়ালিজম। ডায়ালেকটিকস কথাটি এসেছে গ্রিক শব্দ ডায়ালেগো থেকে। ডায়ালেগোর অর্থ হচ্ছে আলোচনা করা, তর্ক করা অথবা চিন্তার স্ববিরোধসমূহ প্রকাশ করা। আসলে ডায়ালেকটিকস হলো পরস্পরবিরোধী মতের সংঘাতের মাধ্যমে সত্যে পৌঁছুনোর শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি।
জগতের সবকিছু গতিময় ও পরিবর্তণশীল।
এই গতি ও পরিবর্তনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পদ্ধতি হলো দ্বন্দ্বমূলক এবং বস্তুজগতের ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গি হলো বস্তুবাদী। মার্কসবাদের বিশ্বদর্শনকে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। আবার সমাজের পরিবর্তন ও বিকাশের ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্বমূলক বস্তবাদের মূলনীতির প্রয়োগকে বলা হয় ঐতিহাসিক বস্তুবাদ।
একটি বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতির মধ্যে এই দর্শন এসেছে শিল্পবিপ্লবের ফলে যখন মধ্যযুগে সমাজব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয় এবং তার ভিত্তির ওপর ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং সমাজ ধনিক ও শ্রমিক এই শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে তখনই মার্কসীয় দর্শন তথা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের উদ্ভব ঘটে।
মার্কস দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সূত্রটা নেন মূলত হেগেলের দ্বান্দ্বিকতাবাদের দর্শন থেকে।
হেগেলের মতে, সভ্যতার বিকাশ ঘটে দ্বান্দ্বক উপায়ে বা প্রক্রিয়ায়। হেগেলের দ্বান্দ্বিকতা হলো তিনটি বিষয়ের সমন্বয়। প্রস্তাব (Thesis), প্রতিপ্রস্তাব (Anti-thesis) ও সংশ্লেষণ (Synthesis)। থিসিস ও এন্টিথিসিসের সংশ্লেষণে নতুন থিসিস তৈরি হবে এবং এভাবে সভ্যতার বিকাশে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া চলতে থাকবে অনির্দিষ্ট কাল ধরে।
মার্কসীয় তথা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বস্তুজগত পরস্পর সংযুক্ত ও সুসংহত; বস্তুসমষ্টি ও ঘটনাপুঞ্জ পরস্পরের সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে শৃঙ্খলিত এবং তাদের রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও নিয়ন্ত্রন।
কাজেই কোনো ঘটনাকে পারস্পরিক ঘটনাপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে সেটিতে আর দ্বান্দ্বক পদ্ধতি থাকবে না। কীভাবে জগতের ঘটনাপ্রবাহ দেখতে হবে সে প্রসঙ্গে মার্কস-এঙ্গেলস বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেগুলোর আলোচনা স্বল্পপরিসরে সম্ভব নয়। মূলকথাগুলো জেনে নেওয়া যাক। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিমতে, নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরে বিকাশের প্রক্রিয়া ঘটনার সুসমঞ্জস প্রকাশ হিসেবে ঘটে না, তা ঘটে বস্তু ও ঘটনার অন্তর্নিহিত বিরোধের অভিপ্রকাশ হিসেবে, এসব বিরোধের ভিত্তিতে বিরুদ্ধ ধারাগুলোর একটি সংঘাত হিসেবে।
অন্যকথায় বলা যায়, দ্বন্দ্বতত্ত্ব হলো বস্তুর অন্তর্নিহিত বিরোধের অধ্যয়ন।
আসলে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ এমন একটি দর্শন যা দিয়ে দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়কে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। মার্কসের বস্তুবাদ পৃথিবীর ইতিহাসকে সজোরে আঘাত করেছে, পাল্টে দিয়েছে অথবা পৃথিবীর ইতিহাস পরিবর্তিত হচ্ছে বস্তুবাদের দ্বান্দ্বিক নিয়মে। আর একটি কথা, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নিছক একটি দর্শন নয়, বরং বিজ্ঞানের সমগোত্রীয়। যেহেতু দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বিজ্ঞান থেকে শক্তি আহরণ করে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জগত ও জীবনের সার্বিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রদান করে তাই একে বৈজ্ঞানিক বস্তবাদও বলা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।